বিশ্লেষণ

হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশে আসা রেমিট্যান্স কি দেশের শুধু ক্ষতিই করে?

প্রকাশ: আগস্ট ৩১, ২০২৩

ড. মইনুল ইসলাম

২০২৩ সালের জুলাই নাগাদ বাংলাদেশের ১ কোটি ৪৯ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন ও কর্মরত রয়েছেন বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে জানিয়েছেন। তারা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার ফরমাল চ্যানেলে দেশে পরিবারের সদস্যদের কাছে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রায় অর্ধেক রেমিট্যান্স এখন হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশে আসছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সিংহভাগ রেমিট্যান্স প্রেরকরা হুন্ডি পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। অতএব, ২১-২২ বিলিয়ন ডলার যদি ফরমাল চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স আসে তাহলে কমপক্ষে আরো ২১-২২ বিলিয়ন ডলার বা তার চেয়েও বেশি রেমিট্যান্স (টাকার আকারে) হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশের অর্থনীতিতে ঢুকছে। দেশের বেশির ভাগ প্রবাসী হুন্ডি পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স প্রেরণ করায় প্রমাণিত হচ্ছে যে প্রবাসীদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হুন্ডি পদ্ধতির জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। এক্ষেত্রে শুধু দেশপ্রেমের ধুয়া তুলে তাদের এ ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে সহজে দমন করা যাবে না। ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য সরকার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান সত্ত্বেও প্রবাসীদের ফরমাল চ্যানেলগুলো ব্যবহারে যথেষ্ট উৎসাহিত করা যাচ্ছে না। ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অথচ দুই বছর ধরে প্রতি মাসে লক্ষাধিক বাংলাদেশী বিদেশে যাচ্ছেন বলে খবর দিয়েছে এ-সম্পর্কীয় সরকারি সংস্থা ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি)। অতএব, হুন্ডি পদ্ধতির সুবিধাগুলোকে হাইলাইট করা প্রয়োজন মনে করছি।

বহুদিন ধরেই আমি বলে চলেছি, হুন্ডি ব্যবস্থাকে কঠোরভাবে দমন না করলে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহকে বাড়ানো যাবে না। কারণ হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার দেশের ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের এ সত্যটা মেনে নেয়া উচিত। এর মানে, দেশের পরিবারের সদস্যদের কাছে রেমিট্যান্স প্রেরণেচ্ছু প্রবাসীদের অর্জিত এ বৈদেশিক মুদ্রাগুলো (প্রধানত ডলার) বিদেশের হুন্ডিওয়ালাদের এজেন্টের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এর প্রধান কারণ এখনো ডলারপ্রতি তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত ১০৯ টাকার চেয়ে ৫-৭ টাকা বেশি দাম পাচ্ছেন। ফলে তাদের পরিবারের সদস্যরা হুন্ডিওয়ালাদের এ দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে ওই বর্ধিত দামে প্রেরিত রেমিট্যান্সের সমপরিমাণ টাকা অতি দ্রুত পেয়ে যাচ্ছেন কোনো ঝুট-ঝামেলা ছাড়া। হুন্ডি পদ্ধতিতে কোনো কাগজপত্র স্বাক্ষর করার প্রয়োজন হয় না। হুন্ডিওয়ালাদের স্থানীয় এজেন্ট প্রায়ই রেমিট্যান্স প্রেরক এবং রেমিট্যান্স গ্রহীতাদের পূর্বপরিচিত থাকার কারণে এসব লেনদেনে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কাও তেমন থাকে না। আরো যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরের কেউ জানতেও পারে না যে পরিবারে রেমিট্যান্স এসেছে। টেলিফোনে খবর পেয়ে যথাস্থানে গিয়ে বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা পেয়েই রেমিট্যান্স গ্রহীতারা যথাসম্ভব দ্রুত তা নিকটবর্তী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে আমানত হিসেবে জমা করে দেন, তাই আগের দিনের মতো চোর-ডাকাত-মস্তানের আক্রমণের শিকার হতে হয় না পরিবারকে। যেহেতু বিশ্বস্ততাই হুন্ডি ব্যবসার সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তাই সাধারণত রেমিট্যান্সের টাকা মার যায় না, লেনদেনের গোপনীয়তাও রক্ষা করা হয় সযত্নে। ওপরে প্রবাসীদের জন্য হুন্ডি পদ্ধতির সাধারণ সুবিধাগুলোর যে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো তার সঙ্গে ফরমাল ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ কি পাল্লা দিতে পারবে?

হুন্ডি পদ্ধতিতে প্রেরিত অর্থ রেমিট্যান্স প্রেরকের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা যেহেতু পেয়ে যাচ্ছেন তা এ অর্থ প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে ব্যাপক অবদান রাখছে। ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রক্ষাকারী ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দেশে এখন ১ লাখ ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং এসব অ্যাকাউন্টের উল্লেখযোগ্য অংশই গ্রামীণ এলাকার ব্যাংক শাখাগুলোয়। বিবেচনা করুন, সারা দেশে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে প্রবাসীদের পরিবারের পাকা বাড়ি নির্মাণের যে হিড়িক চলেছে তার খরচের কত শতাংশ ফরমাল চ্যানেলে দেশে এসেছে? স্বীকার করতেই হবে, ফরমাল চ্যানেল বা হুন্ডি পদ্ধতি যেভাবেই রেমিট্যান্সের অর্থ অর্থনীতিতে প্রবাহিত হোক তার বহু ধরনের সুফল পাচ্ছে অর্থনীতি। হুন্ডি পদ্ধতিতে প্রেরিত রেমিট্যান্সের বৈদেশিক মুদ্রা (প্রধানত ডলার) যদিও দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য পুঁজি পাচারকারীরা অপব্যবহার করে চলেছে, তবুও এ বিষয়টি অর্থনীতির জন্য পুরোপুরি নেতিবাচক নয়। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ সত্ত্বেও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যে বড়সড় সংকটে পড়ছে না তার পেছনে ফরমাল চ্যানেলে এবং হুন্ডি পদ্ধতিতে প্রেরিত রেমিট্যান্স থেকে উদ্ভূত বিশাল আমানত প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এক অর্থে, এ বিপুল রেমিট্যান্সের অর্থ বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের একটা তাৎপর্যপূর্ণ বিকল্পের ভূমিকা পালন করছে। চীন ও ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ যে ভূমিকা পালন করেছে তার অনুরূপ ভূমিকা বাংলাদেশে পালন করছে ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স প্রবাহ। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হারের চমকপ্রদ উল্লম্ফনও ঘটাচ্ছে প্রবাসীদের ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের অনেক এলাকার গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতিতে যে বিপুল গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে প্রধান অবদান রেখে চলেছে এলাকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যাধিক্য। আমার মতে, হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হওয়া রেমিট্যান্স ও অন্যান্য ব্যবস্থায় দেশে নিয়ে আসা বিদেশে উপার্জিত আয়-উপার্জন ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাচ্ছে প্রতি বছর। (তার মানে, প্রবাসী বাংলাদেশীদের ফরমাল-ইনফরমাল চ্যানেলে মোট রেমিট্যান্স ও দেশে নিয়ে আসা বৈদেশিক মুদ্রার যোগফল ৪৫-৫০ বিলিয়ন ডলার)। দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ যারা বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ‘প্যারাডক্স’ আখ্যায়িত করে থাকেন, তাদের ত্রুটি হলো তারা বৈদেশিক অভিবাসনের গুরুত্বকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারছেন না। এত দুর্নীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকে তাদের কাছে আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হয়। ৪৫-৫০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ প্রতি বছর অর্থনীতিতে যুক্ত হওয়া কি সামান্য ব্যাপার? আমার মতে, তারা দেশের অর্থনীতিতে যোগ হওয়া এ বিপুল অর্থপ্রবাহের ইতিবাচক অভিঘাতকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করেন না বলেই বিষয়টিকে ‘আন্ডার-এস্টিমেট’ করছেন।

বাংলাদেশের অভিবাসীরা ফরমাল চ্যানেলে প্রতি বছর যে ২১-২২ বিলিয়ন ডলার অর্থ এবং হুন্ডির মতো অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে যে আরো ২০-২৫ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তা গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের দারিদ্র্য দ্রুত নিরসনের বড় কারণ এ রেমিট্যান্স প্রবাহ। রেমিট্যান্স প্রবাহের সুফলভোগী পরিবারগুলোর বর্ধিত ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে গ্রামীণ অর্থর্নীতিতে বড়সড় সমৃদ্ধির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘর পাকা হচ্ছে, অন্যান্য বসতঘরেরও মান বেড়েছে, ছেলেমেয়েরা ভালো স্কুল-কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, পরিবারের সদস্যদের আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সামর্থ্য বাড়ছে, শিশুমৃত্যুর হার কমছে, স্যানিটারি পায়খানার প্রচলন বাড়ছে, ঘরে ঘরে টিউবওয়েল বসে গেছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে এসেছে, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে, গ্রামে শপিং মল স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। গ্রামের রাস্তা-ঘাটেও আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। ফলে গ্রামীণ জনগণের মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত চার-পাঁচ কোটি মানুষ এখন নিম্ন-মধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত অবস্থানে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কৃষিতে উচ্চফলনশীল প্রযুক্তির প্রসার, সেচ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলন, গ্রামীণ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, আধুনিক স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণের পারঙ্গমতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ জনগণের খাদ্যের পুষ্টিমান বৃদ্ধি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে প্রবাসীদের উভয় ধরনের রেমিট্যান্সই বিপুল অবদান রাখছে।

এবার হুন্ডি পদ্ধতির প্রধান ক্ষতিকর দিকটি আলোচনা করা যাক। দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি আমদানির ওভার-ইনভয়েসিং, রফতানির আন্ডার ইনভয়েসিং এবং রফতানি আয় দেশে ফেরত না আনার পাশাপাশি এখন প্রবাসী বাংলাদেশীদের বহুল ব্যবহৃত হুন্ডি পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স প্রেরণের অভ্যাস বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীদের একটি সহজ বিকল্প উপহার দিয়েছে। যে ‘হুন্ডি ডলার’ (বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা) বিদেশেই রয়ে যাচ্ছে সেগুলোর চাহিদা জোগাচ্ছে প্রধানত দেশের দুর্নীতিবাজরা ও কালোটাকার মালিকরা এবং ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার ‘কালচার’ সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীরা। মার্জিনখোর রাজনীতিক বলুন, দুর্নীতিবাজ সিভিল আমলা-প্রকৌশলী বলুন, রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি বলুন, ডাকসাইটে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি বলুন—হুন্ডি ডলারের সহায়তায় ক্রমে গড়ে উঠছে প্রবাসীদের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপাতি, সিডনি-ফ্রেটারনিটি, টরন্টোর বেগমপাড়া কিংবা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমগুলো। পুরনো পদ্ধতিগুলোর পাশাপাশি হুন্ডি ব্যবসা পুঁজি পাচারকে বাংলাদেশের ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত করেছে। এ ক্রমবর্ধমান পুঁজি পাচারের কারণেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমহ্রাসমান। টাকার বৈদেশিক মানের ২৫ শতাংশ অবনমন, দেশে মারাত্মক ডলার সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতির তাণ্ডবও ঘটাচ্ছে প্রধানত হুন্ডি ব্যবসা। হুন্ডি পদ্ধতির সহায়তায় পুঁজি পাচারের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, লুটেরা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং ব্যাংক ঋণ গ্রহীতারা। যেহেতু এ পুঁজি পাচারকারীরা ব্যাংক ঋণ বিদেশে পাচারের জন্য হুন্ডি ব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে তাই হুন্ডি ডলারের দাম বাজারে প্রচলিত ডলারের চেয়ে ৭-৮ টাকা বেশি থেকেই যাবে। হুন্ডি ডলারের চাহিদা কাঠামোকে শক্তিশালী রেখে এ দুই দামের পার্থক্যকে দূর করা অসম্ভব। আমার আশঙ্কা, ২০২৩ সালের ১৮ জুন ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে ডলারের দামনির্ধারণ বাজারের কাছে ছেড়ে দেয়ার পরও হুন্ডি পদ্ধতিতে বিদেশে পুঁজি পাচারকে থামানো যাবে না।

হুন্ডি পদ্ধতিতে পুঁজি পাচার দমনে নিচের পদক্ষেপগুলো অপরিহার্য মনে করি। প্রথমত, অবিলম্বে দেশের এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হোক। বেশির ভাগ এক্সচেঞ্জ হাউজ হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত বলে আমাদের খবর রয়েছে। দ্বিতীয়ত, পুঁজি পাচারের প্রধান আট-দশটি গন্তব্যে তদন্ত টিম প্রেরণ কিংবা গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করে নিচের পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে গ্রহণ করতে হবে: ১) যেসব পুঁজি পাচারকারীর নাম তদন্তে উঠে আসবে তাদের বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানা এবং পরিচালনা বোর্ড থেকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে; ২) এসব পাচারকারীকে নতুন কোনো ব্যাংক ঋণ থেকে অবিলম্বে খারিজ করতে হবে; ৩) এদের কাছে যেসব ব্যাংক ঋণ খেলাপিঋণ হিসেবে বছরের পর বছর আটকে আছে সেগুলো আদায় করার জন্য অবিলম্বে ‘খেলাপি ঋণ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে; ৪) যেসব চাকরিরত আমলা, প্রকৌশলী ও কর্মকর্তার নাম-ঠিকানা পাচারকারী হিসেবে উদ্ঘাটন হবে তাদের বরখাস্ত করে তাদের চাকরি-পরবর্তী সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল করতে হবে; ৫) যেসব রাজনীতিবিদের নাম পাওয়া যাবে তারা যদি সরকারে ক্ষমতাসীন দলের কেউ হয় তাদের সব পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করতে হবে; ৬) যেসব রফতানিকারকের নাম উঠে আসবে তাদের নামে খেলাপিঋণ থাকলে সেগুলো আদায়ের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। উপরন্তু তারা তাদের রফতানি আয় নিয়মিতভাবে দেশে ফেরত আনছেন কিনা সেটা কঠোরভাবে পরীক্ষা করতে হবে এবং ৭) যেসব আমদানিকারকের নাম পাওয়া যাবে তারা ওভার ইনভয়েসিং করছেন কিনা তা কঠোরভাবে পরখ করতে হবে। তৃতীয়ত, দেশের শহরগুলোয় কিংবা গ্রামে যেখানেই প্রবাসীদের পরিবার পাকা বাড়ি নির্মাণ করবে তাদের বাড়ির নির্মাণ ব্যয়ের প্রয়োজনীয় অর্থ ফরমাল চ্যানেলে দেশে আনার ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যাংক স্টেটমেন্ট’ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে গৃহনির্মাণের পূর্বানুমতির জন্য জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা চালু করতে হবে।

ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫