অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপে পড়াশোনা

১৯টি সফল স্টার্টআপের কারিগর ব্র্যাকের সিইডি

প্রকাশ: অক্টোবর ৩০, ২০২৩

শফিকুল ইসলাম

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্যোক্তা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন্টার ফর অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিইডি)। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি তরুণদের উদ্ভাবনী ধারণাগুলো একটি স্টার্টআপ হিসেবে দাঁড় করাতে কাজ করছে সেন্টারটি। উদ্যোক্তা সংস্কৃতি এগিয়ে নিতে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৬ সালে সিইডি স্থাপন করে বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার (বিআইসি)। এটি তরুণ উদ্যোক্তাদের একটি প্লাটফর্ম যেখানে ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। এ বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে বর্তমানে ১৯টি স্টার্টআপ সফলভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। ডিজিটাল আইটি সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, ভার্চুয়াল শিক্ষা, অর্গানিক কৃষি, সাসটেইনেবল পোশাকসহ ই-কমার্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিচালিত হচ্ছে তরুণ উদ্যোক্তাদের স্টার্টআপগুলো।   

সফল এ স্টার্টআপগুলো হলো ডিজিটাল কমিউনিকেশন এজেন্সি অটোস, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অলডক, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস বণ্টন, ডিজিটাল মিডিয়া কোম্পানি ক্রাভিং মাইন্ড, কাস্টমাইজ ক্লদিং ব্র্যান্ড ক্রিয়েটিভিও, ই-কমার্স কোম্পানি ডিস্ট্রিক বাজার, শতবুনন, অর্গানিক কৃষি পণ্যের ব্র্যান্ড গ্রামীণ স্বাদ, আইটি ফার্ম আইওএসওয়াইএস, নেক্সটবিট টেক, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এডুকেশন প্লাটফর্ম নার্ডিজডটকম, পেইন্ট দ্য লিলি, সাসটেইনেবল ব্র্যান্ড পথরেখা, ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলোকে অনস্টপ সলিউশন দেয়ার লজিস্টিকস কোম্পানি রেপিডো, অনলাইন এডুকেশন প্লাটফর্ম স্কিলহাব, হেলদি ফুড প্রডাক্টের ব্র্যান্ড হোলমেইড এবং বিয়ন্ড দ্য স্টাইল, নির্বাণ, ট্রাডিশনাল বিডি লিমিটেড।  

সফল এ উদ্যোগগুলোর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে ব্র্যাকের বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার। এ সেন্টারটি প্রি-ইনকিউবেশন, ইনকিউবেশন এবং পোস্ট-ইনকিউবেশন তিনটি ধাপে পরিচালনা করা হয়ে থাকে। একজন সম্ভাব্য তরুণ উদ্যোক্তার ব্যবসার আইডিয়া বা ধারণাকে উদ্যোগে পরিণত করতে প্রি-ইনকিউবেশন একটি প্রধান মৌলিক ধাপ হিসেবে কাজ করে থাকে। এ ধাপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তরুণদের মধ্যে ব্যবসা গঠন বা উদ্যোগ শুরু করার মনোভাব তৈরি। এ পর্যায়ে সাধারণত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা যেমন—উদ্ভাবনী কর্মশালা, বুটক্যাম্প, মেন্টরিং সেশন, ইত্যাদির মাধ্যমে সম্ভাব্য ব্যবসায়িক পরিকল্পনা কী হতে পারে, সে সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা অর্জন করে। সে সঙ্গে উদ্যোক্তারা তাদের আইডিয়া বিভিন্ন সময়ে মেন্টর এবং অন্য অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি কার্যকর ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। 

প্রি-ইনকিউবেশন পর্যায়ে একজন উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হয়। যেমন উদ্যোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা, বাজার বিশ্লেষণ, ফাইন্যান্স সম্পর্কে ধারণা ইত্যাদি। এভাবে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উপস্থাপনের মাধ্যমে একটি স্টার্টআপের মূল ভিত্তি স্থাপিত হয়। 

প্রি-ইনকিউবেশন পর্যায়ে মনোনীত উদ্যোগগুলো এরপর ইনকিউবেশন পর্বে উন্নীত হয়। এ পর্যায়ে উদ্যোগগুলো সিইডি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়। সাধারণত ব্যবসার অবকাঠামো তৈরি, ফাইন্যান্স সম্পর্কে নির্দেশনা, পরামর্শ এবং নেটওয়ার্কিং ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতা করা হয়। মনোনীত স্টার্টআপগুলোকে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সিইডি সুদমুক্ত স্বল্পকালীন ঋণ দিয়ে থাকে। ব্যবসার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে দুটি ধাপে সর্বাধিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়ে থাকেন উদ্যোক্তারা। 

উদ‍্যোক্তা রাফি মিজান খান চৌধুরী নিলয় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে আমরা দুজন সিইডিতে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা জমা দিই। সেই পরিকল্পনা থেকে প্রতিষ্ঠান গঠন করে আজ সাত বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশের জন্য কাজ করছি। এর পেছনে দিকনির্দেশনা, মেন্টরশিপ, নেটওয়ার্কিং, অফিস স্পেসসহ সব ধরনের সুবিধা প্রদানের জন্য সিইডির কাছে কৃতজ্ঞ।’

সিইডির যুগ্ম পরিচালক আফসানা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখন এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এ সময় ব্যবসায় উদ্যোগ বা স্টার্টআপগুলোকে টেকসই করা খুবই জরুরি। সে লক্ষ্য নিয়েই সিইডি কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আমাদের উদ্যোগগুলোকে টেকসই করার জন্য তাদের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ধরনের ইনকিউবেশন সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছি। এছাড়া জলবায়ুগত পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এ-বিষয়ক মানবসম্পদ উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছি।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫