উচ্চ শিক্ষায় ফাইন আর্টস ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে গড়ে তুলি শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪

অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক

শিশু শিক্ষার মজবুত ভিত তথা পিলারের ওপরই গড়ে উঠতে পারে একটি স্বাবলম্বী জাতি ও দেশ। আর এ বিশ্বাস থেকেই আমি একজন শিল্পী হিসেবে শিশুদের আর্ট শিক্ষার মাধ্যমে প্রথমে তাদের সৃজনী শক্তি জাগ্রত করার কাজে নিয়োজিত হই আজিমপুরে মোস্তাফিজ আর্ট একাডেমি অব ফাইন আর্টস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এরপর প্রতিষ্ঠা করি শান্ত-মারিয়াম একাডেমি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিসহ আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালে ইমামুল কবীর শান্ত ভাইসহ আমরা প্রতিষ্ঠা করি দেশের প্রথম ক্রিয়েটিভ বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি।

চিত্রকলা শিশুদের প্রতিনিয়তই আত্মবিশ্বাসী হতে ব্যাপক সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এক একটি চিত্র আঁকার আয়োজনেই শিশুরা মনের গহিনে ব্যাপক চিন্তায় নিমগ্ন হয়—ভাবে আমি এটা এভাবে আঁকব, ওটা বানাব-এটা বানাব। আর এভাবেই তারা মনজুড়ে ভাবনার ও চিন্তা করার অবারিত সুযোগ  পায়—নিমগ্ন হয় ভাবনার জগতে। সৃজনশীলতার বিকাশ তথা সৃজনশীল শিক্ষা মানুষ এভাবেই গ্রহণ করে। একটা সুন্দর চিত্র আঁকা তথা নির্মাণের মধ্য দিয়ে ওরা আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়। আর ঠিক ওই মুহূর্তেই একজন প্রকৃত শিক্ষক ওকে প্রশংসা তথা পুরস্কারের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির নেশায় উদ্বেল করে তুলবেন। হাজারো কাজের ভিড়ে এ কাজই প্রতিনিয়ত আমি করি শিশুদের আর্ট শেখানোর মধ্য দিয়ে। আমি জাপানে পড়াশোনাসহ দেশেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাসহ বিভিন্ন গুরুদায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও দিনশেষে রং পেনসিল হাতে শিশুদের আর্ট শেখানোর মাধ্যমেই প্রকৃত সৃষ্টির আনন্দ খুঁজে পাই। 

শিশু-কিশোরদের চিত্রকলা শিক্ষার পথ ধরেই আমরা উচ্চ শিক্ষায় ফাইন আর্টস ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার মাধ্যমে একটি পরিবর্তন আনার প্রত্যাশায় গড়ে তুলি শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথাগত ডিগ্রি কালচার তথা সনদসর্বস্ব শিক্ষা ও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মো. ইমামুল কবীর শান্তসহ আমরা ২০০৩ সালে রাজধানীর উত্তরায় দেশের প্রথম ডিজাইন বিশেষায়িত সাংস্কৃতিক তথা সৃজনশীল এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। অপেক্ষাকৃত কর্মমুখী সৃজনশীল শিক্ষাদানের মাধ্যমে আলোকিত ক্যারিয়ার তথা প্রজন্ম তৈরি করাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। 

যে লক্ষ্য ও গন্তব্যের মাইলফলক স্পর্শ করি আমাদের গ্রাফিক ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়ার মতো কর্মমুখী বেশকিছু বিষয় ও বিভাগের ব্যাপক চাহিদা ও তুমুল জনপ্রিয়তার মধ্য দিয়ে। দেশে গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার বিভাগ দুটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র শান্ত-মারিয়ামেই রয়েছে। অন্যদিকে ফ্যাশন ডিজাইন, অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি ও নৃত্য বিভাগ প্রথম এ বিশ্ববিদ্যালয়ই শুরু করে। অনেক ভর্তুকি দিয়ে শুরু করা এসব বিষয়ে শান্ত-মারিয়ামের অবদান-সাফল্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমাদের সাফল্যের এ পথ ধরেই কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এখন এসব বিভাগ পরিচালনা করছে। এ ব্যাপারে শান্ত-মারিয়াম সব সময়ই সবাইকে উদার স্বাগত জানায়। কারণ আমাদের বিশ্বাস, সমন্বয় থাকলে সুন্দর পরিবেশে প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গঠনমূলক সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড় করাতে পারবে।

শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষাদানের লক্ষ্যে সৃজনশীল নকশা তৈরি, টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজনা কৌশল, কপিরাইটিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি, পোশাক শিল্প ও কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনসহ তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদানের মধ্য দিয়ে তৈরি করাসহ স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ তৈরি ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ফ্যাশন হাউজ, ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠান ও অ্যাডফার্ম তৈরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনা ও কর্মসংস্থান তৈরির বিরল সুযোগ তৈরিতে উৎসাহিত করা হয়। 

ফলে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা এ দেশের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত গার্মেন্টস শিল্পসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাত, আবাসন শিল্প, গণমাধ্যম, অ্যাডফার্ম ও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। অনুরূপ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সফল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে যাতে সাবলম্বী হতে পারে, সেভাবেই হাতে-কলমের শিক্ষায় তাদের প্রস্তুত করা হয়। 

শুধু সময়োপযোগী ভালো শিক্ষা বিষয়ই শেষ নয়, হাতে-কলমের গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়েও ফ্যাশন হাউজ, অ্যাড ফার্ম, ক্রিয়েটিভ দ্য আর্ট গ্যালারি ও দৈনিক পত্রিকা পরিচালনার মতো ব্যয়বহুল বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণসহ আমাদের রয়েছে স্ট্রং একাডেমিয়া-ইন্ডাস্ট্রি লিংকেজ। ফলে যুগোপযোগী বিষয়ে হাতে-কলমের গুণগত শিক্ষা গ্রহণ করে যথাসময়ে আলোকিত ক্যারিয়ার তথা সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী হয় এখানকার শিক্ষার্থীরা। এক কথায়, পাস করার পর আমাদের কোনো শিক্ষার্থীর বেকার থাকার সুযোগ নেই।   

‘‌স্বনির্ভর উদ্যোক্তা ও দক্ষ কর্মী তথা জনসম্পদ তৈরি হবে’—এমন বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শান্ত-মারিয়ামকে গড়ে তোলার কাজটিই মূলত আমরা করছি। ফলে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেরাই ব্যবসায় অংশগ্রহণ করে কর্মসংস্থান তৈরিসহ দেশের অর্থনীতিতে মূল্যবান অবদান রাখাসহ দক্ষ কর্মী হিসেবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারেও সুনাম অর্জন করছে।

আমরা মিলেনিয়াম যুগের শুরুতে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে চারুকলা, নৃত্য ও সংগীত তথা সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও গার্মেন্টস সেক্টরের দক্ষ কারিগর তৈরির শিক্ষাসহ ফ্যাশন ডিজাইন ও গ্রাফিক ডিজাইন, ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার ইত্যাদি ডিপার্টমেন্ট অলাভজনক জেনেও সংশ্লিষ্ট সেক্টরে দক্ষ কর্মী তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান তথা সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এসব পরিচালনা করছি। তৎকালীন সময়ে অনেকে যা চিন্তাও করতে পারেনি। বরং এসব শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য একশ্রেণীর ঘোর বিরোধিতাসহ বিভিন্ন বাধা তথা হামলারও শিকার হতে হয়েছে আমাদের। তার পরও পিছু হটিনি আমরা। 

অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক: শিল্পী। চেয়ারম্যান,

বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫