শিক্ষাসফর

বছরজুড়ে চলে চুয়েট শিক্ষার্থীদের খনি ও গ্যাসক্ষেত্রে ভ্রমণ 

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩

নাজমুল হাসান

মাথায় হেলমেট, পায়ে সেফটি স্যু, দুরুদুরু বুকে হেঁটে চলা। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হলে রয়েছে মাটির নিচে চাপা পড়ার শঙ্কাও। এ রকমই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। গত ১৩ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দেয় ২২ শিক্ষার্থীর একটি দল, সঙ্গে ছিলেন তিন শিক্ষক। গন্তব্য দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় অবস্থিত কয়লার খনি। খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সামগ্রিক বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভের জন্যই এ সফর। খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া পাঠ্যবই থেকে জানেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এসবের মধ্যে কোন প্রক্রিয়াটি কোন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে তা খনিতে গিয়ে হাতেকলমে শেখা ও দেখা দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে তাদের।

সফরকারী দলের শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসেনের ভাষায়, ‘‌একটি ভূগর্ভস্থ খনির ছাদ কতটা শক্তিশালী অবস্থায় আছে, কীভাবে সেখানে নিরাপদে টানেল তৈরি করতে হয়, কী কী নিরাপত্তা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে খনিতে কাজ করতে হয়, এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। আর কয়লা কাটার জন্য যে এফসি মেশিন ব্যবহার করা হয় তা নিয়ে বই পড়ে বিষয়টি খুব একটা পরিষ্কার হতে পারিনি। নিজের চোখে এত বড় এফসি মেশিন দেখে বিষয়টি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।’ ১৫ জুলাই কয়লা খনি পরিদর্শন শেষে পরের দিন একই জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়ায় অবস্থিত দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ  গ্রানাইট পাথরের  খনিও পরিদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। এক বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ খনি থেকে পাথর উত্তোলনের নানা বিষয়ে খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করেন তারা।

শিক্ষার্থী সাজিদ বিন আলম বলেন, ‘‌খনিতে বড় বড় পাথরকে ড্রিলিং বা বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে ছোট আকারে পরিণত করে উত্তোলন উপযোগী করা হয়। খনিতে কর্মরত প্রকৌশলীরা এ কাজে ব্যবহৃত ব্লু প্রিন্টগুলো ভালো করে আমাদের বুঝিয়েছেন। পাশাপাশি খনিতে বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাথর ভাঙার ফলে সৃষ্ট ধোঁয়াকে বাইরে নিয়ে আসাসহ খনিতে কাজ করা লোকদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের আদান-প্রদান প্রভৃতি কাজে যে ভেন্টিলেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তা দেখেছি। কীভাবে খনি থেকে পাথর লিফটিং প্রক্রিয়ায় ওপরে তোলা হয় তাও দেখেছি। গত ৩ থেকে ৪ আগস্ট সিলেট গ্যাসক্ষেত্র এবং কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্র পরিদর্শন করেন এ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ২৭ জন শিক্ষার্থী। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের অংশ হিসেবে এ শিক্ষাসফর। কোর্সটিতে শিক্ষার্থীদের ড্রিল করে খনি থেকে বিভিন্ন পদার্থ উত্তোলন করার প্রক্রিয়া শেখানো হয়।

এ  বিষয়ে সফরকারী দলের শিক্ষার্থী তানমিলা তাবাসসুম বলেন,  ‘‌এ ফিল্ড ট্রিপটির মূল উদ্দেশ্য ছিল আমাদের বিভিন্ন ধরনের ড্রিলিং রিগ কম্পনেন্ট সম্বন্ধে জানানো এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা। আমরা জানতে পেরেছি  ড্রিল রিগের পাওয়ার সাপ্লাই প্রসেস, ড্রিল স্ট্রিংয়ের ফোর্স ট্রান্সফার কীভাবে হয়, ড্রিলিং ফ্লুইড পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কীভাবে সাহায্য করে, সেফটি প্রটোকলস, মাড সিস্টেম, ব্লো আউট প্রিভেন্টারের কাজ, পরিবেশে ড্রিলিংয়ের প্রভাব। অর্থাৎ বাস্তবে ড্রিলিং অপারেশন দেখতে পেয়েছি যা শিক্ষকরা আমাদের ক্লাসে পড়িয়েছিলেন।’ একই দিনে শিক্ষার্থীরা জাফলংয়ে বিভিন্ন ধরনের উন্মুক্ত শিলা, পাথরের কাঠামো পর্যবেক্ষণ এবং নানা ধরনের পাথর সংগ্রহ করেন।

ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন তারা কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) পরিচালিত কেটিএল-২-এর ওয়ার্কওভার অপারেশন পরিদর্শন করেন। সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের ১০নং কূপে অন্বেষণমূলক খনন চললেও এ কূপটি থেকে গ্যাস উত্তোলন হয়। কূপটি ভ্রমণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গ্যাসক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা এবং তার সমাধানের বাস্তব জ্ঞান লাভ করেন। শিক্ষার্থী অরিন্দম চক্রবর্তী বলেন, ‘কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্র ভ্রমণ ছিল আমাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা। কারণ সেখান থেকে শুধু খনিজ সম্পদ উত্তোলনই নয়, বরং শেষ হয়ে যাওয়া গ্যাসের মজুদকে কীভাবে প্রসেসিং করে পুনরায় উত্তোলনযোগ্য করা হয় সে ব্যাপারেও সম্যক ধারণা পেয়েছি। বিভিন্ন প্রসেস সফটওয়্যারের ব্যাপারেও জানতে পেরেছি, যা ভবিষ্যতে  আমাদের কর্মক্ষেত্রেও প্রয়োজন হবে।’

পিএমই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে ধারণা দিতে এবং পুঁথিগত বিদ্যার বাস্তবিক প্রয়োগ দেখাতে বিভিন্ন সময়ে আমরা শিক্ষাসফরের আয়োজন করি। আমাদের শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে শিক্ষাসফরগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫