সাক্ষাৎকার

ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে চাই

প্রকাশ: ডিসেম্বর ০৪, ২০২৩

অধ্যাপক ড. শামস্ রহমান। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির নবনিযুক্ত উপাচার্য। তিনি অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন বিশেষজ্ঞ। সম্প্রতি উচ্চ শিক্ষা খাতের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

বিদেশের এত ভালো বিশ্ববিদ্যালয় রেখে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে যোগ দিলেন কেন? 

বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও অধ্যাপনা করেছি। একসময় মনে হয়েছে, জীবনের এমন একটা স্তরে পৌঁছেছি, যেখান থেকে দেশকে কিছু দেয়া যেতে পারে। ভেবেছি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কিছু করার আছে। বিদেশে থাকলেও দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। যার মধ্য দিয়ে আমি জেনেছি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে। সেগুলোকে হিসাবনিকাশ করেই মনে হয়েছে দেশে গিয়ে ভালো একটা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলে সার্বিকভাবে ছাত্রসমাজ ও সমাজের জন্য আরো ভালো কিছু করা যাবে। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বললে, এটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় আলাদা। এখানে আসার আগেই শুনেছি, অনেক মেধাবী ছাত্রদের স্কলারশিপ দেয়া হয় এখান থেকে। এখানে সমাজকে কিছু দেয়া ও বিভিন্ন স্তরের ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ প্রদানে গুরুত্ব দেয়া হয়। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি তাদের সে সুযোগ তৈরি করে দেয়ার মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। 

এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার আমাদের ছাত্রছাত্রী। দেখতে হবে, তারা যেন দক্ষতা ও সক্ষমতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আর তার জন্য ক্লাসরুম পারফরম্যান্স ভালো হতে হবে। ভবিষ্যতে আরো দক্ষ ও মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে যারা রয়েছে তাদেরও উজ্জীবিত রাখা হবে মোটিভেশনাল মেন্টরশিপের মাধ্যমে। বাংলাদেশের ছাত্ররা ক্লাসের কথা কেবল বন্ধুদের সঙ্গে না, পরিবারের সঙ্গেও শেয়ার করে। পরিবারই তাদের অর্থের জোগান দেয়। সেজন্যই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে মানসম্মত শিক্ষা দিচ্ছি কিনা। যেন ভালো চাকরি নিতে পারে। পাশাপাশি যেন উদ্যোক্তা হয়ে চাকরি দিতে পারে। আমরা কেবল চাকরি করার জন্যই গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে চাই না। তাদের সামনে ইনোভেটিভ উপায় দিতে চাই, যার মধ্য দিয়ে তারা উদ্যোক্তা হয়ে সমাজে অবদান রাখতে পারবে।  

র‌্যাংকিংয়ে স্থান পেতে গবেষণা অনেক বড় ভূমিকা রাখে। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষণার অনুমতি নেই। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? 

দশ বছর আগেও বাংলাদেশে কেউ র‌্যাংকিংয়ের কথা বিবেচনা করেনি। কিন্তু এখন চেহারা বদলে গেছে। র‌্যাংকিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‌্যাংকিংয়ের অনেকগুলো পদ্ধতি আছে বৈশ্বিকভাবে। কিউএস ও টাইমসের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানই র‌্যাংকিং করে। আন্তর্জাতিক মহলে কিউএস সবচেয়ে পরিচিত নাম। সেখানকার দুটি প্রধান শর্ত হচ্ছে শিক্ষকদের খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি। এ দুটি দিকেই প্রায় ৫০ শতাংশ নির্ভর করে। ফলে আমরা আপাতত এ দুটি ক্রাইটেরিয়া নিয়েই কাজ করছি। এখানে গবেষণা করা, পাবলিশ করা ও সাইটেশন প্রয়োজন। তিনটিই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত র‌্যাংকিংয়ের সঙ্গে। পিএইচডি প্রোগ্রামে না থাকলেও ওই কাজগুলো করা সম্ভব। 

সরকারও মনে করছে বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি দেয়ার সময় এসেছে। শিগগিরই হয়তো সেটার পদক্ষেপ নেবে সরকার। সেখানে ইস্ট ওয়েস্টও হয়তো সুযোগটা পাবে।  

শিল্প উপযোগী দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে আপনার কোনো উদ্যোগ থাকবে কি? 

এতে কোনো সন্দেহ নেই আমাদের দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। সংখ্যা ও মান—দুটি দিকেই দেখতে হবে। ২০ বছর ধরে দেশ অর্থনৈতিকভাবে বেশ এগিয়েছে। আমাদের ভিশন ২০৪১ সামনে রাখলে দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। অবশ্য ক্রমে পরিস্থিতি আরো ক্রিটিক্যাল হবে। ভারত, শ্রীলংকা এমনকি চীন থেকেও মানুষ আসছে আমাদের দেশে। সেটা ধরে নিয়েই ভাবতে হবে কর্মসংস্থানের ব্যাপারটি। তাছাড়া আমাদের অর্থনীতির বড় একটা উৎস রেমিট্যান্স। যদি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারি, তাহলে দেশের বাইরে থাকার পরও তারা যথাযথভাবে কাজ পাবে। 

এক কোটির মতো বাংলাদেশী বিদেশে কাজ করেন। এরা দক্ষ না হলে বেকার হয়ে ফিরতে হবে। এখন ইন্ডাস্ট্রিতে ফোর পয়েন্ট জিরোর আন্ডারে অনেক নতুন প্রযুক্তিগত জ্ঞান এসেছে। সম্প্রসারিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, থ্রিডি প্রিন্টিং ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি। এটা পুরো সিস্টেমে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সচেতনতা বাড়াতে হবে। উদ্যোগ হিসেবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন প্রযুক্তি নিয়েও কোর্স চালু করা হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন এসব বিষয়ে দক্ষ হতে পারে।

সার্বিকভাবে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে আমাদের শিক্ষার মোটা দাগের যেসব পার্থক্য ও মিল আপনি দেখতে পান সে সম্পর্কে জানতে চাই।

আমরা শিক্ষা দিতে চাই উন্নত বিশ্বের সঙ্গে মিল রেখেই। শুধু কারিকুলাম না, টেক্সট বইগুলোও মিল রেখে করতে চাই। এখানে একটা বিষয় বোঝার আছে। যেহেতু পশ্চিমা কারিকুলামের ধাঁচে পড়াই, এটা একদিক থেকে ঠিক থাকলেও তফাৎটাকে বুঝতে হবে। উপলব্ধি করতে হবে এখানকার সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশ কী চায়। ওই কারিকুলামের সঙ্গে আমাদের এগুলোও যোগ করতে হবে। সেটাও আমার একটা অবজেকটিভ। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হবেন গবেষণার কাজে। শিক্ষকরা গবেষণা করবেন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে, তারা খুঁজে আনবেন ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে চলে। বের করবেন কোনো সমাধান দিতে পারেন কিনা। এভাবে প্রায়োগিক হবে গবেষণা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫