অ্যাজমা বা হাঁপানি

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অ্যাজমা প্রতিরোধ সম্ভব

প্রকাশ: অক্টোবর ০৯, ২০২৩

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

অ্যাজমা বা হাঁপানি হলো একটা দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এটি শ্বসনতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ। শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন কারণে কিংবা বংশগতও হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন পরিবেশগত কারণে হতে পারে। যেমন অ্যালার্জি অথবা পশুপাখির লোম বা ফুলের রেণু কারণে শ্বাসকষ্ট ও কাশি দেখা দিতে পারে। ১৯৭৫ সালের আগে অ্যাজমা রোগী বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মারা যেত। এখন অ্যাজমা অতটা ভয়াবহ হচ্ছে না। বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত। ১৮ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫১ লাখ মানুষ অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত। কম বয়সে ছেলেরা বেশি আক্রান্ত হয়। আর মেয়েরা আক্রান্ত হয় একটু বেশি বয়সে এসে। অ্যাজমার বেশির ভাগ কারণই অজানা। অনেক ক্ষেত্রেই তা জন্ম গত বা বংশগত অর্থাৎ জেনেটিক হয়ে থাকে। অ্যাজমায় শ্বাসকষ্ট হয়। বুক চেপে আসে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শ্বাস নিলে শব্দ হয়। এগুলো অ্যাজমার মূল লক্ষণ। এছাড়া অন্যান্য রোগের কারণেও হতে পারে। যেমন বার্ধক্যজনিত শ্বাসকষ্ট, যা ধূমপানের কারণে হতে পারে। এ থেকে মুক্তির উপায় হলো রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রথমে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। অ্যাজমা রোগী শনাক্ত করার ক্ষেত্রে আমার ওই রোগীর রোগের ইতিহাস দেখি। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে। যেমন স্পাইরোমেট্রি, পিক ফ্লো মিটার, মিথাকলিন চ্যালেঞ্জ টেস্ট, আইজিই পরীক্ষা। তবে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় রোগের ইতিহাসকে। অ্যাজমার ধরন অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা করে থাকি। মূল চিকিৎসা হলো অ্যাজমা রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। তবে এ রোগকে পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না। তার পরও লক্ষণগুলো কমিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন সহজ করা যায়। হঠাৎ করে যেন অবনতি না হয় তার জন্য চিকিৎসা করা হয়। আর অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। শ্বাসনালিতে সংক্রমণ যেন না হয় তার দিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। 

ওষুধ দেয়ার ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে বিবেচনায় নেয়া হয়। অনেক অ্যাজমা রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেয়া যায়। বুকে ধড়ফড় বেড়ে যায়। যে কারণে ওষুধ দেয়ার ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে। ওষুধের মাধ্যমেও রোগটির বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা হতে পারে। ইনহেলার, খাবারের বড়ি, নেবুলাইজার, ইনজেকশন দিতে পারি। সাধারণত দুই রকমের ওষুধ দেয়া হয়। এক ধরনের হলো উপশমকারী। এগুলো হলো রিলিভার করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে রিলিভ করা হয় বা লং টাইম রিলিভার। আরেকটা হলো প্রতিরোধক। অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে আপনার আর হবে না। প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা, অ্যালার্জি জাতীয় জিনিস এড়িয়ে চলা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পশুপাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, মশার কয়েল, সুগন্ধি ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান থেকে দূরে থাকা। অ্যাজমা রোগী ছাড়াও স্বাভাবিক মানুষদের এসব থেকে দূরে থাকা উচিত। কিছু মানুষের বংশগত অ্যাজমা থাকে, কিছু মানুষ পরিবেশগত কারণে অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। কিন্তু ধোঁয়া, ধুলাবালি সেগুলোতে অ্যাজমা না হোক অন্য কোনো রোগ হতে পারে। অ্যাজমা প্রতিরোধ করতে হলে এসব থেকে দূরে থাকা উচিত। এছাড়া যেসব খাবারে অ্যালার্জি আছে, সেসব খাবারও না খাওয়া উত্তম। ধুলাবালি থেকে বেঁচে থাকতে হলে মাস্ক পরিধান করতে হবে। বাইরের ধুলাবালি-ধোঁয়া থেকে রক্ষা পেতে আমাদের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। ঢাকা এখন সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর শহর। তাই অ্যাজমাসহ অন্যান্য রোগকে প্রতিরোধ করতে হলে মাস্ক পরিধান করতে হবে। 

বাংলাদেশে অ্যাজমা রোগীদের নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কেননা পরিবেশ দূষিত। দূষিত বায়ুর ফলে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শুধু ধুলাবালি-ধোঁয়ার জন্য বাড়ছে তা বলা যাবে না। বিভিন্ন প্রভাবক কারণ রয়েছে। করোনা মহামারীর সময় অ্যাজমা রোগী কম ছিল, কেননা সবাই মাস্ক পরিধান করত। অ্যাজমা নিয়ে হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে রোগী বাড়ছে। মানুষ আগে সাবধানতা অবলম্বন করলে, যত্ন নিলে অ্যাজমা রোগী কমে আসবে। ইনহেলার আবিষ্কারের আগে অ্যাজমার কারণে সারা বিশ্বে মানুষ মারা যেত। তবে এখন অ্যাজমা রোগ নির্ণয় করা যায়। যার কারণে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা এখন সহজ হয়ে গেছে। ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। অ্যাজমার ফলে রোগী বৃদ্ধি ও মৃত্যু কমে এসেছে। গর্ভকালে প্রসূতির অ্যাজমা হতে পারে। তবে ভয় পেলে চলবে না। নেবুলাইজার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। কিছু ওষুধ গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলার নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। এখন টিকা রয়েছে। টিকা বলতে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দেয়া হলে অ্যাজমার ঝুঁকি কমে যায়। 

এ রোগ প্রতিরোধের জন্য ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। ক্ষতিকর ওষুধ যেমন ব্যথানাশক ওষুধ বর্জন করতে হবে। ধুলা বা কালো ধোঁয়া, অ্যালার্জি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। অনেক প্রাণিজ ত্বক বা ছত্রাক অনেক ক্ষেত্রে মানবদেহে অ্যাজমা সৃষ্টির জন্য দায়ী। তেলাপোকার বিষ্ঠায় অ্যাজমা হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে বায়ুদূষণে। দূষণ কমাতে হবে। ওজন অ্যাজমার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেয়। স্থূল ব্যক্তির পেট বড় হওয়ায় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কেননা তার পেট বড় হওয়ার কারণে শ্বাস নেয়ার ক্ষেত্রে ফুসফুস পর্যাপ্ত পরিসরে প্রসারিত হয় না। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা লাগবে। অ্যালার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তাহলে আমরা এ রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব। 

লেখক: কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও

রেসপিরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫