বিজ্ঞান ক্লাব

বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে বিজ্ঞান ক্লাবের ভূমিকা

প্রকাশ: অক্টোবর ০৯, ২০২৩

মানবসভ্যতা আজ যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, তার মূল ভূমিকায় রয়েছে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর সব আবিষ্কার। বিজ্ঞানের কল্যাণে কৃষি ও শিল্পে ব্যাপক বিপ্লব ঘটেছে। দীর্ঘদিন থেকে মানুষ রোগ-ব্যাধির কাছে অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করছে। তার অনেকগুলো আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের নিয়ন্ত্রণে। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ সমুদ্রের তলদেশ কিংবা মহাবিশ্বের অসীমে চষে বেড়াচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ ও আরামদায়ক করে তুলছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যেতে না পারলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ব। 

অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, গণপরিবহন, টেলিযোগাযোগ, নারীদের ক্ষমতায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী এবং উদীয়মান রোগে বিজ্ঞান শিক্ষায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং অর্থনীতি গতিশীল করতে, জীবনের মান উন্নয়নে বিজ্ঞান শিক্ষার অবদান অনস্বীকার্য।

একটি দূরদর্শী জাতি তাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেন। এর জন্য তরুণদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তরুণরাই একটি জাতির মূল সস্পদ, তাদের মধ্যে আছে তীব্র অনুসন্ধিৎসা ও অদম্য কর্মস্পৃহা। আছে অদম্য প্রতিভা ও কর্মশক্তি। একটি জাতির ভবিষ্যৎ উন্নতি ও প্রগতি বহুলাংশে নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিশোর ও তরুণদের ওপর। এজন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানচর্চায় আত্মোৎসর্গীকৃত একদল তরুণ প্রজন্ম। 

দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং সমাজের তরুণরা বিভিন্ন বিজ্ঞান ক্লাব গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে আছেন এ দেশের কিছু বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি। ক্লাব বা সংগঠনগুলো আয়োজন করে আসছে অলিম্পিয়াড, ফেস্টিভ্যাল, ওয়ার্কশপ, কুইজসহ নানা প্রতিযোগিতা। 

বিদ্যাপীঠে পড়াশোনার পাশাপাশি সহপাঠ কার্যক্রম হিসেবে একটি বিজ্ঞান ক্লাব বড় ভূমিকা রাখতে পারে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে। ক্লাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং তাদের ক্লাবের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার সুযোগ প্রদান করে। সহযোগিতা করে নতুন ধারণা তৈরিতেও। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান মনোভাব ও গবেষণা ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং জাতির বিজ্ঞান ও অগ্রগতির দিকে গুরুত্বপূর্ণ যাত্রা শুরু করতে সাহায্য করে। গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের অন্যতম পাঠ শুরু হয় ক্লাবের নানা কার্যক্রমে।

শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মশালা এবং সেমিনারের মাধ্যমে একাডেমিক সহায়তা প্রদান, গবেষণা উদ্যোগকে উৎসাহিত করা, বিজ্ঞানের নব আবিষ্কারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া এবং গবেষণাভিত্তিক দক্ষতা ও সৃজনশীল চিন্তাচেতনা উন্নয়নের সুযোগ করে দেয় বিজ্ঞান ক্লাব বা সংগঠন। জনমনে বিজ্ঞানসংক্রান্ত ভুল ধারণাগুলোকে দূর করতে বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সর্বসাধারণের কাছে আরো সহজভাবে জনপ্রিয় করে তোলা যায় বিজ্ঞানকে। এতে বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে সামাজিক সচেতনতাও তৈরি হয়।

ক্লাবগুলোর আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থী, গবেষক এবং পেশাজীবীদের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করে। সমসাময়িক বিজ্ঞানের ট্রেন্ড ও ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানের ক্ষেত্র সম্পর্কে জানতে এবং সেভাবে নিজেদের প্রস্তুত করতে বড় ভূমিকা রাখে। প্রাতিষ্ঠানিক এবং জাতীয় উভয় ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষা এবং গবেষণাকে অগ্রসর করার জন্য জাতীয় নীতিমালা তৈরির পক্ষে কাজ করার ব্যাপারেও এসব সংগঠন অবদান রাখে।

অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম 

চেয়ারম্যান, গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫