অ্যামচেমের সভায় বক্তারা

বিনিয়োগ ও রফতানি বৃদ্ধিতে মেধাস্বত্ব অধিকারের সুরক্ষা জরুরি

প্রকাশ: ডিসেম্বর ০১, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এবং রফতানি বাজার সম্প্রসারণের ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে মেধাস্বত্ব অধিকার (আইপিআর) সুরক্ষা ও এ-সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। আইপিআরের সঠিক বাস্তবায়ন না হলে বিদেশীরা বিনিয়োগে উৎসাহ পান না। আইপিআর সংরক্ষিত হলে উদ্ভাবন বৃদ্ধি পেয়ে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়। যেহেতু ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে, তাই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী মেধাস্বত্ব সুরক্ষা ব্যবস্থা জরুরি। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত ‘আইপিআর প্রটেকশন অ্যান্ড প্র্যাকটিস: ড্রাইভিং ইকোনমিক গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। 

মেধাস্বত্ব চুরি হলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে সে বিষয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ইকোনমিক ইউনিট চিফ জোসেফ গিবলিন। তিনি বলেন, ‘নকল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন কেন খারাপ, তা তিনটি কারণে একজন ব্যক্তির জানা প্রয়োজন। এ ধরনের পণ্য ব্যক্তিগতভাবে আপনার জন্য বিপজ্জনক। মুনাফা চলে যায় আন্তর্জাতিক অপরাধীদের কাছে এবং পণ্যগুলো অর্থনীতির মাধ্যমে আপনার ক্ষতি করে।’ 

সেমিনারে দ্বিতীয় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইপি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। তিনি বলেন, ‘এক সময় ধরে নেয়া হতো মেধাস্বত্ব বিষয়টি বড় লোকের ইস্যু। বিশ্বে এখন আর এ প্রবণতা নেই। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনেক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অতএব বাংলাদেশকেও এ চিন্তা-চেতনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ উন্নত রাষ্ট্রগুলো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে মূলত মেধাস্বত্বকে গুরুত্ব দিয়েই। বাংলাদেশকেও সেদিকে এগিয়ে যেতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘মেধাস্বত্ব বিষয়ে নীতি প্রণয়ন হয়েছে, ইনস্টিটিউট হচ্ছে। কিন্তু মেধাস্বত্বের নকল প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা আদালতের বড় দায়িত্ব রয়েছে। নকল প্রতিরোধে প্রশাসনের ভূমিকা আরো বাড়ানো দরকার। দুই মাস আগে নতুন যে কপিরাইট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, সেটিতে অনেক কিছুরই ব্যত্যয় ঘটেছে। আবার অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।’

তার মতে, আইপিআরের সঠিক বাস্তবায়ন না হলে বিদেশীরা বিনিয়োগে উৎসাহ পান না। আইপিআর সংরক্ষিত হলে উদ্ভাবন বাড়ে। আর উদ্ভাবন বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়ে। অতএব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য মেধাস্বত্ব অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। 

বাংলাদেশকে মেধাস্বত্ব নকল করার নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতে অনেক নকল ওষুধের কারখানা আছে। সেখানে নানা ধরনের নকল ওষুধ তৈরি করা হয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, তারা নকল ওষুধ তৈরি করে সেগুলো উৎপাদনের ঠিকানায় বাংলাদেশের নাম লিখে দেয়। বাংলাদেশের মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে ভারতের নকলবাজরা।’

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা আইপিআর সম্পর্কে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটাতে যাচ্ছে। তাই আইপিআর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। তাছাড়া আইপিআর বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের কর্মপরিকল্পনা শুরু করা হয়েছে।’ 

স্বাগত বক্তব্যে অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান আইপিআর বাস্তবায়ন করেছে তারা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি উৎপাদন পাচ্ছে। অতএব যারা আইপিআর বাস্তবায়ন করবে, তারা উৎপাদন ও রফতানিতে বেশি সুবিধা পাবেন। তাছাড়া নতুন বাজারের জন্য পণ্যে বৈচিত্র্য আনলেই হবে না, সেসব পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ক্রেতারা পণ্য কেনার আগে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে আইপি বাস্তবায়ন করে কিনা তা যাচাই করে। তাই আইন থাকলেই হবে না, এর বাস্তবায়ন জরুরি।’ 

আমেরিকান চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘আইপি বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়নে একটি তদারকি সংস্থা তৈরি করা দরকার। যেখানে বাণিজ্য, অর্থ, সাংস্কৃতিক, শিল্পসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকবেন। যাতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তা সমাধান করা যায়।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫