নাট্য সংগঠন

থিয়েটার সাস্টের রজতজয়ন্তী উৎসব

প্রকাশ: আগস্ট ২১, ২০২৩

আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য

তারুণ্যের অফুরন্ত প্রাণশক্তি পুঁজি করে দীর্ঘ ২৫ বছরের পথ অতিক্রম করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নাট্যদল ‘‌থিয়েটার সাস্ট’। শিল্পের শক্তি ও অনন্ত উচ্ছ্বাস নিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ও"পঁচিশেও অনির্বাণ, নাটকের জয়গান" স্লোগান ধারণ করে থিয়েটার সাস্টে পালিত হয় রজতজয়ন্তী উৎসব ২০২৩। গত ২৭-৩০ জুলাই থিয়েটার সাস্টের রজতজয়ন্তী উৎসবে মুখরিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

সংগঠনটির রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যেই গ্রুপ থিয়েটারভিত্তিক নাট্যচর্চা শুরু হয় সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত তরুণের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে নাট্যসংগঠন ‘থিয়েটার সাস্ট’। ‘‌নাটক নির্মাণ করে যৌবন, নাটক আনবেই অবিনাশী প্লাবন’—এ স্লোগান সামনে রেখে কুসংস্কারমুক্ত সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে শুরু হয় সংগঠনটির পথচলা।

১৯৯৭ সালের ৮ ডিসেম্বর শাবিপ্রবির গোল চত্বরে উন্মুক্ত মঞ্চে ‘মড়া’ নাটক প্রদর্শনের মাধ্যমে জন্ম নেয় শাবিপ্রবির প্রথম এই গ্রুপ-থিয়েটারটি। সেই থেকে অদ্যাবধি গ্রুপ থিয়েটারের আদর্শে গতিশীল রয়েছে নাট্য সংগঠনটি। স্বীকৃতিস্বরূপ থিয়েটার সাস্ট ২০০৬ সালে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং ২০১১ সালে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেটের সদস্য পদ লাভ করে। থিয়েটার সাস্ট এ পর্যন্ত ৩৮টি নাটকের ১৩২টি সফল প্রদর্শনীসহ আটটি নাট্যোৎসব সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। নাটকগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো—মহাপুরুষ, হাসন রাজা, আজ কমণ্ডলের ফাঁসি, শেষের কবিতা, রক্তাক্ত প্রান্তর, বেধুয়া, সোনার হরিণ, এ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট, মাধব মালঞ্চী কইন্যা, জলতরঙ্গ ইত্যাদি। এছাড়া থিয়েটার সাস্টের মৌলিক নাটকের মধ্যে রয়েছে ওরা আসবে, ভোক, চোর, ভাস্কর্য, আত্মকথন, দেবী চৌধুরানী ও অন্যান্য।

পঁচিশে পদার্পণে থিয়েটার সাস্টে রয়েছে উৎসবের আমেজ। রজতজয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হিসেবে ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় শাবিপ্রবির সেন্ট্রাল অডিটোরিয়ামে প্রদর্শিত হয় দলটির মৌলিক প্রযোজনা নাটক ‘‌অভিনেতা’"। নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন অরিন্দম সাহা অমিত। পুরাণের সঙ্গে ভালোবাসার জটিল সমীকরণের সহাবস্থানের আখ্যান ও এর সাহসী রূপায়ণে বহুল প্রশংসিত হয় নাটকটি। ২৮ জুলাই ছিল থিয়েটার সাস্টের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। ক্লাবটির নতুন, প্রাক্তন, পুরনো সব সদস্যের পুনর্মিলনে মুখরিত হয় ক্যাম্পাস। আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয় দিনটি। ২৯ জুলাই প্রদর্শিত হয় আরণ্যক নাট্যদলের নাটক ‘কহে ফেসবুক’। বহুল জনপ্রিয় এ নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যকার মামুনুর রশীদ। এছাড়া নাটক প্রদর্শনীর আগে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় অংশ নিয়ে এবং নাট্যচর্চা, শিল্পবোধ ও জীবন নিয়ে মামুনুর রশীদের মূল্যবান বক্তব্য শুনে ঋদ্ধ হন উপস্থিত সবাই।

রজতজয়ন্তী উৎসবের শেষ দিন প্রদর্শনী হয় স্যামুয়েল বেকেট রচিত ও কবির চৌধুরীর অনুবাদে নাটক ‘‌হ্যাপি ডেজ’। নাটকটি ছিল মণিপুরী থিয়েটার ও হৃৎমঞ্চের যৌথ প্রযোজনা। নির্দেশনায় ছিলেন শুভাশিস সিনহা।

রজতজয়ন্তী উদযাপন প্রসঙ্গে ‌থিয়েটার সাস্টের বর্তমান সভাপতি মেহেদি হাসান মিঠু বলেন,"‘‌পঁচিশ বছরে থিয়েটার সাস্ট এখন টগবগে যুবক। যৌবন দায়িত্বের সময়। সুতরাং সামনের দিনগুলোয় কার্যক্রম ও প্রাণোচ্ছলতা আরো বাড়বে। কেবল পঁচিশ নয়, আরো বহুকাল ধরে নাট্যচর্চা ও মননশীলতা উন্নয়নে এ সংগঠন অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে এই প্রত্যাশাই রাখি।’ রজতজয়ন্তী জুড়েই ছিল নতুন ও প্রাক্তন সদস্যদের মিলনমেলা। কেবল থিয়েটার সাস্টের সদস্যরাই নয়, অনুষ্ঠানটি জুড়েই ছিল সাস্ট ও সিলেটের অন্যান্য নাট্যসংগঠনের নাট্যকর্মীদের ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। শিগগির আরো বড় পরিসরে কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি রেখে সমাপ্তি হয় অনুষ্ঠানটির।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫