টেকনাফ থেকে ছেড়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ।
জাহাজের দুই ধার দিয়ে উড়ে যাচ্ছে সাদা গাংচিল। ভেতরের উৎফুল্ল মানুষজন কেউ কেউ চিপস
ফেলছেন গাংচিলদের দিকে। গাংচিলরাও সায় দিয়ে চেষ্টা করছে চিপস পানিতে পড়ার আগেই
হাওয়া থেকে মুখে তুলে নিতে। এ যেন এক রাজকীয় গার্ড আব অনারে দারুচিনি দ্বীপ-খ্যাত
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে র্যাগ ট্যুরে যাচ্ছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
(চুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
র্যাগ ট্যুর চুয়েট শিক্ষার্থীদের মাঝে
বেশ জনপ্রিয় একটি বিষয়। প্রতিবছর চুয়েটের বিদায়ী বর্ষের শিক্ষার্থীরা এ ট্যুরের আয়োজন
করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিনগুলোকে স্মরণীয় করে রাখা এবং নিজেদের মধ্যে
সম্পর্ক উন্নয়নেই এ আয়োজন।
চুয়েটের তড়িৎকৌশল (ইইই) বিভাগের ৬০
জন শিক্ষার্থী অংশ নেন এ ট্যুরে। ঘোরাঘুরি, আড্ডা, গান আর হৈ-হুল্লোড়ে মেতেছিলেন তারা।
সেন্ট মার্টিনে পৌঁছে জুমা নামাজ আদায়
করে নেন মুসলিম শিক্ষার্থীরা। বিকালে দ্বীপের পশ্চিম তীরের সৈকতে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের
নীল জলরাশির মাঝে লাল সুর্যের তলিয়ে যাওয়া অবলোকন করেন। সন্ধ্যায় কেউ সেন্ট মার্টিনের
জেটিতে বসে আড্ডা মেতে উঠেন, কেউবা ঘুরেঘুরে দেখেন বাজারের ব্যতিক্রমী পণ্য সম্ভার।
রাতে রিসোর্টে জমে উঠে গানের আড্ডা।
ইইই '১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিক আল মুস্তাহিদের গিটারের তালে সংগীতের ঝড় তোলেন সাজ্জাদ হোসেন মল্লিকসহ আরো অনেকে। এরপর নাজমুল রেজা রাহাতের নেতৃত্বে নৃত্যে মেতে উঠেন বেশ কয়েকজন। সামুদ্রিক কোরাল মাছের বারবিকিউর স্বাদ নিয়ে শেষ হয় প্রথম দিন।
পরদিন খুব ভোরে সূর্যোদয় দেখার পালা।
এরপর সকাল সাড়ে আটটায় ছেঁড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে ভাড়া সাইকেলে করে রওনা দেয়া। সমুদ্রের
পাড় দিয়ে সাইকেল চালানোর সময় এক অনিন্দ্য সুন্দর সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়া। এদিন বিকালে
দ্বীপের পশ্চিম তীরের সৈকতে ফুটবল খেলায় মেতে ওঠেন সবাই। রাতে কেউ জেটিতে বসে গানের
পসরা সাজায়, কেউবা পশ্চিম সৈকতে বসে জোছনা অবলোকন করেন, আর কেউ কেউ বাজারে ঘুরে বিভিন্ন
রকম সামুদ্রিক মাছের স্বাদ দেন।
ট্যুর আয়োজক দলের সদস্য উক্ত ব্যাচের
শিক্ষার্থী সন্তু মল্লিক বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে চুয়েট শিক্ষার্থীরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপে
র্যাগ ট্যুরে যায়। আমরাও এর ব্যতিক্রম করিনি। কিছুদিন পর আমাদের চুয়েটে শিক্ষা জীবনের
আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটবে। তখন অনেক চেষ্টা করেও এতজন একসঙ্গে ঘুরতে আসতে পারব না। জীবনে
যখন অনেক বেশি ক্লান্তি এসে পড়বে তখন হয়তো এ ট্যুরের স্মৃতিগুলো আমাদের জীবনে জ্বালানি
হিসেবে কাজ করবে। আমাদের স্মৃতিতে নতুন এক অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী হয়ে থাকবে।
প্রসঙ্গত, চুয়েটের প্রতিটি ব্যাচ শিক্ষা
সমাপনী উৎসবের আগে নিজেদের একটা নাম ঠিক করে নেয়। যেমন- সর্বশেষ বিদায় নেওয়া ব্যাচটির
('১৭ ব্যাচ) নাম ছিলো "সংবর্ত '১৭। বিশ্ববিদ্যালয়ের '১৮ ব্যাচের নাম দেওয়া হয়েছে
আদন্ত ১৮। কিন্তু, '১৮ ব্যাচের তড়িৎকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বতন্ত্র নাম
দিয়েছে অয়োময় '১৮। আর ট্যুরটির স্লোগান ছিলো দারুচিনি দ্বীপে অয়োময় '১৮। ইতিমধ্যে চুয়েটের
বাকি বিভাগগুলোর বিদায়ী বর্ষের ('১৮ ব্যাচ) শিক্ষার্থীরাও র্যাগ ট্যুরে যাওয়া শুরু করেছে। সবারই
গন্তব্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।
নাজমুল
হাসান ,শিক্ষার্থী,
চুয়েট