সাক্ষাৎকার

অটোমেশন, মানসম্মত গবেষণা, মেডিকেল ফ্যাকাল্টি প্রতিষ্ঠা, পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে চাই

প্রকাশ: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩

অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য। এর আগে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও ডিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির চার মেয়াদে সভাপতি ও তিন মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভূমিকম্প ও সুনামি এবং নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শানজিদ অর্ণব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাষ্ট্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি নাম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এই গুরুদায়িত্ব নেয়ার পর আপনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে চান এমন কাজগুলো সম্পর্কে জানতে চাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট জড়িয়ে আছে। বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার পর এ অঞ্চলের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য এবং মানুষকে শিক্ষাদীক্ষায় আরো উন্নত করার জন্য বঙ্গভঙ্গের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি। পরবর্তী সময়ে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, সামগ্রিকভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ, সব ক্ষেত্রেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উর্বর জমিন। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় বললে যথেষ্ট নয়। এটি আমাদের জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয় ও পরবর্তী সময়ে জাতিরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্ধনের সঙ্গে পুরোপুরিভাবে জড়িত। আমি ২৯তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষদের চার মেয়াদে ডিনের দায়িত্ব পালন করেছি প্রায় আট বছর। পৃথিবীর যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিনদের একাডেমিক লিডার বলা হয়। ডিনদের নেতৃত্বে সব একাডেমিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। গবেষণা থেকে শুরু করে যতগুলো সৃজনশীল উদ্যোগ নেয়া হয় সেগুলো ডিনদের থেকেই আসে। এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি একাধিকবার। একটা বিভাগের ফাউন্ডিং চেয়ারম্যান ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য উন্নয়নমূলক ও নীতিনির্ধারণী কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথায় দুর্বলতা ও শূন্যতা আছে, সেটা আগে থেকেই আমার নজরে ছিল। সেজন্য আমার উপলব্ধি হলো জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করা দরকার। 

প্রথমত, সব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে অটোমেশনের মধ্যে নিয়ে আসা, যা এখন নেই। অটোমেশন নিশ্চিত করা গেলে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের শিক্ষাদান থেকে শুরু করে খাতা মূল্যায়ন ও দ্রুতগতিতে ফলাফল দেয়া, প্রশাসনিক ভবনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা অনেক সহজ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রশাসনিক কার্যক্রম মূলত লাইফলাইন। এক্ষেত্রে অটোমেশন নিশ্চিত করা গেলে স্বচ্ছতা, কোয়ালিটি ও স্বল্প সময়ে সেবাপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়ে অটোমেশনের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছি। অ্যাডহক বেসিস অ্যাক্টিভিটি ছিল, সেগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। 

দ্বিতীয়ত, জন্মলগ্ন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি ও মাস্টার ডিগ্রি দিয়ে আসছে। গবেষণায় প্রথম থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকে যে মিশন ও ভিশন ছিল, সেখানেও এর গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা উল্লেখ ছিল না। তার পরও আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি গবেষণার দিকে মনোযোগ অতীতে দিয়েছেন। কিন্তু গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় বলতে যা বোঝায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সেভাবে রূপ লাভ করেনি। আজকের বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের বিভিন্ন প্রয়োজনে অবদান রাখা দরকার, বিশেষ করে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় অবদান রাখবে, এটিই স্বাভাবিক। এটি আজকের দিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রশাসনিক অঙ্গের, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির সম্পর্ক খুবই দুর্বল। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটি সম্পর্ক, একাডেমিয়া-অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পর্ক বেশ শক্ত। একাডেমিয়ার বাইরেও যে ব্যবহারিক জ্ঞান আছে, সে নলেজ শেয়ারিংও আমাদের এখানে সেভাবে নেই। আন্তর্জাতিক কোলাবরেশনও খুবই স্বল্প। ব্যক্তিগতভাবে কোনো শিক্ষক ও কোনো বিভাগের সঙ্গে একাডেমিক কোলাবরেশন হয়ে থাকে। কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পৃথিবীর অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাডেমিক কোলাবরেশনের জন্য যে ধরনের অবকাঠামো ও এথিক্যাল গাইডলাইন প্রয়োজন, যার মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলব সে ধরনের পেপার ডকুমেন্টস আমাদের হাতে খুব বেশি ছিল না। সে বিষয়টিতে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। কোলাবরেশন অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন দ্য কান্ট্রি ও আউটসাইড দ্য কান্ট্রি। এভাবে কোলাবরেশন ও কো-অপারেশনের মাধ্যমে আমরা একটি গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ঘটাতে চাই। ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয় তার জন্মলগ্ন থেকে জাতির যা প্রয়োজন ছিল, সেটা পূরণ করেছে। এখন আমাদের প্রয়োজন হলো নলেজ প্রডাক্ট ডেভেলপ করে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখা। উন্নত বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয় কাজটি করে। এদিক থেকে আমরা দুর্বল ছিলাম। আমরা সেদিকে অগ্রসর হব। 

তৃতীয় যে দিকটাতে আমরা নজর দিতে চাচ্ছি, সেটি হলো, উন্নততর গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো যথেষ্ট নয়। যেটাকে আমরা গ্রাউন্ডব্রেকিং রিসার্চ বলব, সে রকম পরিবেশের অনুপস্থিতি এখানে রয়েছে। মানসম্মত গবেষণা হওয়ার পরই মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় সবার। সে মানসম্মত গবেষণাকে নিশ্চিত করা ও তার জন্য অবকাঠামো নিশ্চিত করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। একটা হলো গবেষণামনস্কতা, আরেকটা দরকারি অবকাঠামো। এ দুটোর সমন্বয় করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের জাতিরাষ্ট্রের যে প্রত্যাশা এখন সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করতে সক্ষম হব। 

পূর্বাচলে রাজউক থেকে ৫২ একর জমি আমরা পেয়েছি, কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজউকের প্রাপ্ত আর্থিক লেনদেন এখনো হয়ে ওঠেনি। পূর্বাচলের জমিটি যদি আমরা পাই, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার সহযোগিতায় দ্বিতীয় ক্যাম্পাস করে সেখানে মেডিকেল ফ্যাকাল্টি করার ইচ্ছা পোষণ করছি। কারণটি হলো পৃথিবীর সব বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য ফ্যাকাল্টির পাশাপাশি মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি থাকে। সব ফ্যাকাল্টি মিলেই একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। যেভাবে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও বেইজিং কিবাং টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল ফ্যাকাল্টি আছে। যদিও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজ। যদিও পাশেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু এগুলো কোনোটিই সেভাবে গবেষণাধর্মী নয়। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কথাই যদি বলি, মেডিকেল ফ্যাকাল্টি গবেষণার কাজ করে। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির হসপিটাল যে আছে, সেখানে গবেষণা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। আমাদের এখানে মেডিকেল সায়েন্সের গবেষণা তুলনামূলক হারে কম। এখানে যদি মেডিকেল ফ্যাকাল্টি হয়, তাহলে গবেষণার একটি ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। 

আরেকটি সুযোগ আমাদের আছে। মেডিকেল ফ্যাকাল্টির যে ডিপার্টমেন্টগুলো থাকে, তার মধ্যে বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মেসি, মাইক্রোবায়োলিজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এরই মধ্যে আমাদের রয়েছে। এখন শুধু মেডিকেল সায়েন্সের অন্যান্য বিভাগ যদি আমাদের হয়, তাহলে একটি ফ্যাকাল্টি দাঁড় করানো যায়। আমরা যদি শুরু করতে পারি, তাহলে একসময় এ দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করতে পারব। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি এবং প্রযুক্তিনির্ভর বিভাগগুলোর জন্য, তথা গবেষণার জন্য পূর্বাচলের জমিটি আমাদের প্রয়োজন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি এভাবে তৈরি করতে পারা যায়, তাহলে একে অনুসরণ করে দেশের অন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যেতে পারবে। সামগ্রিকভাবে তাতে উপকৃত হবে আমাদের এ জাতি। এ কাজগুলো আমরা করতে চাই। 

উপাচার্য হওয়ার আগে আপনি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনি একজন একাডেমিশিয়ান, গবেষক। উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করে আপনি বলেছেন, ‘‌আমি চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয় যেন বিশ্বের শিক্ষা-মানচিত্রে একটি অন্য উচ্চতায় যায়।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার বর্তমান মান নিয়ে আপনার মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে বলবেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যদি তুলনা করি, তাহলে পিছিয়ে রয়েছে। এর বড় কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিকল্পনা গ্রহণ না করা। মন্ত্রণালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কাছে সঠিক চাহিদা দিতে না পারা। দুটো ব্যর্থতাই আমাদের রয়েছে। আমাদের যে রিসোর্স আছে, সে সহজলভ্য রিসোর্সকে ব্যবহার করে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। যদি এ সহজলভ্য রিসোর্স ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারকে একটি নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এ কাজটি সহজ হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন হলো সরকারের কাছ থেকে বাজেট পাওয়া। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া। সেটা যদি আমরা পাই, তাহলে আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে সহজ হবে। 

প্রশাসন ও বিচারালয় থেকে শুরু করে এ দেশের ডিসিশন মেকিং বডিতে ৭৫-৮০ শতাংশ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা যদি পাশে থাকে তাহলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।  আমি যা করতে চাই, তা হলো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রতিষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াব। তাদের সহযোগিতা আমরা নেয়ার চেষ্টা করব। শুধু সরকারের বাজেটের ওপর নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় বেশিদূর আগাতে পারবে না। সরকারের মধ্যেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে বাজেট বিষয়ে। এমন বহু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা করতে চায়। আমরা সে সহযোগিতাটি নিয়মের মধ্য দিয়েই যেন পাই। বিভিন্ন ব্যবসায়িক, সরকারি, বেসরকারি ও  ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের সহযোগিতা পেলে আমরা ভিন্ন উচ্চতায় নিতে পারব বিশ্ববিদ্যালয়কে। সে কার্যক্রম শুরুও করেছি এখন। 

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশা আছে। এ রকম র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালো অবস্থানে তুলে আনতে আপনার কোনো ভাবনা আছে কি?

এরই মধ্যে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি ও কিছুদূর অগ্রসর হয়েছি। টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাংকিংয়ে এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল এক হাজারের পরে। এখন আমরা ৬০০-৮০০ ব্যান্ডের মধ্যে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত তথ্য আমরা তুলে ধরতে পারিনি। আমরা জাতি হিসেবে ডকুমেন্টেশনে খুবই দুর্বল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও ডকুমেন্টেশনে খুব দুর্বল। সে কাজটি যেন আমরা সঠিকভাবে করতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে শুরু করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আউটস্ট্যান্ডিং কার্যক্রম যা রয়েছে, তার প্রতিফলন ওয়েবসাইটে হয় না তেমন। এগুলোর প্রচারও হয় না। সেটা করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভাইব্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ৯৬টি এনটিটিজ আছে। ৮৪টি ডিপার্টমেন্ট ও বাকিগুলো ইনস্টিটিউট। প্রত্যেকটিতেই নানাবিধ একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ৫৬টি গবেষণা সেন্টার রয়েছে। রয়েছে রিসার্চ ব্যুরো। এই গবেষণা সেন্টার, রিসার্চ ব্যুরো ও ডিপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটের কাজগুলোর সামগ্রিক প্রতিফলন ওয়েবসাইটে নেই। এগুলো কিন্তু ডকুমেন্টেশন করে রাখা হচ্ছে না। এগুলো করতে পারলে আমরা এ অবস্থা থেকেই খুব সহজে ৪০০-৬০০ ব্যান্ডের মধ্যে চলে আসতে পারব। গবেষণা, অটোমেশন ও অন্যান্য যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি, সেগুলো করতে পারলে বহুদূর এগিয়ে যেতে পারব। 

যা হোক, র‌্যাংকিংয়ের ধারণাটি কিন্তু বাণিজ্যিক। এর জন্ম হয়েছে নর্থ আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো বিদেশ থেকে শিক্ষার্থী টানার চেষ্টা করবে বলে। এই যে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের ধারণা, সেখান থেকেই র‌্যাংকিংয়ের শুরু। কিন্তু র‌্যাংকিংকে বাদ দিয়েও শিক্ষা ব্যবস্থা হয়। দুটি দিকেই আমরা নজর রাখছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি মানবিক বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ হলো আমরা শিক্ষার্থীদের থেকে বেতন নিই না বললেই চলে। তাদের লেখাপড়া, হলে অবস্থান ও খাওয়া-দাওয়া সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রায় ওয়েলফেয়ার দেশগুলোর মতোই এখানে লেখাপড়া করে। বাণিজ্যিক ধারণা এখানে নিয়মিত ছাত্রদের জন্য নেই। র‌্যাংকিংয়ে পয়েন্ট পাওয়ার জন্য এটাও আছে, বিশ্ববিদ্যালয় কী পরিমাণ অর্থ নিজেরা উপার্জন করে। এক্ষেত্রে তো আমরা কোনো অর্থই উপার্জন করি না। আমরা চাইব র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি সাধন করতে। তবে র‌্যাংকিংয়ের চেয়ে বেশি ভালো হবে যদি আমরা যুবকদের রিসোর্সে পরিণত করে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগটি কাজে লাগাতে পারি। উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি মনোযোগ দেয়ার বিকল্প সরকারেরও নেই। শিক্ষক হিসেবে জাতি গঠনে আমাদেরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। র‌্যাংকিংয়ের চেয়ে বেশি নজর দিতে হবে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য। যাতে করে নিউ লিবারেল গ্লোবালাইজেশনের এ যুগে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আমাদের শিক্ষার্থীরা চাকরি পায়। 

ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার চেয়ে চাকরির গাইড পড়া নিয়ে বেশি আগ্রহী বলে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

উচ্চশিক্ষা, আন্ডারগ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স শেষে শিক্ষার্থীরা যেকোনো ধরনের প্রফেশনে যাবে, চাকরি করবে—এটিই হলো উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য। সুতরাং সেদিকে তারা নজর দেবে। যে কথাটি আমি আগেও বলেছি, চাকরির দিকে বেশি নজর দেয়ার কারণ হলো আমরা গবেষণামনস্কতা এখানে সৃষ্টি করতে পারিনি। উদাহরণ হিসেবে আমি বলি আমাদের কিছু কিছু ডিপার্টমেন্ট আছে যাদের কোনো গবেষণাই নেই। জন্ম থেকে অদ্যাবধি কোনো গবেষণাই নেই। আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি গবেষণামনস্ক হয়, আমরা গবেষণার পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারি তাহলে চাকরি ও পড়াশোনার পাশাপাশি একটা বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী আমরা পাব যারা গবেষণামুখী হবে। তারা দেশ-বিদেশে আরো বেশি পড়াশোনা করার জন্য যাবে। প্রশাসনিক বা বিসিএসনির্ভর চাকরির দিকে তাদের যে নজর তা বহুলাংশে কমে আসবে। আমরা দেখছি যে সায়েন্টিফিক অর্গানাইজেশনে অথবা গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করে তাদের বেতন কিংবা সামাজিক মর্যাদা সেভাবে দেয়া হয় না। সুযোগ-সুবিধাও তাদের কম। এ কারণেই প্রকৃত অর্থে বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির প্রতি আমাদের শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বেশি। গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলোতে না গিয়ে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান যেখানে চাকরি করলে মর্যাদাও পাওয়া যাবে, ভালো বেতনও পাওয়া যাবে সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা বেশি যায়। সরকার যদি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সামাজিক মর্যাদা, ভালো বেতন  নিশ্চিত করতে পারে তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা আগ্রহ 

পাবে, রাষ্ট্রকে কন্ট্রিবিউট করতে পারবে, উদ্ভাবনী চিন্তা করতে পারবে। ইনভেশনের ছাড়া একটি জাতি উন্নতি করতে পারে না। কোরিয়া যতটুকু উন্নত হয়েছে তার মূল কারণ হলো তারা রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টেই তাদের জিডিপির ৪.৮% ব্যয় করে। আমাদের দেশে সেটি একদমই তলানিতে। জাতি হিসেবে আমরা তখনই অগ্রসর হতে পারব যখন একটি ইনভেটিভ ন্যাশন হতে পারব, একটি জাতি যার নিজের উদ্ভাবন থাকবে। এটি তখনই সম্ভব যখন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সুযোগ করে দেয়া হবে। যে সুযোগ কোরিয়া দিয়েছে এবং তারা ১৯৭০ থেকে এ যাত্রা শুরু করেছে বলা যায়। এখন তাদের পার ক্যাপিটাল ইনকাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪-৩৫ হাজার ইউএস ডলার। আমাদের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী, আমাদের শিক্ষকরা দেশের বাইরে লেখাপড়া করতে গিয়ে মেধার সাক্ষর রেখে এসেছেন। এখন যদি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে আমাদের অধিক সুযোগ দেয়া হয় তাহলে উদ্ভাবনী বিভিন্ন খাতে চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আসার আগ্রহ বাড়বে এবং সমান্তরাল দেশে অগ্রসর হবে। 

বিদেশী শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন খুব বেশি আকর্ষণ করতে পারছে না বলে মনে হয়। বিপরীতে দেশের শিক্ষার্থীরা বিপুল সংখ্যায় পশ্চিমা এবং প্রতিবেশী দেশে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যাচ্ছেন। এ চিত্র কীভাবে বদলানো যেতে পারে?

এটির প্রথম কারণটা হলো আমাদের দেশের মানুষের এখন আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে। আমাদের সচ্ছল ফ্যামিলিগুলো চায় যে তাদের সন্তানদের বিদেশে  পাঠাবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয় তারা সেরাদের সেরা। আমাদের রিমোট এরিয়ার শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তারা মেধাবীদের মধ্যে অন্যতম। এখন একটা বিশাল অংশ দেশের বাইরে চলে যায়। তাদের অনেকে হয়তোবা দেশের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না। কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা খুব সহজেই ভর্তি হতে পারে। এটা একটি বড় কারণ যে শিক্ষার্থীরা কেন দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। যে সাবজেক্টগুলোয় গ্লোবালাইজেশনের যুগে লেখাপড়া করলে চাকরির সুযোগ আছে এবং যেখানে উদ্ভাবন করার সুযোগ আছে, যেখানে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ আছে, এ রকম অসংখ্য সাবজেক্ট প্রয়োজন। আমাদের এখানে ওই সব সাবজেক্টে পড়ালেখা করে তারা গ্লোবাল মার্কেটে প্রবেশ করছে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে তারা চাকরি পাচ্ছে। ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের এখানে অনেক সাবজেক্ট আছে যেগুলো আমাদের চালিয়ে নিতে হচ্ছে। কিন্তু গ্লোবাল মার্কেটে এগুলোর তেমন কোনো চাকরির বাজার নেই। এসব কারণে দেখা যায় গ্লোবাল মার্কেটে যে সাবজেক্টগুলোর চাহিদা বেশি সেগুলো না পেলে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বাইরে চলে যায়। এ জন্য আপাতদৃষ্টিতে ব্রেন ড্রেন মনে হয় অনেক বেশি। তার একটি কারণ হলো নিড বেজড এডুকেশন। ব্রেন ড্রেনের আর একটি হলো আমাদের দেশের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া। 

আমাদের এখানে বিদেশী ছাত্ররা আসবে কীভাবে! বিদেশী ছাত্ররা তখনই আসবে যখন আমাদের শিক্ষার মান উন্নত হবে। বিদেশী ছাত্ররা তখনই আসবে যখন এখানে এসে লেখাপড়া করে এ দেশে চাকরি করার সুযোগ থাকবে বা আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে তারা প্রবেশ করতে পারবে। আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা যদি উন্নত হয়, যেমন ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের দেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হলে। তখন পৃথিবীর বহু দেশের শিক্ষার্থী আমাদের এখানে চাকরির সুযোগ খুজঁতে আসবে। বহু শিক্ষার্থী তখন আমাদের এখানে আসবে লেখাপড়া করার জন্য। আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেকগুলো দেশে আছে যাদের থেকে আমাদের লেখাপড়া তুলনামূলক ভালো। তাদের বৃত্তি দিয়ে বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আমাদের দেশে আনার জন্য আমরা নিকট ভবিষ্যতেই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বড় ভূমিকা পালন করেছে। দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরিতে এখন এ বিশ্ববিদ্যালয় কতটা ভূমিকা রাখছে? ২৮ বছর বিরতির পর ডাকসুর নির্বাচন হয় ২০১৯ সালে। নতুন নির্বাচনের উদ্যোগ আপনি নেবেন কিনা।

জাতি গঠনের জন্য অতীতের মতো এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রাখছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন কম করে হলেও ১০টি সেমিনার, আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এত ভাইব্রেন্ট একটা বিশ্ববিদ্যালয়, আমরা পরস্পর বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক করতে পারি, আবার সমালোচনা-পর্যালোচনা শেষে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি। দেশের যখনই কোনো ক্রান্তিকাল আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব অবস্থানে থেকে প্রতিকূল পরিবেশেও ভূমিকা রেখেছেন, এখনো রাখছেন, ভবিষ্যতেও রাখবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখনই অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে শিক্ষার্থীদের থেকে আবেদন নিবেদন এসেছে ডাকসু নির্বাচন দেবার জন্য, আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি নির্বাচন দিতে। এটিকে আমরা মিনি পার্লামেন্ট হিসেবে অভিহিত করি। এটি যখন থাকে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বেশি ভাইব্রেন্ট থাকে। কো কারিকুলার বা  এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ বাড়ে। আর একজন শিক্ষার্থী বই-পুস্তকের পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ যদি থাকে তখন ওই শিক্ষার্থীর মধ্যে মেধার বিকাশ দ্রুতগতিতে হয় এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে ওঠে। আমরা সামনের দিনে একটি অনুকূল পরিবেশ পেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ডাকসু নির্বাচন দেব। আমাদের পক্ষ থেকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো বাধা নেই। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, গেস্টরুম কালচারের মতো সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা।

আমরা শতবর্ষ উপলক্ষে যে মাস্টারপ্ল্যান নিয়েছি সেখানে আবাসিক হল বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ছাত্র-ছাত্রী সবার জন্যই এবং এটি প্রয়োজনও বটে। কোনো কোনো হলের বয়স শতবর্ষ কিংবা ৬০ বছরেরও বেশি। সেগুলোও দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের যদি থাকার জন্য সুযোগ করে দিতে পারি, তাহলে শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের বিকাশে যে প্রতিবন্ধকতা আছে সেগুলো কেটে যাবে। একজন অভিভাবক ও শিক্ষক হিসেবে যখন সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট ছিলাম তখনো এ বিষয়গুলো আমার যেমন চোখে পড়েছেম তেমনি উপাচার্য হিসবেও এখনো আমি হল পরিদর্শনে যাই। এগুলো উপলব্ধি করার চেষ্টা করছি এবং আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। 

শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলে আপনাআপনিই গেস্টরুম কালচার, গণরুম কালচার শেষ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয় কিন্তু সহযোগিতা করতে চায় তাদের সহায়তা নিয়ে ঢাবির প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের সব শিক্ষার্থীকে বৃত্তি সুবিধায় নিয়ে আসার একটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। অসহায় ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা আলাপ করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বর্তমান চিত্র নিয়ে আপনার বিশেষ কোনো পর্যবেক্ষণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিচ্ছন্নতা বিষয়টি আমার চোখে পড়ে প্রায়ই। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু পড়াশোনার জায়গা না, এটি অনেকের কাছে বিনোদনের জায়গাও বটে! টিএসসিতে গেলে দেখা যায় ট্রাফিক জ্যাম, বিনোদনের জায়গা হিসেবে মানুষ এখানে আসে। এখানে কালচারাল অ্যাক্টিভিটিজ হয়, বিতর্ক হয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীরা এখানে আসে। টিএসসিতে ৫০টিরও বেশি সংগঠন এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম করে। তবে তারা পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে উদাসীন। আমি যখন হলে গিয়ে রুমগুলো দেখি সেগুলোর পরিচ্ছন্নতার আবস্থা দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। 

সম্প্রতি ভূমিকম্প হওয়ার পর হলের ছাত্ররা লাফিয়ে পড়ে পা ভেঙেছে। পরিচ্ছন্ন না থাকলে দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ওপর যে প্রভাব পড়ে সে বিষয়ে তারা সচেতন নয়। এজন্য আমরা হলে পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নামে একটি ক্লাব গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছি। একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করেছি। শিক্ষার্থীদের কাছে আহ্বান, তারা যেন হল, ক্লাসরুম পরিষ্কার রাখে। তাতে করে ক্যাম্পাস পরিষ্কার থাকবে। চারপাশ পরিষ্কার থাকলে সেটি একজন শিক্ষার্থীর মনের ওপরও প্রভাব ফেলবে। 

আরেকটি বড় বিষয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা। ক্যাম্পাসের চারপাশ খোলা থাকার কারণে অনেকে ক্যাম্পাসকে অপরাধ সংঘটনের নিরাপদ জায়গা হিসেবে মনে করে। ক্যাম্পাসের পাশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ক্যাম্পাসের যে ভাসমান দোকানগুলো ছিল, সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছি আমরা। কিন্তু তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে বসেছে। সমাজের বিভিন্ন জায়গার লোক আসে, সেখানে অপরাধ করে, তার প্রভাব ঢাবিতেও পড়ে। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, এর সমাধান কীভাবে হবে ঠিক বলতে পারব না। ঢাবির ভেতরে যে বাইরের গাড়িগুলো চলে তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে। শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণেরও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। ধীরে ধীরে আমরা এগুলো কমিয়ে নিয়ে আসব। শিক্ষার্থীরা যেখানে-সেখানে পোস্টার বা দেয়াল লিখন করে—এটিও সৌন্দর্য নষ্ট করে। ক্রিয়াশীল শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাব ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যেন তারা যেন রক্ষা করে। দেয়াল লিখন, পোস্টার/ব্যানারের জন্য আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নেব। একটি সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সচেষ্ট থাকব।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫