সানেমের সংলাপে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

শিল্পায়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করে রাজস্ব বাড়ানোর মনোভাব পরিহার করা উচিত

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন, ‘দেশে শিল্পায়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করে শুল্ক থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর মনোভাব পরিহার করা দরকার। রাজস্ব আয়ের মূল উৎস হওয়া উচিত ব্যক্তি খাতের আয়কর। প্রচুর কোটিপতির বিকাশ ঘটেছে, বিত্তবানদের দিকে নজর দেয়ার প্রয়োজন আছে।’ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের সংলাপে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল ‘টেকসই জ্বালানির উপায় অনুসন্ধান: মূল্যসাশ্রয়ী ও সবুজ বাজেট প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে সৌরযন্ত্রপাতির শুল্ক কমিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার বলে মত দেন প্রতিমন্ত্রী। প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যে কর থাকার কোনো দরকার নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা কোনো সংকটে নেই। ইতিহাসের একটি বাঁক বদলের পর্যায়ে আছি। ৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের সফলতার চিহ্ন বহন করে। কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমরা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছি। সেখানে আমাদের কোনো হাত নেই।’ 

বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে দেখা যায় উইন্ড মিলের অনেকগুলো পাখা বাঁকা হয়ে আছে। এসব পাখা কেন বাঁকা হলো? সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। হয়তো উইন্ড ম্যাপিং করা হয়নি। উইন্ড ম্যাপিং নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডিও ঠিকভাবে করা হয়নি। স্টাডি করার পর এখানে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।’ 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সক্ষমতা দ্বিগুণ রাখা হয়েছে। আমাদের দ্বিগুণের চেয়েও কম। তার পরও আমাদের ক্যাপাসিটি নিয়ে এত সমালোচনা হচ্ছে। কোনো কেন্দ্রে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলে অন্য রিজার্ভ কেন্দ্র দিয়ে আমাকে সাপোর্ট দিতে হবে। এখন৷ রিজার্ভ রাখার সমালোচনা করেন আবার লোডশেডিং হলে কটু কথাও বলেন।’ 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘শুধু সৌর নয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক উপায় আছে। এগুলো কাজে লাগাতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার চেয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি থাকতে পারে। এর বেশি হলে তা অতিরিক্ত।’ 

সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘জ্বালানি খাতে আমাদের সঠিক নেতৃত্ব প্রয়োজন। নেতৃত্বের জায়গাটা কতটুকু শক্তিশালী হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর উত্তর আমরা যত দ্রুত খুঁজে বের করতে পারব তত দ্রুত আমাদের সমস্যার সমাধান হবে। আমরা একটা ক্রান্তিকালে পড়েছি। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি। এজন্য সরকারের উদ্যোগগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন।’৷

সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘ভোক্তাদের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করতে পারছি কিনা সেটি যেমন নিশ্চিত করতে হবে, একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে সুলভ মূল্যে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারছি কিনা।’

সানেমের সিনিয়র গবেষণা সহযোগী ইশরাত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে দিনের জ্বালানি চাহিদা সোলারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারি। কিন্তু সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত আমরা তা ব্যবহার করতে পারছি না। ভূমি সমস্যা সোলার এনার্জির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা। উইন্ড এনার্জির জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সম্পদ খুব বেশি নেই।’ 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘জ্বালানি খাতে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে।৷ কিন্তু সরকার কোনোভাবেই মনে করে না, এ খাতে কোনো সমস্যা কাজ করে। সরকারকে এ নিয়ে সতর্ক হতে হবে। আগে আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল গ্যাস রফতানি ঠেকানো। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জ্বালানি আমদানির অভিঘাত থামানো।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ করা। তাদের হাতে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা নীতিমালা তৈরির দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর হাতে এ দায়িত্ব দিয়ে রাখা মানে ভোক্তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়া। নব্বইয়ের দশকের পর এ খাতকে যে করপোরেটাইজ করা, ব্যবসায়িক খাত বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়, তারপর নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব কোম্পানিগুলোর ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত হয়নি। কোম্পানিগুলোর ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষমতা যেহেতু পাওয়ার ডিভিশন নিয়েছে, সেজন্য তাদের আর এ কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট বোর্ডে রাখা যাবে না। তারা যে নিজেদের ট্যারিফ নির্ধারণ করে নিচ্ছে তার প্রমাণ গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি, বিতরণ কোম্পানি নিজেদের মার্জিন বাড়িয়ে দিয়েছে।’ 

জ্বালানি সম্পদ ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রফিকুল আলম বলেন, ‘জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে ৪৬টি গ্যাসকূপ খনন করা হবে। এজন্য বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।’ 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সচিব ব্যারিস্টার মো. খলিলুর রহমান খান, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শাহ আলম, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইকোনমিকস রিসার্চ ফোরামের পরিচালক অধ্যাপক ড. হেলাল আহমেদ প্রমুখ।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫