মুন্সিগঞ্জে আলু গাছে পচন ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪

শুভ ঘোষ, মুন্সিগঞ্জ

চলতি মৌসুমে মুন্সিগঞ্জে ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ টন। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক। মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টির কারণে ১২ হাজার হেক্টর জমির আলুবীজ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে আলু চাষ এক মাসের অধিক সময় বিলম্ব হয়েছে। এর মধ্যেই এক সপ্তাহ ধরে আলুখেতে দেখা দিয়েছে পচন। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। রোগটি প্রতিরোধ করা না গেলে চলতি মৌসুমে আলুর ফলন বিপর্যয় হতে পারে বলে দাবি কৃষকের।

আক্রান্ত খেতে একরোভেড এমজেড অথবা সিকিউরজাতীয় কীটনাশক সপ্তাহে একবার প্রয়োগ করতে হবে। তবে আলু গাছ যদি পচন রোগে আক্রান্ত না হয় ডায়থেনএম-৪৫, একরোভেট এম-৪৫ জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সরজমিন মুন্সিগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আলু গাছের সবুজ পাতা হলুদ ও কালচে হয়ে গেছে। অনেক জমিতে গাছের কাণ্ড পচে গেছে। আলুর চারা গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ জমিতে আলুর চারা পচে মিশে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জানান, হঠাৎ করেই এক সপ্তাহ ধরে আলু গাছে পচন ধরতে শুরু করেছে। তবে এ বিষয়ে কৃষককে কোনো ধরনের পরামর্শ দেয়নি কৃষি বিভাগ। অনলাইন থেকে পাওয়া বিভিন্ন পরামর্শ অনুযায়ী একাধিক ব্র্যান্ডের কীটনাশক ব্যবহার করেও মিলছে না প্রতিকার। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত খেতের পরিমাণ।

আটপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহেই কীটনাশক স্প্রে করছি, তার পরও পচন বেড়েই চলছে। ওষুধ কোম্পানির লোকজন জমিতে এসে বিভিন পদ্ধতিতে স্প্রে করতে পরামর্শ দিচ্ছে। তাদের শেখানো পদ্ধতিতেও স্প্রে করছি, তাতেও কাজ হচ্ছে না। কৃষি বিভাগও সহযোগিতা করছে না।’

বজ্রযোগিনী গ্রামের কৃষক শামসুদ্দিন ব্যাপারী বলেন, ‘জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছি। কিন্তু রোগবালাই তো থামছে না। বাজারের সবচেয়ে দামি কীটনাশক দিলাম তার পরও কাজ হয়নি। এর আগে দুই দফা বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। একদিকে আলুবীজ নষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে আলু চাষ এক মাসের অধিক সময় বিলম্ব হয়েছে। আলু চাষের জন্য নভেম্বর উত্তম সময় হলেও এ বছর জানুয়ারির অর্ধেক সময় পর্যন্ত জমিতে আলু চাষ করতে হয়েছে চাষীকে।’

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহী, বলই, বালিগাঁও, পাঁচগাঁও, মান্দ্রা, মুটুকপুর, ধীপুরে দেখা দেখা গেছে একই চিত্র। এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জানান, সাধারণত নামিদামি কীটনাশক ১২-১৫ দিন পরপর স্প্রে করার কথা বলা হলেও তারা প্রতি সপ্তাহে স্প্রে করছেন। স্প্রে ছাড়াও নিয়মিত জমি পরিষ্কার এবং সেচ দেয়া হচ্ছে।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহী গ্রামের আলুচাষীরা বলেন, ‘বাড়ির জায়গা জমি বন্ধক রেখে এ বছর ২৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করেছি। এতে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। অসময়ের বৃষ্টিতে দু দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আবার দেখা দিয়েছে পচন রোগ। কীটনাশক কিনতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এতে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পরও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় তাহলে পথে বসে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

সদর উপজেলার মহাকালী ইউনিয়নের লোকমান হায়দার ব্যাপারী বলেন, ‘গেল বছর শেষ সময়ে আলু বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর সুফল পাননি কৃষক। তবু ভালো দাম পাওয়ার আশায় চলতি মৌসুমে ১৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করেছি। এ বছর সবকিছুর খরচ ছিল বেশি। গত কয়েক বছরের তুলনায় আলু আবাদে এবার ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ।’

এদিকে আলু গাছে এমন পচন ধরার কারণে উদ্বিগ্ন জেলা কৃষি বিভাগও। কারণ আলু মুন্সিগঞ্জ জেলার প্রধান অর্থকরি ফসল। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর বেশি জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। যখন মুন্সিগঞ্জে আবহাওয়া খারাপ ছিল, ঘন কুয়াশা ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ছিল তখন আলু গাছের বৃদ্ধি তেমন না থাকায় রোগবালাই আক্রমণ করতে পারেনি। এখন আবহাওয়া ভালো হলেও পচন রোগে আলু গাছ আক্রান্ত হচ্ছে। যেহেতু এখনো ফসল উত্তোলন শুরু হয়নি তাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে সরকারিভাবে আর্থিক প্রণোদনা বা সহযোগিতা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫