শারীরিক প্রতিবন্ধকতা

প্রতিবন্ধকতার শিকার শিক্ষার্থীর পাশে ডিআইইউ

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৩

ফিচার প্রতিবেদক

ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি অদম্য আগ্রহ ছিল মামুন অর রশিদের। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে গ্রামের রাস্তায় হামাগুঁড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। বন্ধুর গ্রাম্য রাস্তার পাশাপাশি চলার পথে প্রতিবেশীদেরও অনেকেই বিদ্রূপ করতেন, নিরুৎসাহিত করতেন। তবে কোনো কিছুই থামাতে পারেনি মামুনকে। সব বাধা অতিক্রম করে স্কুল, কলেজের পর জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েও। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চলতি বছর স্নাতক সম্পন্ন করেছেন এ অদম্য তরুণ। এখন অপেক্ষায় আছেন স্নাতকোত্তরের। একসময় যেসব প্রতিবেশী মামুনকে নিরুৎসাহিত করতেন তাদের সন্তানদের কাছেই মামুন এখন আত্মবিশ্বাসের এক উদাহরণের নাম।

মামুন জানান, ‘পরিবারের সহযোগিতার কারণে কখনোই মনে হয়নি আমার দ্বারা উচ্চশিক্ষা অসম্ভব। বিশেষত বড় ভাই সবসময় খুব বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। আর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতাও ছিল উল্লেখযোগ্য। শুরু থেকেই আমি ৪৫ শতাংশ স্কলারশিপ পেতাম। করোনার সময় পরিবারের আর্থিক সংকটের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়কে জানালে ৭০ শতাংশ স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এমনকি প্রশাসন যখন আমার স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে জানতে পারে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই একটা দোকানের ব্যবস্থা করে দেয়।

এখন পর্যন্ত মামুনের মতো আরো প্রায় ১০-এর অধিক ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে ডিআইইউ। এমনকি চাকরির ক্ষেত্রেও এসব শিক্ষার্থীকে গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। এমনই একজন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী কাউছার হামিদ। ড্যাফোডিল থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে স্নাতকের পর বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্সে কর্মরত কাউছার।

কাউছার বলেন, ছোটবেলা থেকেই বুঝতাম আমি যে সম্মানজনক জীবনের স্বপ্ন দেখি তা একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। এ কারণে পড়ালেখায় বেশ আগ্রহী ছিলাম। প্রতিবেশীরা অনেক সময় আমার মা’কে বলত আমাকে পড়ালেখা করিয়ে লাভ নেই। আমার পরিবার এসব কথায় গুরুত্ব দিত না। তবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে গিয়ে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় হুইলচেয়ারে যাতায়াতের সুব্যবস্থা নেই। আবার অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ভর্তি করতে রাজ হয়নি। এমন সময় ব্যতিক্রম আচরণ পাই ড্যাফোডিল থেকে। তারা ভর্তির পাশাপাশি স্কলারশিপেরও ব্যবস্থা করে। এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে যখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যোগ্যতা থাকার পরও শুধু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে নিয়োগ দিচ্ছিল না তখন ডিআইইউ আমার যোগ্যতার মূল্যায়ন করেছে। 

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘‌আমরা একটা সমতার পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি। সে লক্ষ্যেই ডিআইইউ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। শুধু স্কলারশিপ বা যাতায়াত সুবিধাই নয়, আমরা শিক্ষার্থীদের চাহিদার ওপর নির্ভর করে তাদের জন্য বিশেষ শিখন পদ্ধতিরও ব্যবস্থা করি। ভবিষ্যতে আমাদের ব্রেইল পদ্ধতির ব্যবস্থা করাসহ এ সুযোগ-সুবিধা আরো বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫