বর্তমানে রক্তশূন্যতা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগ। প্রধানত অল্পবয়সী শিশু, গর্ভবতী ও প্রসবোত্তর নারী এবং নারীদের ঋতুস্রাবের সময় রক্তশূন্যতায় বেশি ভোগে। এ বছরের মার্চে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মানুষ রক্তাস্বল্পতায় বেশি ভোগে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে যারা বসবাস করে, তাদের বেশি প্রভাবিত করে। কারণ তাদের যথেষ্ট পরিমাণে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে । ধারণা করা হয়, বিশ্বব্যাপী ৫-৫৯ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৪০ শতাংশ, গর্ভবতী নারীদের ৩৭ শতাংশ এবং ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের ৩০ শতাংশ রক্তশূন্যতায় ভোগে। ২০১৯ সালে পুরো বিশ্বে রক্তশূন্যতার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন হারানোর মোট সময় পাঁচ কোটি বছর। এর পেছনে সবচেয়ে বেশি যে কারণগুলো দায়ী তা হলো আয়রনের অভাব, থ্যালাসেমিয়া, সিকেল সেলের বৈশিষ্ট্য ও ম্যালেরিয়া।
সমস্যার পরিধি
অ্যানিমিয়া বিশ্বব্যাপী ১৫-৪৯ বছর বয়সী ৫০ কোটি নারী এবং ৬-৫৯ মাস বয়সী ২৬ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে প্রভাবিত করে বলে অনুমান করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ৩০ শতাংশ (৫৩ কোটি ৯০ লাখ) কিশোরী ও নারী এবং ৩৭ শতাংশ (৩ কোটি ২ লাখ) ১৫-৪৯ বছর বয়সী গর্ভবতী নারী রক্তাল্পতায় আক্রান্ত হয়েছিল।
আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ডব্লিউএইচও অঞ্চলগুলোতে রক্তশূন্যতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত আফ্রিকা। আফ্রিকায় রক্তাস্বল্পতায় আক্রান্ত আনুমানিক ১০ কোটি ৬ লাখ নারী ও ১০ কোটি ৩ লাখ শিশু এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২৪ কোটি ৪ লাখ নারী ও ৮ কোটি ৩ লাখ শিশু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদক্ষেপ
মাতৃ, শিশু ও ছোট শিশুর পুষ্টির ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে ছয়টি পরিকল্পনা রয়েছে তার মধ্যে অ্যানিমিয়া আক্রান্তের সংখ্যা কমানোর লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উপরন্তু ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে রক্তশূন্যতা টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের ২০৩০ এজেন্ডার অন্যতম লক্ষ্য।
ডব্লিউএইচও অ্যানিমিয়া কমাতে দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২১ সালে নিউট্রিশন ফর গ্রোথ সামিটে, ডব্লিউএইচও বহুক্ষেত্রীয় পদ্ধতির মাধ্যমে রক্তাস্বল্পতা প্রতিরোধ, নির্ণয় এবং পরিচালনার জন্য একটি বিস্তৃত কাঠামো তৈরি করেছে। ডব্লিউএইচও ইউনিসেফের সঙ্গে একত্রে একটি অ্যানিমিয়া অ্যাকশন অ্যালায়েন্সও প্রতিষ্ঠা করছে। দেশ পর্যায়ে কাঠামো বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন সেক্টরে অংশীদারদের একত্র করছে।