বিশ্ববাণিজ্যে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে ভারতের প্রস্তাবিত করিডোর

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩

বণিক বার্তা ডেস্ক

সদ্য শেষ হওয়া জি২০ সম্মেলনে ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর (আইএমইসি) প্রস্তাব করে ভারত। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরই) বিকল্প হিসেবে প্রস্তাবটি এর মধ্যেই মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেছেন, আগামী দিনগুলোয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বন্দর ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে যাচ্ছে ভারতের প্রস্তাবিত এ চুক্তি। খবর খালিজ টাইমস।

বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক যোগাযোগের এ মহাপ্রকল্পকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী চিহ্নিত করেছেন পারস্পরিক সহযোগিতার পথনির্দেশিকা হিসেবে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে করেন, ইতিহাসের বাঁক বদলে দেবে নতুন চুক্তি। জিসিসি অঞ্চলের সহকারী সচিব আবদেল আজিজ আলুওয়াইশেগ বলেন, ‘‌উপসাগরীয় অঞ্চলের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে নতুন চুক্তির মাধ্যমে অঞ্চলটি এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকাকে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত করবে। জ্বালানি ব্যবসাকে তুলনামূলক সস্তা ও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে বাকি পৃথিবীর জন্য।’

ভারতের জন্য প্রস্তাবটি বাণিজ্যিক সংযুক্তির পাশাপাশি পরিবহনের দিক থেকেও ভূমিকা রাখবে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে দেশটির বৃহৎ জনগোষ্ঠী বসবাস করবে। ভারতীয় পণ্যের সম্ভাব্য বাজার রয়েছে সেখানে। মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে নতুন প্রস্তাব।

আন্তঃমহাদেশীয় করিডোরের লক্ষ্যই হলো ঐতিহাসিক বাণিজ্য পথের পুনরুদ্ধার। প্রাচীনকালে রেড সি রোড রোমান ও মিসরীয় সাম্রাজ্যকে সংযুক্ত করেছিল। সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত হয়েছিল ভারতের গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও কেরালা। করিডোর তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দেশই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আগে থেকেই ভারতের শীর্ষ বাণিজ্যিক মিত্রের তালিকায় রয়েছে। নতুন প্রস্তাবের আলোকে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো রফতানি বাড়াতে পারবে। বাড়বে বিদেশী বিনিয়োগ। 

তবে প্রকল্পের সফলতানির্ভর করবে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তার ওপর। পাশাপাশি দেশগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিপরীতে এটি একটা সম্ভাবনাময় প্রস্তাব। বিআরআই এর মধ্যেই নানা দিক থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছে। সেখানে আইএমইসি টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

বিআরআই ও আইএমইসির প্রস্তাবের মধ্যে কিছুটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বিআরআই অনেকটা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত হবে, যেখানে আইএমইসিতে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাই। বিআরআইতে চীনের স্বার্থ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, আইএমইসিতে সবার অঞ্চলের সবার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। বিআরআই কেবল চীনা কোম্পানিগুলোর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করত, যেখানে আইএমইসি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা রাখবে। বিআরআই কোনো জাতির সার্বভৌমত্ব নিয়ে চিন্তিত নয়, কিন্তু আইএমইসি প্রস্তাবিত হয়েছে সবার সার্বভৌমত্বের দিকে নজর রেখেই।

আইএমইসির কেবল দুটি অংশে কাজ করবে। পূর্ব দিকে ভারত থেকে আরব উপদ্বীপকে যুক্ত করবে আর উত্তর দিকে আরবকে যুক্ত করবে ইউরোপের সঙ্গে। এর মাধ্যমে সুলভে সমুদ্র ও রেল যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হবে। ওই অঞ্চলে পরিবহনের দিক থেকে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব সেখানে প্রধান বিনিয়োগকারী হিসেবে থাকবে। আইএমইসির লক্ষ্যমাত্রায় তিনটি প্রধান উপাদান। খাদ্য, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অর্থনীতি। সময় ও খরচ বাঁচানো ছাড়াও এটি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উন্নয়নে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখবে।

বিশ্বব্যাংকের দাবি অনুসারে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২৭৯ কিলোমিটার পণ্য পরিবহন পথ ছিল ২০২১ সালে, যা ১ হাজার ২০০ কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সব শহরকে সংযুক্ত করা হয়েছে। ইতিহাদ রেল জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের সক্ষমতা ছয় কোটি টনে বাড়ানো হবে। ভারতের জন্যও প্রস্তাব অর্থনৈতিক আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫