ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল

রোগীর আস্থা ধরে রাখতে যা করা দরকার সব করি

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩

ডা. এমএস জহিরুল হক চৌধুরী

অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি, ইউনিট প্রধান, নিউরোলজি বিভাগ, ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর, এক্সপানশন প্রজেক্ট, এনআইএনএস

বাংলাদেশের বড় বড় হাসপাতালে নিউরোসংক্রান্ত চিকিৎসা পাওয়া যায়, কিন্তু অর্গানাইজড ওয়েতে একটি স্পেশালাইজড হাসপাতাল বলতে বাংলাদেশে এটিই প্রথম। শিগগিরই হাজার শয্যার হাসপাতাল হতে যাচ্ছে এটি। ২০১৭ সালে সারা দেশে একটি সমীক্ষা করা হয়—তখন স্ট্রোকের রোগী ছিল ১৯ লাখ, এখন দিন দিন সংখ্যাটা বাড়ছে। ২০২১ সালের আগে প্রতি ছয়জনে একজনের স্ট্রোকের ঝুঁকি ছিল। এখন তা বেড়ে চারজনে একজনে দাঁড়িয়েছে। স্ট্রোক অনেক ভয়ংকর রোগ, এতে মৃত্যুহার অনেক বেশি। আমাদের এখানে ১০০ বেডের একটি বিশ্বমানের স্ট্রোক ইউনিট আছে।

স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীকে অ্যান্টিপ্লেজ চিকিৎসা দেয়া শুরু হওয়ার দুই বছরের মধ্যে আমরা প্রায় ৩০০ রোগীকে এ চিকিৎসা দিয়েছি। এ চিকিৎসায় সুস্থতার হার ৯৫ শতাংশ। আধুনিক বিশ্বে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যত ধরনের অপশন রয়েছে, সব এখানে রয়েছে। 

অনেকগুলো কারণে দেশে স্নায়ুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। আগেও এসব রোগে অনেক মানুষ আক্রান্ত হতো। কিন্তু তখন আমরা সচেতন ছিলাম না, ফলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতাম না। এখন পরীক্ষা করা হয় বলে এসব রোগী বেশি সামনে এসেছে। তাছাড়া আমাদের গড় আয়ুষ্কাল বেড়েছে। নিউরোলজির যেসব রোগ রয়েছে, যেমন ডিমেনশিয়া, পারকিনসন, আলঝেইমার বা স্ট্রোক। সাধারণত এগুলো মধ্যবয়সের পরে বেশি হয়। আগে এ বয়সে পৌঁছার আগেই বেশির ভাগ মানুষ মারা যেত। গড় আয়ু বাড়ার কারণে আমাদের মনে হচ্ছে এসব রোগ বেশি হচ্ছে।

তবে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। আমাদের প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো সচেতনতার অভাব। অনেকের মৃগীরোগ, ডিমেনশিয়া বা পারকিনসন ডিজিজ হয়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই জানে না এসব একেকটা রোগ। তারা কবিরাজি, ঝাড়ফুঁক করে। অথচ বাংলাদেশে এসবের চিকিৎসা সহজলভ্য এবং সেসবই অত্যাধুনিক। পারকিনসন রোগের একটি চিকিৎসা ডিপ ব্রেথ স্টিমুলেশন। সেটা দেশের বাইরে ৩০-৪০ লাখ টাকা দিয়ে করতে হয়, দেশে আমরা এ চিকিৎসা শুরু করেছি বিনা পয়সায়। প্রায় সাতজনের অপারেশন করা হয়েছে। আগে দেশে ইন্টারভেনশন ছিল না, সার্জিক্যাল অপারেশন ছিল না। এখন সেসব হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে।

মূলত দরিদ্র রোগীদের জন্যই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস গড়ে তোলা হয়েছে। আমাদের দেশে চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো অর্থনৈতিক। অনেক সময় রিকশাচালক ও গার্মেন্টস কর্মীরা আমাদের কাছে আসেন। তাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা অনেক। কিছু চিকিৎসায় সব ছাড় করেও হয়তো ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হয়, সেটা তাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হয় না। সেজন্য এসব চিকিৎসা আরো সহজলভ্য করা দরকার। কীভাবে গরিবদের আমরা সেবা দিতে পারি সেদিকে বেশি বেশি নজর দিতে হবে। 

মানুষকে সেবা দেয়াই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তাই সবসময় চেষ্টা করি হাসপাতালের গুণগত মান রক্ষার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার। যন্ত্রপাতি নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রাখি, অপারেশন থিয়েটার জীবাণুমুক্ত রাখি। অনেক হাসপাতালে মেশিন অকেজো পড়ে থাকে। ১০ বছরের বেশি হয়েছে, এ হাসপাতাল কখনো সিটি স্ক্যান বা এমআরআই মেশিন নষ্ট হয়নি। কারণ সেগুলো মেইনটেইন করা হয়। রোগীরা যেন আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারে সেজন্য যা যা করা দরকার, তার সব আমরা করি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫