জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়োগ

সরকারি চাকরিতে চট্টগ্রামসহ ৫ জেলা থেকে নিয়োগ বেশি

প্রকাশ: মার্চ ১৭, ২০২৪

শেখ তৌফিকুর রহমান

দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় গত পাঁচ বছরে তিন লাখের বেশি লোকবল নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়োগ হয়েছে ২০ হাজারের বেশি। এ ২০ হাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা থেকে। এর পরই আছে যথাক্রমে ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যেসব অঞ্চল বা এলাকায় শিক্ষার পরিবেশ ভালো, সেসব এলাকা থেকে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় সাধারণত বেশি শিক্ষার্থী আসেন। চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী থেকে এ কারণে বেশি প্রার্থী সরকারি চাকরিতে সুযোগ পেয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২৩ সাল মেয়াদে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ২৩৭ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়োগ পান ২০ হাজার ২৬৪ জন। চট্টগ্রাম জেলা থেকে নিয়োগ পান ১ হাজার ৩৪১ জন। ১ হাজার ২৩৫ জন নিয়োগ পান ঢাকা থেকে। ময়মনসিংহ জেলা থেকে পেয়েছেন ৭৪৯ জন। টাঙ্গাইল থেকে নিয়োগ পেয়েছেন ৬১৩ জন। ৫৯৯ জন নিয়োগ পেয়েছেন রাজশাহী থেকে। এ পাঁচ জেলা থেকে নিয়োগ পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৩৭ জন, যা মোট নিয়োগের ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। 

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও এর অধীন দপ্তর বা সংস্থাগুলোর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্ম-কমিশনের মাধ্যমে নবম (আগের প্রথম শ্রেণী) ও ১০-১২ গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণী) শূন্যপদে জনবল নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আর অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং এগুলোর অধীন দপ্তর বা সংস্থা নিজ শূন্যপদে জনবল নিয়োগ দেয় ১৩-২০ গ্রেড (আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী) পর্যন্ত। অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনেই সম্পন্ন হয়ে থাকে।

এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হলো অঞ্চলটি শিক্ষা-দীক্ষায় আগে থেকেই এগিয়ে।  এ ধারা এখনো বজায় রয়েছে। ফলে সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়ায়ও এখানকার বাসিন্দারাই ভালো করছেন সবচেয়ে বেশি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় শিক্ষিতের হার ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ। জেলায় তিনটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ছয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, দুটি মেডিকেল কলেজ, দুটি আইন কলেজ, চারটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, একটি মেরিন একাডেমি, একটি মিলিটারি একাডেমি ও একটি নেভাল একাডেমি রয়েছে। 

সাবেক জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যারা ভালো করবে তারাই এগিয়ে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। যেকোনো প্রতিযোগিতায় কোনো না কোনো অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকবেন। চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টিও তেমন। আমার মনে হয় যেসব অঞ্চলে শিক্ষার হার বেশি বা শিক্ষাসচেতন, সেসব এলাকা থেকে সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় বেশি শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন।’

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় শিক্ষার হার ৬৮ শতাংশ। এ এলাকায় দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও একটি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। এছাড়া চারুকলা ইনস্টিটিউট একটি, হোমিওপ্যাথিক কলেজ একটি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ একটি, কারিগরি শারীরিক মহাবিদ্যালয় একটি, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট দুটি ও একটি শিক্ষা মহাবিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১টি, ডিগ্রি কলেজ ২৭টি (সরকারি তিনটি, বেসরকারি ২৪টি), বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ দুটি (সরকারি), কামিল মাদ্রাসা চারটি, ফাজিল মাদ্রাসা ৪৭টি, আলিম মাদ্রাসা ৪২টি, দাখিল মাদ্রাসা ২৯৫টি ও আর্ট স্কুল রয়েছে একটি।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের ঢাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি, এখানে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বেশি। এসব কারণে সারা দেশ থেকেই মানুষ ঢাকামুখী হয়। চট্টগ্রামের অবস্থাও একই। এসব কারণেই নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে দুই জেলার প্রার্থী বেশি হতে পারে। এছাড়া আরেকটি বিষয় হলো কোটা ব্যবস্থা না থাকা। যেহেতু মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া, এ কারণে যারা শিক্ষায় এগিয়ে, তারাই নিয়োগ পাচ্ছেন।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সবচেয়ে কম নিয়োগ হয়েছে বান্দরবান জেলায়। এ জেলা থেকে গত পাঁচ বছরে নিয়োগ হয়েছে ৩৪ জনের। কম নিয়োগ পাওয়ার তালিকায় এর পরই রয়েছে মেহেরপুরে ৬৭ জন, রাঙ্গামাটিতে ৬৯, বরগুনায় ৯৮ ও ভোলায় ১০২ জন।

ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মনে করেন, ‘সরকারি চাকরিতে সব জেলার মানুষের নিয়োগ বাড়াতে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। খেয়াল রাখতে হবে সুযোগ-সুবিধার অভাবে কোনো অঞ্চল যেন পিছিয়ে না থাকে।’

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সাক্ষরতার হার ৬৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দুটি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এছাড়া ৭৩টি কলেজ, ২৩টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং একটি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় শিক্ষার হার ৪৭ দশকি ৪ শতাংশ। এ জেলায় একটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আধিপত্যের মূল কারণ—এ দুই জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা এবং শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা। ঢাকা রাজধানী শহর এবং চট্টগ্রামকে বলা হয় বাণিজ্যিক রাজধানী। জীবিকার তাগিদে এবং ভালো লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে অনেকেই এ দুই জেলায় আসেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫