অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপে পড়াশোনা

পড়ার বিষয় যখন অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ

প্রকাশ: অক্টোবর ৩০, ২০২৩

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করে। সরকারি-বেসরকারি চাকরি এবং নানা প্রাতিষ্ঠানিক কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার পরও প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ তরুণ নিজেদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেন না। তবে এই ২২ লাখ তরুণের ৫ শতাংশও যদি উদ্যোক্তা হতে পারে, তাহলে তারাই বাকিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যেমন দরকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, তেমন দরকার উদ্যোক্তা সহায়ক সুযোগ-সুবিধা। সে লক্ষ্য থেকেই ২০১৫ সালে দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্নাতক পর্যায়ে ইনোভেশন অ্যান্ড অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগ চালু করে। একজন তরুণকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ একটি ইকোসিস্টেম প্রদান করা হয় এখানে।

অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের কারিকুলামটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেখানে ৫০ শতাংশ সাধারণ ব্যবসা সম্পর্কিত, ৩০ শতাংশ স্টার্টআপ ও ব্যবসার আইডিয়া থেকে শুরু করে বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাওয়া এবং ২০ শতাংশ ইনোভেশন ও টেকনোলজি সম্পর্কিত বিষয় পড়ানো হয়। পাঠ্যক্রমটি তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে। যাতে শিক্ষার্থীরা একটা ব্যবসা শুরু এবং সেটাকে টেকসই করার জন্য যে দক্ষতাগুলো দরকার সবকিছুই শিখতে পারেন। এছাড়া প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের একটি করে প্রজেক্ট ওয়ার্ক করতে হয়, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের ব্যবসায়িক আইডিয়া ডেভেলপ থেকে শুরু করে আইডিয়া বাস্তবায়ন পর্যন্ত যেতে পারেন। 

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষার্থীদের বিজনেস অ্যানালিটিকস, ডাটা অ্যানালিটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়। ফলে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ব্যবসায় অ্যানালিটিক্যাল ও টেকনোলজি সম্পর্কিত বিষয়গুলো দেখভাল করার পাশাপাশি যারা চাকরি করতে ইচ্ছুক তারা চাকরির বাজারেও ভালো অবস্থান তৈরির সুযোগ পাচ্ছে। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যেমন উদ্যোক্তাবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দরকার, তেমন দরকার উদ্যোক্তাবান্ধব সহায়ক সুযোগ-সুবিধা। এ বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীদের ব্যবসা শুরু করার জন্য ওয়ান টু ওয়ান মেন্টরিং, ফান্ডিং সুবিধা, কো-ওয়ার্কিং স্পেস, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হয়।

শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ৫ কোটি টাকার অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যবসা শুরু বা সম্প্রসারণ করার জন্য বিনা সুদে তহবিল দেয়া হয়। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট ও ফিল্ড প্রজেক্টের সুযোগ পায়। এছাড়া সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা শিক্ষার্থীদের ওয়ান টু ওয়ান মেন্টরিং প্রদান করে থাকেন। বিভিন্ন স্কলারশিপের আওতায় বিদেশে এক সেমিস্টারের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম করারও সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য যে সুযোগ-সুবিধার মধ্যে রয়েছে ফ্রি ল্যাপটপ, গ্রন্থাগার, ইন্স্যুরেন্স সুবিধা, যাতায়াত, আবাসিক হলসহ অন্যান্য সুবিধা।

এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি শিখে থাকে একটি উদ্যোগ শুরু করা থেকে ব্যবসায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আদ্যোপান্ত। শিক্ষা জীবনেই ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করেন। যেমন ব্যবসায়ের মার্কেটিং, প্রমোশন, সাপ্লাই চেইন, মার্কেট অ্যানালাইসিস, ফাইন্যান্সিং, এইচআর ইত্যাদি। এছাড়া একটি ব্যবসা পরিচালনা করতে যেসব দক্ষতা দরকার সবই অর্জন করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। 

ফলে তারা নিজেদের ব্যবসাকে যেমন সফল করতে পারেন, তেমনি চাকরির বাজারেও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন। এছাড়া যারা চাকরিতে যাবেন তারা বিভাগের সাতটি মেজর থেকে উপযুক্ত মেজর নিয়ে চাকরির বাজারে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। ব্যবসায়ের পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রেও এগিয়ে থাকেন ইনোভেশন অ্যান্ড অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা সম্পর্কিত সেমিনার, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হয় যার মাধ্যমে তারা নিজেদের যাচাই করতে পারেন এবং বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা আয়ত্ত করতে পারেন। 

এ বিভাগের অ্যালামনাইদের মধ্যে ৫০ শতাংশ নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন আর বাকি ৫০ শতাংশ বিভিন্ন সেক্টরে চাকরি করছেন। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীর নিজেদের স্টার্টআপ রয়েছে, বাকিরা খণ্ডকালীনন চাকরি করছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করতে ও কমিউনিটি বিল্ডিংয়ে কাজ করতে রয়েছে ড্যাফোডিল অন্ট্রাপ্রেনিউর ক্লাবসহ নানা সাংগঠনিক ও ইভেন্ট। 

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগে চার বছরের স্নাতকে সর্বমোট খরচ হয় প্রায় ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফলের ওপর ওয়েবার, কোটাসহ বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ ও আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকে। শুধু এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের জন্য ২০ শতাংশ এবং মেয়েদের জন্য ৩০ শতাংশ বিশেষ ওয়েবার রয়েছে।

মো. কামরুজ্জামান দিদার: সহকারী অধ্যাপক ও প্রধান, ইনোভেশন অ্যান্ড অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫