স্বেচ্ছাসেবী

বঞ্চিত শিশুদের বদলে দিচ্ছে তরীর মুক্ত পাঠশালা

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩

মেহেদী মামুন

পড়ন্ত বিকাল মানেই শুধু আলোর শেষে অন্ধকারের যাত্রাই নয়। কখনো কারো কারো জীবনে শুরু হয় আলোর যাত্রাও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার সুবিধাবঞ্চিত ও শিক্ষার আলোবঞ্চিত শিশুদের জন্য দিনের শেষে পড়ন্ত বেলায় শিক্ষার আলো ছড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ‘‌তরী’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে খোলা আকাশের নিচে কাজটি করেন তারা। এতে একদিকে যেমন আনন্দ খুঁজে পান তরীর স্বেছাসেবীরা, অন্যদিকে গড়ে ওঠে হাজারো শিশুর ভবিষ্যৎ। 

স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল ছোট পরিসরে যাত্রা শুরু করে ‘‌তরী’। শুরুর দিকে চা-বাদাম বিক্রেতা পথশিশুদের থেকে তাদের বাদাম কিনে নিয়ে সেই সময়টা তাদের পড়ানো হতো। তবে বর্তমানে ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু, বাদাম বিক্রেতা, চা বিক্রেতা বা দরিদ্র রিকশাচালক সন্তানদের পাঠদান করা হয়। এছাড়া পাঠ্যপুস্তকের বাইরে সংগঠনটির নিজস্ব সিলেবাসও রয়েছে। সেখান থেকেও পাঠদান করা হয়। 

সপ্তাহে তিনদিন করে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টা চলে পাঠদান। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮০ হলেও নিয়মিত ৪০-৫০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু অংশ নেয়। এছাড়া বড় কোনো প্রোগ্রাম আয়োজন করলে শতাধিক শিশুকে পাওয়া যায়। সপ্তাহে তিনদিন ক্লাসের মধ্যে একদিন নাশতার ব্যবস্থাও রয়েছে।

পাঠদানের পাশাপাশি শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করার মতো কাজ করে সংগঠনটি। বর্তমানে ৩২ জন স্বেচ্ছাসেবী সদস্য রয়েছেন। নিয়মিত সাধারণ সভা আয়োজন করে সেখানে বাচ্চাদের তালিকা, তাদের পড়ানোর কৌশল, মান উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। স্বেচ্ছাসেবীদের উৎসাহদানের জন্য বেস্ট ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকেন তারা। এছাড়া কোনো ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তারা। মূলত সংগঠনের অ্যালামনাই থেকে পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ করা হয়। তহবিল সংকটে বেশকিছু কাজ থমকে আছে বলেও জানা গেছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে কাজের পরিসর আরো প্রসারিত করার প্রত্যাশা করেন সংগঠনটির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন রিফাত।

রিফাত বলেন, ‘‌শিশুরা ফুলের মতো। তাদের অকালে ঝরে পড়তে দেয়া যায় না। বিষয়টি খেয়াল রেখে আমরা এ সংগঠনকে ভবিষ্যতে আরো বৃহৎ পরিসরে সামনে এগিয়ে নিতে চাই। তবে এক্ষেত্রে ফান্ডের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও তরীর স্বেচ্ছাসেবক মেহেদী হাসান রিশাত বলেন, ‘‌শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে।’

তরীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘‌এটি একই সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সামাজিক আন্দোলন ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর মানবিক কার্যক্রম। আরেকটি বিষয় হলো বর্তমান যুবসমাজের ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার ঝোঁক থেকে মানবিক কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বানও বটে। আমি চাই এ ধারণা জাহাঙ্গীরনগরের সীমানা ছাড়িয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়ও ছড়িয়ে পড়ুক।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫