পারকিনসনস

চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনাচারে পারকিনসনস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

প্রকাশ: মার্চ ১১, ২০২৪

ডা. মো. আতিকুর রহমান

পারকিনসনস হলো মস্তিষ্কের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়জনিত একটি রোগ। এ রোগে মস্তিষ্কের কোষগুলো দ্রুত ও অস্বাভাবিক হারে ক্ষয় হয়। ফলে শরীরের নড়াচড়ায় সমন্বয় ও ভারসাম্য ব্যাহত হয়, চলাচলের গতি কমে যায়, হাত-পায়ের অনিচ্ছাকৃত কম্পন দেখা দেয়। মানুষের মস্তিষ্কে বহু স্নায়ুকোষ আছে। মস্তিষ্কের সাবস্টেনশিয়া নায়াগ্রার কোষ থেকে ডোপামিন নামে গুরুত্বপূর্ণ এক রাসায়নিক উপাদান তৈরি হয় এবং এর মাধ্যমে আমাদের শরীরের  নড়াচড়ার সমন্বয় ও ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ হয়। পারকিনসনস রোগে এ কোষগুলোর অস্বাভাবিক ক্ষয় হয় বলে এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।

যদিও পারকিনসনসের সুস্পষ্ট কারণ অজানা। অন্যান্য অনেক কারণ এ রোগে ভূমিকা পালন করে বলে মনে হয়।

বয়স: রোগটি মূলত মধ্যবয়সে অথবা বার্ধক্যে হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পারকিনসনস রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

লিঙ্গ: নারীদের তুলনায় সাধারণত পুরুষদের পারকিনসনস বেশি হয়ে থাকে।

জেনেটিক কারণ: কিছু জেনেটিক পরিবর্তন পারকিনসনসের ক্ষেত্রে একটি কারণ হিসেবে দেখা গেছে। একই পরিবারের অনেক সদস্যের মধ্যে এ রোগ থাকলে পরিবারের অন্য সদস্যের মধ্যে বংশগতভাবে এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

পরিবেশগত বিষয়: কিছু ক্ষেত্রে আগাছা দমনের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক বা কীটনাশকের সংস্পর্শে দীর্ঘদিন এলে ঝুঁকি বাড়ে।

এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—

হাত বা হাতের আঙুল অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপতে থাকে।

ধীরে ধীরে নড়াচড়া করার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। হাঁটাচলার গতি কমে যায়। ফলে অনেক দৈনন্দিন সহজ কাজ করা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। 

চলাফেরা ও বসার অঙ্গভঙ্গি পরিবর্তিত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগী ভারসাম্যহীনতায় ভোগে। 

শরীরের বিভিন্ন স্থানে মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। ফলে ব্যথা অনুভূত হয় এবং হাঁটাচলায় সমস্যা দেখা দেয়। 

লেখালেখি করা কঠিন হয়ে পড়ে ও লেখা আগের তুলনায় ছোট হয়ে যায়।

স্বাভাবিক গতিবিধি যেমন হাঁটার সময় দুই হাত নাড়ানোর ক্ষমতা হ্রাস পায়, চোখের পাতা ফেলা, হাসা ইত্যাদি হ্রাস পায়।

কথা বলার আগে দ্বিধা, কথা জড়িয়ে আসা, অনিয়ন্ত্রিতভাবে দ্রুত কথা বলা ইত্যাদি।

চিকিৎসায় পারকিনসনস সম্পূর্ণ নির্মূল হয় না। তবে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, পুনর্বাসনের মাধ্যমে এ রোগের কিছু লক্ষণ উপশম করা সম্ভব।

কিছু ওষুধ যেমন লিভোডোপা-কার্বিডোপার মাধ্যমে মস্তিষ্কে ডোপামিনের পরিমাণ বাড়িয়ে হাঁটার সমস্যা, হাত-পা কাঁপা ইত্যাদি উপশম করা যায়।

যারা দীর্ঘদিন ধরে এ রোগে ভুগছেন বা যাদের রোগের তীব্রতা গুরুতর, যারা কার্বিডোপা-লিভোডোপা ওষুধে খুব ভালো ফল পাচ্ছেন না, তাদের ক্ষেত্রে ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন (ডিবিএস) সার্জারি করা যেতে পারে। এ সার্জারির মাধ্যমে ব্রেইনের নির্দিষ্ট অংশে ইলেকট্রোড স্থাপন করা হয়। এটি মস্তিষ্কে ইলেকট্রিক সিগন্যাল পাঠানোর মাধ্যমে পারকিনসনস রোগের উপসর্গ কমায়।

জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে পারকিনসনস রোগী অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে পারে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: আঁশযুক্ত খাবার ও পর্যাপ্ত পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে, যা পারকিনসনস রোগের একটি নিয়মিত সমস্যা। 

 ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার খেলে উপকার পাওয়া যায়।

শরীরচর্চা মাংসপেশির শক্তি, নমনীয়তা ও ভারসাম্য বৃদ্ধি করে। এর মাধ্যমে অবসন্নতা ও উদ্বেগ থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

হাঁটাচলা, সাঁতার, বাগানচর্চা, হালকা ব্যায়াম পারকিনসনস রোগীর জন্য ভালো শরীরচর্চা। তবে পারকিনসনস রোগীর ভারসাম্য ও হাত-পা কাঁপার কারণে ব্যায়াম করা কঠিন হতে পারে।


লেখক: রেসিডেন্ট-এমডি (নিউরোলজি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল (এনআইএনএস)


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫