মলিকুলার মেডিসিন অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিকস

ইউডায় দেশের প্রথম মলিকুলার মেডিসিন অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিকস বিভাগ

প্রকাশ: নভেম্বর ২৭, ২০২৩

মলিকুলার মেডিসিন চিকিৎসাবিদ্যার এমন একটা শাখা, যেখানে জিন, প্রোটিন ও কোষের আণবিক কার্যক্রম অনুধাবনের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়। কিছু জিন, অণু ও কোষ ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও কার্ডিওভাসকুলারের মতো রোগে আক্রান্ত হলে অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। বিষয়টিকে মাথায় রেখেই এ শাস্ত্রের গবেষণায় অগ্রগতি। আর সেভাবেই সাজানো হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোর্সগুলো, যাতে গ্র্যাজুয়েটরা আগামীর বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারেন। সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আণবিক চিকিৎসার সর্বশেষ অগ্রগতি ও প্রয়োগকে। তার মধ্যে রয়েছে রোগের প্যাথোজেনেসিস বোঝাপড়ার জন্য বায়োইনফরমেটিকসের প্রয়োগ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আবিষ্কৃত সর্বাধুনিক ওষুধের মাধ্যমে তার সমাধান। 

জলবায়ু সংকট, ক্রমবর্ধমান দূষণ, নিত্যনতুন ভাইরাস এবং ওষুধ মোকাবেলায় সক্ষম রোগের প্রাদুর্ভাব এবং জনসংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে মানবজাতি নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে তাদের আবাসনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, যার ফলে কেটে ফেলা হচ্ছে বনভূমি। মানুষের এমন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বাড়ছে গ্রিনহাউজ গ্যাস। এভাবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মানুষের বাসস্থানের বিস্তীর্ণ এলাকা নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গ্রিনহাউজ গ্যাসের ক্রমাগত নির্গমনের কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে। ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে জলবায়ু। জীব প্রজাতি ধাবিত হচ্ছে ব্যাপক বিলুপ্তির পথে। কিছু প্রাণী ও মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির কারণে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা এবং বিভিন্ন জেনেটিক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। বিশ্ব খাদ্যের ঘাটতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি, খরা ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং নতুন বা ওষুধ প্রতিরোধী রোগের উদ্ভবের সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থায় এসব সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষায় বহুমুখী হওয়া জরুরি। এসব কিছু মাথায় রেখেই ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ বাংলাদেশের উন্নয়ন, মহামারী মোকাবেলা এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত উন্নয়নে কার্যকরভাবে অবদান রাখতে স্নাতকদের সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ মলিকুলার মেডিসিন অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিকস স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। ব্যাচেলরদের পাঠ্যক্রমটি চার বছরের, যা আটটি সেমিস্টারে বিভক্ত। প্রতি সেমিস্টার আবার বিস্তৃত ২৪টি সপ্তাহ নিয়ে। প্রত্যেক ছাত্রকে মলিকুলার মেডিসিন ও বায়োইনফরমেটিকস বিভাগের কোর্স শুরু হওয়ার পর প্রতিটি সেমিস্টার/টার্মে ক্রেডিট ঘণ্টার সংখ্যা পূরণ করতে হয়। প্রতিটি সেমিস্টারে কমপক্ষে ১৭-২০ ক্রেডিট ঘণ্টা। কোর্সগুলো সাধারণ শিক্ষা (জিইডি) এবং মূল কোর্স উভয়ের সমন্বয়ে গঠিত। বছরের শুরুর দিকে সাধারণ শিক্ষা ও তুলনামূলকভাবে মৌলিক কোর্সগুলো পড়ানো হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামনে আসে উচ্চতর স্তরের কোর্স। মাস্টার্স একটি এক বছরের প্রোগ্রাম এবং ২৪ সপ্তাহের দুটি সেমিস্টার দিয়ে সাজানো। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ১২ ক্রেডিট ঘণ্টাসংবলিত একটি গবেষণাপত্র সম্পূর্ণ করে জমা দিতে হয়। পাশাপাশি কোর্সের অন্তর্ভুক্ত ন্যূনতম ২৪ ক্রেডিট ঘণ্টা সম্পূর্ণ করতে হয়।

উভয় প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ অধ্যয়নের সাধারণ প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে তারা জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিভিন্ন ফলাফলের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে। ধারণা লাভ করে বিভিন্ন খাদ্যের সঙ্গে অভিযোজন, জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে। অবদান রাখতে পারে নতুন স্বাস্থ্যবিধি ও দূষণমুক্ত পরিবেশ রেখে যাওয়ার প্রচেষ্টায়। শিক্ষার্থীরা সামাজিক চাহিদার পাশাপাশি আণবিক মেডিসিন ও বায়োইনফরমেটিকসের নিয়োগকর্তাদের চাহিদার জন্য প্রস্তুত হবে। জায়গা করে নেবে দেশ ও বিদেশের ড্রাগ আবিষ্কার, ড্রাগ ডিজাইনিং, ড্রাগ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে। রোগের পরিবেশগত ও আণবিক কারণগুলো নির্ণয় এবং সেই রোগগুলোর জন্য সম্ভাব্য সাধারণ বা ব্যক্তিগত ওষুধগুলো আবিষ্কার এবং ডিজাইন করার জন্য গবেষণা অপরিহার্য।

এ বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরদের অবশ্যই আণবিক স্তরে মানবদেহের কার্যকারিতা অনুভব করতে হয় এবং বুঝতে হয়। জানতে হয় সংকেত ট্রান্সডাকশন এবং নেটওয়ার্ক ফার্মাকোলজি, যাতে ভালো এবং অসুস্থ—উভয় অবস্থায়ই স্বাস্থ্যের গতিবিধি বোঝা যায়। পড়াশোনা শেষ করার পর ছাত্ররা মহামারীবিদ্যা, জীবাণু ও তাদের বৈচিত্র্য এবং রোগের ওপর তার প্রভাব বুঝতে পারবে। এর মধ্য দিয়েই সম্ভব হবে জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যার জৈব নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে যেকোনো মহামারী পরিস্থিতি সমাধান করা। পাশাপাশি তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করবে জিনগত রোগের ম্যাপিং সম্পর্কে। দক্ষতা অর্জন করবে প্রোবায়োটিকস, প্রিবায়োটিকস, সিনবায়োটিকস, পোস্টবায়োটিকস ও প্যারাপ্রোবায়োটিকস নিয়ে। সে অনুযায়ী ভ্যাকসিনের অগ্রগতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে এগিয়ে আসতে পারবে। 

স্নাতক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম সেলুলার ও আণবিক স্তরে গবেষণাগার গবেষণার জন্য প্রস্তুত করে, যা মানুষের রোগ বোঝার, নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। পিএইচডি, স্নাতকদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কঠোর প্রশিক্ষণ ও মানব জীববিজ্ঞান এবং মানব রোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান থাকবে। বর্তমানে এ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময়েও বায়োইনফরমেটিকসের মাধ্যমেই ভাইরাসের বর্তমান অবস্থা, মিউটেশনের রূপ, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ইত্যাদি সব ধরনের তথ্য হাতের নাগালে চলে আসছে। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা একযোগে তাদের করোনাভাইরাস সম্পর্কিত গবেষণা চালিয়ে যেতে পারছেন। দ্রুত একে অন্যের গবেষণালব্ধ ফলাফল ব্যবহার করতে পারছেন। বায়োইনফরমেটিকসের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা আগে এ বিষয়ে অন্য বিজ্ঞানীরা কী কী গবেষণা করেছেন, আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ, বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে পার্থক্য ইত্যাদি ডেটা সংগ্রহ, সাজানো ও বিশ্লেষণ করতে পারেন। বিষয়টি মাথায় রেখেই কোর্সগুলো সাজিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের মলিকুলার মেডিসিন অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিকস।

এখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ছাত্ররা ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও দূষণসংক্রান্ত বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় অবদান রাখার মাধ্যমে তৈরি করেছে প্রশংসনীয় অবস্থান। এ বিভাগেরই প্রাক্তন কৃতী ছাত্র ড. এএসএম সাহাব উদ্দিন সবুজ বর্তমানে জাতিসংঘের ইউনিসেফের হেলথ স্পেশালিস্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত আছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নিযুক্ত। বিশ্বের ১৩৬টি দেশের প্রার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষায় বিট করে তিনি ওই সংস্থায় যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়ে কাজে যোগদান করেন।

প্রফেসর ড. রওনক জাহান: উপ-উপাচার্য ও ডিন, লাইফ সায়েন্স অনুষদ, ইউডা


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫