চীন ও বাংলাদেশ: হৃদয় থেকে হৃদয়, ভবিষ্যতে

প্রকাশ: অক্টোবর ০১, ২০২৩

গত ৭৪ বছরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) বলিষ্ঠ নেতৃত্বে চীন যুগান্তকারী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করেছে আর সৃষ্টি করেছে দুটি বিস্ময়, বিশ্বের অন্য কোথাও যার জুড়ি মেলা ভার। যেমন দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক স্থিতিশীলতা। চীনা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সমাজতন্ত্রের পথ ধরে চীনা জনগণ কেবল তাদের মাতৃভূমিরই সুগভীর উন্নয়নমূলক পরিবর্তন সাধন করেনি, বরং বিশ্বকে একটি উন্নত স্থানে পরিণত করেছে। আধুনিকীকরণের চীনা পথের রয়েছে অতুলনীয় জীবনীশক্তি। সর্বক্ষেত্রে একটি মধ্যপন্থী সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের প্রথম শতবর্ষী লক্ষ্য অর্জনের পর, চীনা জনগণ এখন চীনকে সর্বক্ষেত্রে একটি মহান আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দ্বিতীয় শতবর্ষী লক্ষ্যের দিকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ব ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি প্রস্তরাকীর্ণ পুনরুদ্ধারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও চীনের অর্থনীতি নিজস্ব মাপদণ্ড সুরক্ষিত রেখে এবং নিজ গুণমানের উন্নতির মাধ্যমে কঠোর চাপের মুখেও টিকে আছে। এ বছরের প্রথমার্ধে চীনের জিডিপি ৫৯ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন আরএমবি ছাড়িয়েছে, যেখানে বছরে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত বছরের ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হারের চেয়ে বেশি এবং একই সময়ের মধ্যে অন্যান্য অনেক বড় উন্নত অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফের মতে, চীনের অর্থনীতি ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রসারিত হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতির মোট প্রবৃদ্ধির এক-তৃতীয়াংশ অবদান রাখবে। চীন দীর্ঘমেয়াদে একটি ঊর্ধ্বগামী গতিপথে থাকবে এবং বিশ্বব্যাপী পুনরুদ্ধারে আস্থা ও প্রেরণা জারি রেখে উচ্চমানের উন্নয়নের পথে অবিচলিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

দশ বছর আগে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মস্কো স্টেট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সে ভাষণ দেয়ার সময় একটি সমন্বিত ভবিষ্যতের এক বিশ্ব সম্প্রদায় গঠনের রূপকল্প উত্থাপন করেছিলেন। রূপকল্পটি চীনের কূটনীতি ও কার্যকলাপের বিভিন্ন দিকে নিহিত, যার মধ্যে রয়েছে শির প্রস্তাবিত গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ ও গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভকে এগিয়ে নেয়া এবং সেই সঙ্গে যৌথভাবে বেল্ট অ্যান্ড রোড নির্মাণ। গত এক দশকে রূপকল্পটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যক দেশ কর্তৃক ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও স্বীকৃত হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘসহ নেতৃস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দাপ্তরিক নথিপত্র দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে চীন গত এক দশকে অবিচলভাবে এ রূপকল্পকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে একটি পরিবেষ্টিত প্লাটফর্মে পরিণত করেছে, যা প্রবৃদ্ধি ও ঐক্য জোরদারে সমর্থন করে এবং একতরফাবাদ ও আধিপত্যবাদকে নিরুৎসাহিত করে ভারসাম্য বজায় রাখে। 

চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের ইতিহাস হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। ১৯৭৫ সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলো পারস্পরিক আস্থা এবং যৌথ উন্নয়ন দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়েছে, যা উভয় পক্ষের জন্য সমানভাবে লাভজনক সহযোগিতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করেছে। দুই জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসছে।

চীন ও বাংলাদেশ অবিচল পারস্পরিক আস্থা নিয়ে সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ২০১৬ সালে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত হয় এবং ২০১৯ সালে গভীরতর হয়। গত মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৈঠক করেন, যেখানে তারা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অধিকতর উন্নয়নের জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। চীন ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই নিজ নিজ মূল স্বার্থ ও উদ্বেগের বিষয়ে একে অন্যকে সমর্থন করে আসছে। চীন জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় এবং বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে, যাতে দেশটি অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে ‘এক চীন নীতি’ অনুসরণ করে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে চীন যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার প্রশংসা করে।

চীন ও বাংলাদেশ যৌথ উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ অংশীদার। এ বছর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের হাত ধরে বিআরআইর যাত্রার দশম বার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশই প্রথম বিআরআইতে যোগদান করে। গত সাত বছরে, বিআরআই সোনালি বঙ্গোপসাগরে শিকড় গেড়েছে এবং প্রস্ফুটিত হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু এবং এর রেল সংযোগ, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং আরো অনেক এরূপ প্রকল্পের ন্যায় মেগা প্রকল্পগুলো একের পর এক সম্পন্ন হয়েছে, যা বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়নে এবং অবকাঠামোগত অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিআরআইয়ের প্রশংসা করে বলেন যে এটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, দুই দেশের উচিত উন্নয়নের ঐতিহাসিক সুযোগগুলোকে কাজে লাগানো, উন্নয়ন কৌশলগুলোকে আরো একীভূত করা, উচ্চমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়া এবং একে অন্যের পরিপূরক ও সম্পূরক হিসেবে আমাদের নিজ নিজ অর্থনৈতিক সুবিধাগুলোকে কাজে লাগানো, বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, নতুন জ্বালানি ও কৃষি।

পরস্পরকে সমর্থনকারী চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে ভালো ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এ বছর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের প্রস্তাবিত চীন এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা, পারস্পরিক সুবিধা এবং অন্তর্ভুক্তির নীতিরও দশম বার্ষিকী। এক দশক ধরে চীন এ কূটনৈতিক নির্দেশিকা মেনে চলছে এবং সক্রিয়ভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এ বছর আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশী শিশু আলিফা চীনের (‘চায়না’-এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘চীন’ অনুসারে মেয়েটির নামকরণ) চিঠির উত্তর দিয়েছেন, তাকে কঠোর পড়াশোনা করতে, তার স্বপ্নগুলো অনুসরণ করতে এবং বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বকে চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উত্তরটিকে উভয় দেশে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে, যা দুই দেশের বন্ধুত্বকে নতুন ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং সমসাময়িক গুরুত্ব দিয়েছে। আলিফা চীনের গল্পের মতো আরো অনেক হৃদয়স্পর্শী গল্প রয়েছে, যা চীন ও বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে।

বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বেশি বেশি যোগাযোগের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে সৃষ্টি হয়। জনগণের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কে আরো জোরদার করতে চীন ও বাংলাদেশের নেতাদের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য। এ লক্ষ্যে চীন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং কর্মী বিনিময়ের বিশাল চাহিদা মেটাতে একাধিক সুবিধামূলক ব্যবস্থা চালু করেছে। আপাতত ঢাকা ও চীনের নির্দিষ্ট শহরগুলোর মধ্যে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ৫০টি সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে, যার মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের মধ্যে ১০ হাজার লোকের যাতায়াত সম্ভব। এ বছর বাংলাদেশস্থ চীনা দূতাবাস এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার, রাজনৈতিক দল, মিডিয়া, থিংক ট্যাংক এবং তরুণদের কয়েক ডজন প্রতিনিধির চীন সফরের ব্যবস্থা করেছে। বিনিয়োগ ও পর্যটনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসা চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ও চীনা নাগরিকদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

চীনের হাংঝুতে অনুষ্ঠিত ১৯তম এশিয়ান গেমসে এ মুহূর্তে বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদরা তাদের মাতৃভূমির গৌরব অর্জনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আমরা প্রতিযোগিতায় তাদের সফলতা কামনা করি এবং চাই বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হোক। এশিয়ান গেমসের প্রতিপাদ্য, ‘হৃদয় থেকে হৃদয়, ভবিষ্যতে’-এর মতোই যতদিন চীন এবং বাংলাদেশ হৃদয় থেকে হৃদয়ে এবং হাতে হাত রেখে হাঁটবে, আমরা অবশ্যই ভবিষ্যৎকে জয় করবো এবং জাতীয় পুনরুজ্জীবনের চীনা স্বপ্ন এবং সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবো। 

চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক!

বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্নের সেতু নির্মাণ করেছে সিআরইসি

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পথিকৃৎ ও অগ্রদূত হিসেবে, চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) নব্বইয়ের দশক থেকে সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের বাজার অন্বেষণ করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে। সিআরইসি বাংলাদেশে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে দুটি সবচেয়ে অত্যাবশ্যক অবকাঠামো ‘পদ্মা সেতু’ এবং এর ‘রেল সংযোগের’ ঠিকাদার। 

উপরের স্তরে চার লেনের সড়কপথ এবং নিম্ন স্তরে একটি সিঙ্গেল-ট্র্যাক রেলপথসংবলিত বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এবং দীর্ঘতম সড়ক রেল সেতু ‘পদ্মা সেতু’ দেশের পূর্ব ও পশ্চিম রেলওয়ে নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে, যার সুফল সরাসরি ভোগ করছে বাংলাদেশের আট কোটি মানুষ। ফলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং বার্ষিক ভিত্তিতে দারিদ্র্যের হার শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ হ্রাস পাবে।

কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়কে সংযুক্ত করতে সিসিসিসি

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে, চীনা সরকারের রেয়াতি ঋণ এবং চীনা প্রেফারেন্সিয়াল এক্সপোর্ট বায়ারস ক্রেডিট ঋণের ভিত্তিতে অর্থায়নে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোং লিমিটেড (সিসিসিসি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করে। এটি বাংলাদেশের প্রথম আন্ডারওয়াটার টানেল এবং কোন চীনা কোম্পানি কর্তৃক বিদেশে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ব্যবহারে নির্মিত প্রথম বৃহৎ ব্যাসের আন্ডারওয়াটার টানেল। প্রকল্পটির পরিচালনায় নকশা, সংগ্রহ ও নির্মাণ সাধারণ চুক্তি (ইপিসি) মডেল প্রয়োগ করা হয়েছে। টানেলটি ৯ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ, যার মধ্যে মূল অংশ ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার। এটি একটি দ্বিমুখী এবং চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে মডেলে চীনা মানদণ্ড বজায় রেখেছে, যার গতি প্রতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলে টানেলটি চট্টগ্রামের ট্রাফিক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।

ঢাকায় পানির অধিক পরিশোধনে পাওয়ার চায়না

চীনা সরকারের রেয়াতি ঋণের ভিত্তিতে অর্থায়নে নির্মিত দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্লান্টটি বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক বৃহৎ আকারের পয়োনিষ্কাশন শোধনাগার এবং এ ধরনের পয়ঃশোধনাগার হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম। প্লান্টটি উদ্বোধন করার সময়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় পানি ব্যবস্থার উন্নয়নে ও পরিবেশ সুরক্ষায় এর ভূমিকার বিষয়ে তার উচ্চ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না (পাওয়ারচায়না) এ প্লান্টটির ঠিকাদার, যা পরিচ্ছন্ন ও স্বল্প-কার্বন শক্তি, পানি সম্পদ, পরিবেশগত নির্মাণ এবং অবকাঠামোর জন্য বিনিয়োগ এবং অর্থায়ন, পরিকল্পনা নকশা, প্রকৌশল নির্মাণ, সরঞ্জাম উৎপাদন এবং পরিচালন ব্যবস্থাপনা প্রদান করে। সম্পূর্ণ শিল্প চেইনের সুবিধার সাথে, পাওয়ারচায়নার ১৩০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ব্যবসা রয়েছে এবং বছরের পর বছর শিল্প নেতৃস্থানীয় এবং উচ্চ মানের প্রকল্পগুলো সরবরাহ করেছে, আর এরই মাধ্যমে সারা বিশ্ব গ্রাহকদের কাছে বিশেষভাবে মূল্যায়িত হয়েছে।

ঢাকার যানজট নিরসনে এসডিএইচএস

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মোট ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা ২২টি প্রধান সরকারি বিভাগ (অফিস) এবং বাণিজ্যিক এলাকাকে সংযুক্ত করে। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করেন এবং এটিকে বাংলাদেশের পরিবহন অবকাঠামোয় একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে প্রশংসা করেন, যা যানজট নিরসন করবে এবং রাজধানী এলাকায় বৃহত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আনবে। 

শানডং হাই-স্পিড গ্রুপ কোং, লিমিটেড (এসডিএইচএস) প্রকল্পটির বিনিয়োগ, নির্মাণ এবং পরিচালনার সাথে সম্পূর্ণভাবে জড়িত। ভবিষ্যতে এসডিএইচএস সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অবদান রাখতে স্মার্ট পরিবহন এবং নতুন জ্বালানি দক্ষতার ব্যবহার চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সংযোগ স্থাপনে সিসিইসিসি

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন ডুয়াল গেজ সিঙ্গেল রেললাইনটি বাংলাদেশের ১০টি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের মধ্যে একটি। এটি ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট যা মিয়ানমারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে চীনের কুনমিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে। এ বছরের অক্টোবরের শেষ নাগাদ এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) পরপর ২৯ বছর ধরে একটি ইএনআর তালিকাভুক্ত শীর্ষ ২৫০ আন্তর্জাতিক ঠিকাদার, যা যৌথ উদ্যোগের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে একটি নির্বাচিত নেতৃস্থানীয় অংশীদার। সিসিইসিসি তার স্থানীয় সহায়ক সংস্থা সিসিইসিসি বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ড্রেজিং ও সামুদ্রিক কাজ, পরিবহন অবকাঠামো, পৌরসভা ও স্যানিটেশনের কাজ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত রয়েছে।

আরো স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে হুয়াওয়ে

বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশন লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হুয়াওয়ে নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে হুয়াওয়ে আইসিটি এবং টেলিযোগাযোগ পরিষেবা ও সমাধান, আইসিটি প্রতিভা বিকাশ, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ইকোসিস্টেমকে সক্ষম করা এবং স্মার্ট বাংলাদেশকে ত্বরান্বিত করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। ‘বাংলাদেশে, বাংলাদেশের জন্য’ শীর্ষক শপথ নিয়ে, হুয়াওয়ে সারা দেশে স্মার্ট ক্লাসরুম স্থাপনে গভীরভাবে নিযুক্ত রয়েছে। 

এরই মধ্যে হুয়াওয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’, ‘আইসিটি ইনকিউবেটর’, ‘উইমেন ইন টেক’, ‘ডিজি বাস’ এবং আইসিটি একাডেমি। সব প্রোগ্রামই বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য নির্দিষ্ট এবং উপযোগী প্রোগ্রাম, যা ১ লাখ ২০ হাজারেরও অধিক স্থানীয় তরুণ ছাত্রছাত্রীদের এতৎসংশ্লিষ্ট দক্ষতা অর্জন নিশ্চিত করেছে।

রাজশাহীকে আরো সতেজ ও সবুজ করে গড়ে তুলতে এইচসিইজি

চীনা প্রেফারেন্সিয়াল এক্সপোর্ট বায়ারস ক্রেডিট ঋণের ভিত্তিতে অর্থায়নে, রাজশাহী সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রকল্পটি ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় বিআরআইয়ের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসেবে নজর কাড়ে, যা বাংলাদেশের অপরিহার্য জীবিকা প্রকল্পের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। 

পরিকল্পনা অনুসারে, গোদাগাড়ীতে একটি ইনটেক, একটি প্রচলিত ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, শোধিত জলের ট্রান্সমিশন মেইন, একটি বুস্টার পাম্প স্টেশন এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিতরণ নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে একটি নতুন জল শোধনাগার তৈরি করা হবে।

রাজশাহী ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটি (ওয়াসা) এবং হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোং লিমিটেডের (এইচসিইজি) তত্ত্বাবধানে, প্রকল্পটি ২০২৩ সালের  জুলাইয়ে শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ হলে প্লান্টটি প্রতিদিন রাজশাহী শহর ও এর আশপাশের এলাকায় ২০০ মিলিয়ন লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করবে। আর এর মাধ্যমে কার্যকরভাবে গার্হস্থ্য ও শিল্প-কারখানার পানি সমস্যা সমাধান এবং স্থানীয় জনগণের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন সাধন করবে।

সামাজিক দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সিএইচইসি

একটি আন্তর্জাতিক শীর্ষ স্তরের প্রকৌশল ঠিকাদার, বিনিয়োগ অপারেটর, নগর উন্নয়নকারী এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপক হিসেবে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিএইচইসি) বন্দর, ভবন, রাস্তা, রেল, পরিবেশ সুরক্ষা, পাইপ নেটওয়ার্ক এবং সবুজ জ্বালানির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ শিল্প চেইন সুবিধা ভোগ করে। 

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে সিএইচইসি আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলারের টার্নওভারসহ ২০টিরও বেশি প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। বিআরআইয়ের অনুপ্রেরণায় সিএইচইসি গ্রাহকদের চাহিদা, কোম্পানির লাভ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। 

সামনের দিকে তাকিয়ে, সিএইচইসি  ব্যবসা স্থাপিত দেশগুলোর সঙ্গে বেড়ে উঠতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং মানব জাতির জন্য একটি সমন্বিত ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধ এক সম্প্রদায় গঠনে আরো অবদান রাখবে।

বাংলাদেশের নির্মাণকারীদের সজ্জিত করতে স্যানি গ্রুপ

১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত, স্যানি (এসএএনওয়াই)  গ্রুপ চীনের বৃহত্তম নির্মাণ যন্ত্রপাতি উদ্যোগে পরিণত হয়েছে, যা তিনটি তালিকাভুক্ত সংস্থাসহ বিশ্বজুড়ে ৬০ হাজারেরও বেশি কর্মচারী নিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের পর থেকে, স্যানি ২০১৪ সালে স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে পাওয়ার ভিশনের সাথে সহযোগিতা শুরু করে এবং ২০১৯ সালে তার নিজস্ব সহায়ক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। 

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় চীনা ব্র্যান্ড হিসেবে, স্যানি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান নির্মাণ যন্ত্রপাতি পণ্যের ব্যাপক বাজার শেয়ারের ৩০ শতাংশেরও বেশির অংশীদার, যা টানা আট বছর ধরে প্রথম স্থানে রয়েছে। স্যানির উপস্থাপিত সরঞ্জামগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে, বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩-এর মতো বিভিন্ন বিশিষ্ট মেগা প্রকল্প। 

বাংলাদেশ সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে, স্যানি অদূরভবিষ্যতে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের উন্নয়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে জড়িত হওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

আরো বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নিয়ে জিটিএইচএস

জিয়াংসু গুওতাই হুয়াশেং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোং লিমিটেড (জিটিএইচএস) বাংলাদেশ অফিস ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মতি স্থানীয়করণ, বৈচিত্র্য এবং বৈশ্বিকভাবে উভয় পক্ষের জন্য সমানভাবে লাভজনক নীতিসংবলিত সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিসহ জিটিএইচএস সফলভাবে উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করছে। আর এর রয়েছে স্থানীয় ৬০ জন কর্মকর্তাবিশিষ্ট একটি নিবেদিত দল। 

২০২২ সালে জিটিএইচএস বাংলাদেশে ১৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি চিত্তাকর্ষক বাণিজ্যের পরিমাণ অর্জন করেছে। সামনের দিকে তাকিয়ে, আগামী তিন বছরে বাংলাদেশে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা পাঁচ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এই পরিকল্পনা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি ও এই ভূমিতে বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ অংশীদারত্বের প্রতি জিটিএইচএসের অটল অঙ্গীকারকেই নির্দেশ করে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫