চুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য খুলল নরওয়ের এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার

প্রকাশ: নভেম্বর ১৪, ২০২৩

নাজমুল হাসান

কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোলাবোরেশনের বিকল্প নেই। বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিনিয়ত নিজেদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিনিময় করে আসছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোলাবোরেশান শুরু করেছে। তবে সব থেকে সফল কোলাবোরেশান করেছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। ২০২২ সালে চুয়েট নরওয়ের এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের  সঙ্গে কোলাবোরেশান শুরু করে।

সম্পূর্ণ নরওয়ে সরকারের অর্থায়নে এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ বছর মেয়াদি কেয়ার প্রকল্প"হাতে নেয়। ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন নরওয়েজিয়ান ক্রোনার বাজেটের এ প্রকল্পের আওতায় চুয়েটের সঙ্গে এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিষয় বিনিময় হবে। একটি যুক্ত মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় দুটি যেখানে শিক্ষার্থীরা অর্ধেক কোর্স চুয়েটে করবে আর বাকি অর্ধেক এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ প্রোগ্রামের আওতায় ২৫জন চুয়েট শিক্ষার্থী নরওয়েতে যাবে। ১০জন এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চুয়েটে আসবে। ইতোমধ্যে ৬জন চুয়েট শিক্ষার্থী নরওয়েতে থিসিস করছেন। তার মধ্যে দুজন থিসিস শেষে ফিরেছেন। এ প্রোগ্রামে যোগ দিতে আগামী বছরের মার্চে চুয়েট থেকে আরো চারজন শিক্ষার্থী নরওয়েতে যাবে।

চুয়েটের ইনস্টিটিউট ওফ এনার্জি টেকনোলজির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ফাহাদ উল্ল্যাহ এগডার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈদ্যুতিক যানবাহন নিয়ে থিসিস শেষ করেছেন। তিনি বলেন, এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার পরিবেশ বিশ্বমানের। সেখানে যেতে চাইলে আগে গবেষণার ক্ষেত্র ঠিক করে সে সম্পর্কিত লিটারেচার রিভিউগুলো পড়ে নেওয়া উচিৎ। এর মধ্যমে একজন শিক্ষার্থী মনস্থির করতে হবে তিনি কী নিয়ে কাজ করতে চায়। ফলে থিসিস সুপারভাইজারের জন্য বিষয়টা সহজ হয়ে যাবে তাকে দিয়ে কী কাজ করানো যাবে। পাশাপাশি ইংরেজিতে কথা বলার পারদর্শিতাও খুব জরুরি।

প্রকল্পের আওতায় ফুল টাইম মাস্টার্সের জন্য চুয়েট থেকে গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ছয়টি বৃত্তিও দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত আগস্টে চারজন শিক্ষার্থী ফুল ফান্ডেড বৃত্তি নিয়ে নরওয়েতে পাড়ি দিয়েছেন। পাশাপাশি এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক চুয়েটে আসবেন এবং চুয়েট থেকে ১০ জন শিক্ষক এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন।

যন্ত্রকৌশল বিভাগের অর্ণব দাস অনিক ফুল ফান্ডেড বৃত্তিতে এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেমন সেমিস্টার ফাইনাল সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। নরওয়েতে বিষয়গুলো ভিন্ন। তারা "প্রবলেম বেইজড লার্নিং (পিবিএল) পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিটি বিষয়ে বিভিন্ন প্রোজেক্ট দেয়া হয়। প্রতিটি সেমিস্টারের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মার্ক থাকে প্রোজেক্ট গুলো থেকে। এ প্রোজেক্ট গুলো করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিষয়ে গভীর জ্ঞান লাভ করতে পারে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী দুই পক্ষেরই সমান অধিকার। শিক্ষকরা চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা বাস্তব জ্ঞান লাভ করতে পারে যা তার কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগবে। বেসিক সফটওয়্যার শিখানোর চাইতে তারা প্রয়োজনীয় গুলোই শিখাতে আগ্রহী।

নরওয়ে এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিজ্ঞান বিভাগের (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) অধ্যাপক ড. সৌমেন রূদ্র বলেন, এটা আনন্দের বিষয় যে এগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা চুয়েটে আসতে বেশ আগ্রহী। এ মাসে এগডার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুজন অধ্যাপক চুয়েটে আসবেন। তবে আমি বাংলাদেশর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে একটু উদ্বিগ্ন। চুয়েটের প্রশাসনিক জটিলতা গুলো আরো দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা হলে আমাদের কাজ গুলো আরো সহজ হয়ে যেতো।

চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড.আবু সাদাত মুহাম্মদ সায়েম বলেন, ২০১৯ সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া থেকে পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে চুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কিছু সুযোগ তৈরিতে মননিবেশ করি। তারই ফসল কেয়ার প্রকল্প। বর্তমানে বিদেশের আরো কয়েকটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুয়েটের কোলাবোরেশান সৃষ্টি নিয়ে কাজ করছি। কেয়ার প্রকল্প এ সম্পূর্ণ ব্যায় নরওয়ে সরকার বহন করলেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সঙ্গে যৌথভাবে ব্যয় বহন করার মাধ্যমে কোলাবোরেশন করা সম্ভব। আমি চেষ্টা করছি কোলাবোরেশান গুলোর মাধ্যমে দেশে এবং দেশের বাইরে চুয়েটের ভাবমূর্তি সমুন্নত হয়।

নাজমুল হাসান, শিক্ষার্থী (চুয়েট)। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫