নতুন করে আলোচনায় এসেছে করোনাভাইরাস। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ ৪১টি দেশে এ ভাইরাসের নতুন একটি উপধরন জেএন.১ আঘাত হেনেছে। ভারত সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ায় বাংলাদেশে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। ফলে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিনে মাত্র পাঁচজনে নেমে এলেও ভয়টা বাড়িয়ে তুলেছে এটি। বিশেষত যারা করোনা থেকে সেরে উঠেছেন, তাদেরও নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠেছেন এ রকম ৫০-৭০ শতাংশ রোগীকে তিন-ছয় মাস পর্যন্ত ছোটখাটো বা বড় বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক জটিলতা, অর্থাৎ পোস্ট কভিড সিনড্রোমে ভুগতে হয়েছে। তবে এ জটিলতা অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও ফেলতে পারে। তাই করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পরও বাড়তি সতর্কতা এবং নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা আবশ্যক।
করোনা-পরবর্তী সম্ভাব্য জটিলতা
আক্রান্ত রোগীদের অনেকেরই নতুন নতুন জটিলতায় ভুগতে হচ্ছে। ভাইরাসটি ফুসফুসসহ রোগীর হার্ট, কিডনি, লিভার, রক্ত সংবহনতন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই সুস্থ হওয়া, করোনা নেগেটিভ হওয়া কিংবা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া মানেই সব ভোগান্তির অবসান নয়। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা।
স্বাদ ও ঘ্রাণে সমস্যা।
কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আগে থেকে হৃদযন্ত্রে সমস্যা না থাকলেও করোনা থেকে সেরে ওঠার পর হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
ত্বকে লাল দাগ বা র্যাশ উঠতে পারে।
হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস, ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা, স্পর্শ বা অনুভূতি লোপ পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তনালির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হজমশক্তি কমে যেতে পারে। ফলে ঘন ঘন ডায়রিয়া ও গ্যাস্ট্রিকজনিত পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘুমের সমস্যার পাশাপাশি মানসিক অবসাদ বেড়ে যেতে পারে।
হাইপারগ্লাইসেমিয়া তথা দেহে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
পোস্ট ভাইরাল ফ্যাটিগ সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। এ সময় প্রচণ্ড দুর্বল লাগা, ক্লান্তিবোধ হওয়া, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, হাত-পা অবশ ভাব, মাংসপেশি, হাড় বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, কোমরে ও মেরুদণ্ডে ব্যথা, অরুচি, অস্থিরতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
জটিলতা কমাতে করণীয়
করোনা থেকে সেরে উঠেই শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম বা হাঁটাচলা শুরু করবেন না। কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে তারপর ধীরে ধীরে অল্প পরিশ্রমের কাজ বা হাঁটাচলা দিয়ে আবার শারীরিক পরিশ্রম শুরু করা যেতে পারে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল-জাতীয় খাবার খেতে হবে। সেই সঙ্গে বেশি করে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। পোস্ট কভিড পিরিয়ডে অনেকেরই খাবার গিলতে অসুবিধা হয়। সেক্ষেত্রে প্রথমে নরম ভাত, নরম খাবার দিয়ে খাদ্যাভ্যাস শুরু করা যেতে পারে।
নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। সন্ধ্যার পর চা ও কফি পরিহার করুন। ঘুমের অসুবিধা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঘুমের ওষুধ সেবন করতে পারেন।
ধূমপান, মদ্যপান, তামাক বা তামাকজাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
করোনা সংক্রমণ-পরবর্তী সময়ে শ্বাসকষ্ট ও কাশি থাকতে পারে। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে পারেন। প্রয়োজনে ইনহেলারও ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি বাড়িতে পজিশনিং আর ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন।
মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন।
লেখক: অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল