স্থূলতা বা ওবেসিটি স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। এটি শরীরের এমন এক বিশেষ অবস্থা যে অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হয় এবং ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। অল্প পরিশ্রমেই শরীরে ক্লান্তি দেখা দেয়। ফলে কাজের সক্ষমতাও কমে যায়। এমনকি দৈনন্দিন কাজেও নানা রকমের ব্যাঘাত ঘটে। ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফেডারেশনের গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০৩৫ সাল নাগাদ পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তরুণদের মধ্যে স্থূলতা বৃদ্ধির কারণ
স্থূলতার মূল কারণ তিনটি। অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রম না করা ও জিনগত ত্রুটি। বর্তমানে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে স্থূলতার হার বেশি দেখা যাচ্ছে। সাধারণত নিম্নোক্ত কারণগুলোর জন্য তরুণদের মধ্যে
স্থূলতার প্রবণতা বেড়ে যায়—
খাদ্য অব্যবস্থাপনা: অনিয়মিত, অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস স্থূলতার অন্যতম প্রধান কারণ। খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে তরুণদের ভেতর একধরনের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব থাকে। যথাসময়ে না খাওয়া, অতিরিক্ত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত কোমলপানীয় পান, ধূমপান, মদ্যপান কিংবা বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস স্থূলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
শারীরিক পরিশ্রম না করা: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। অনেক তরুণই শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকেন। নিয়মিত খেলাধুলা, শরীরচর্চা কিংবা দৈনন্দিন কায়িক পরিশ্রমের কাজ না করলে শরীর মুটিয়ে যেতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন: তারুণ্য মানেই যেন নিয়ন্ত্রণহীন উদ্দাম জীবন। এ নিয়ন্ত্রণহীনতা স্থূলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। ঠিকমতো না ঘুমানো, আবার কখনো কখনো টানা দীর্ঘ সময় ঘুমানো দৈহিক স্থূলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
অন্যান্য: এ বয়সে মানসিক দুশ্চিন্তা, ক্যারিয়ারের চাপ, পড়াশোনার চাপ প্রভৃতি কিছু জটিলতা স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে, যা শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
স্থূলতার কারণে হতে পারে যেসব রোগবালাই
শরীরের ওজন উচ্চতার চেয়ে বেড়ে গেলে সুস্থতা ও সৌন্দর্য দুটোই নষ্ট হয়। দেখা দেয় মানসিক ও শারীরিক নানা ধরনের রোগবালাই। কোনো কাজ সহজভাবে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। স্থূলতার কারণে হতে পারে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতাসহ নানা ধরনের রোগ। এছাড়া আরো যেসব রোগ দেখা দিতে পারে—
I উচ্চরক্তচাপ
I অ্যাজমা
I ক্যান্সার
I পিত্তে পাথর
I থাইরয়েড
I শ্বাসকষ্ট
I বন্ধ্যাত্ব
I ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা
I ফ্যাটি লিভার
I অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত
I পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
I ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা বা স্লিপ অ্যাপনিয়া
স্থূলতা দূরীকরণে তরুণদের সচেতনতা
আজকাল তরুণদের মধ্যে দেরিতে ঘুম থেকে উঠে সকাল ও দুপুরের খাবার একসঙ্গে খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যেটিকে তারা মজা করে ব্রাঞ্চ বলে থাকে। রাতের খাবার খাওয়ার পর প্রায় ১০ ঘণ্টার মতো আমাদের পেট খালি অবস্থায় থাকে। দীর্ঘদিন এ অভ্যাস চলমান থাকলে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। ফলে পরবর্তীকালে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে শুরু করে। তাই সকালের খাবারটা সকালেই খেয়ে নেয়া দরকার। রাত জাগার অভ্যাসটিও তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, যা মোটেও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়। স্থূলতা দূরীকরণে জিনগত ত্রুটি ছাড়া অন্যান্য কারণ চাইলেই এড়িয়ে চলা সম্ভব। স্থূলতার ঝুঁকি এড়াতে যা করতে পারেন—
I দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলা
I প্রচুর পানি পান করা
I পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা
I নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
I ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করা
I নিয়মিত শরীরচর্চা ও শারীরিক পরিশ্রম করা
I অলসভাবে শুয়ে-বসে জীবনযাপনের অভ্যাস ত্যাগ করা
I ফাস্টফুড বাদ দিয়ে ফলমূল ও শাকসবজিকে প্রাধান্য দেয়া
লেখক: কনসালট্যান্ট এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট;
ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, অন্যান্য হরমোন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ল্যাবএইড হাসপাতাল