অর্থনৈতিক অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তে জি২০-এর সমর্থন চাইলেন মোদি

প্রকাশ: আগস্ট ১৪, ২০২৩

বণিক বার্তা ডেস্ক

অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজসহ পলাতক সব অর্থনৈতিক অপরাধীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে জি২০ নেতাদের সমর্থন চেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কলকাতায় আয়োজিত শনিবার জি২০ দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির জোরালো বার্তা দেন। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ইকোসিস্টেম তৈরির জন্য ভারত সরকার প্রযুক্তি ও ই-গভর্ন্যান্সকে কাজে লাগাচ্ছে বলেও মোদি উল্লেখ করেন। 

নরেন্দ্র মোদি তার নিজের ভাষণে তুলে ধরেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেশ কয়েকটি উক্তি। তিনি বলেন, ‘কবিগুরু তার লেখায় আমাদের লোভের হাত থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। কারণ লোভ আমাদের সত্যের উপলব্ধি থেকে দূরে নিয়ে যায়। আর সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ লোভ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। দুর্নীতির এ প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে গরিব ও প্রান্তিক মানুষের ওপর। কেননা এটি বাজার ব্যবস্থাকে নষ্ট করে, পরিষেবাকে ব্যাহত করে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবনযাত্রার মানকে নামিয়ে আনে।’ 

এসব সমস্যা সমাধানে তার সরকার কাজ শুরু করেছে জানিয়ে মোদি বলেন, ‘লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিক সুবিধা পেতে শুরু করেছে। তারা তাদের অর্থ সরাসরি ব্যাংকে স্থানান্তর করতে পারছে, যার পরিমাণ ৩৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এতে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের অপচয় রোধ সম্ভব হয়েছে।’  

ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার অর্থনীতিসংক্রান্ত অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে এনে আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। ২০১৮ সালের ইকোনমিক অফেন্ডার্স অ্যাক্টের হাত ধরে দেশে আর্থিক দুর্নীতি ঘিরে নানা ধরপাকড় চলছে। এতে পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধীদের কাছ থেকে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ উদ্ধার হয়েছে।’ এছাড়া অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় তার সরকার ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে।

অর্থনৈতিক অপরাধীরা জি২০ জোটভুক্ত দেশ ও গ্লোবাল সাউথের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ বলেও উল্লেখ করেন ভারতের সরকারপ্রধান। জোটভুক্ত দেশগুলোয় পালিয়ে থাকা অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রস্তাব দিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘জি২০-এর সম্মিলিত প্রয়াস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের এ লড়াইকে অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়িয়ে এবং কড়া পদক্ষেপ নিয়ে দুর্নীতির মূলে আঘাত হানা সম্ভব। জি২০ মন্ত্রিপর্যায় এরই মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। ফলে যেসব অপরাধী দেশের সীমানা পেরিয়ে আইনের ফাঁকফোকরের সাহায্যে পালাতে চায়, তাদের আটকানো যাবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এতে সহযোগিতা করবে।’ এক্ষেত্রে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকাকেও যথাযথ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি। প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি মূল্যবোধ ও নৈতিকতার এক সংস্কৃতি গড়ে তোলারও আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘একমাত্র এভাবেই এক সুস্থিত ন্যায়পূর্ণ সমাজের ভিত্তি স্থাপন সম্ভব।’

এদিকে কলকাতায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে একদিন আগেই ভারতের সংসদে নতুন তিনটি বিল উত্থাপন করা হয়। তারই একটি ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ শীর্ষক বিল। এটি পাস হলে ১৮৬০ সালের ঔপনিবেশিক দণ্ডবিধি বা ভারতীয় পেনাল কোড বাতিল হবে। বিলটির প্রসঙ্গ টেনে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এ বিলে যে ধরনের প্রভিশন রাখা হয়েছে, তা অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি এবং এ-সংক্রান্ত অপরাধীদের বিদেশে থাকা অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্তের কাজ ত্বরান্বিত করবে।’ 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব হলো জনসাধারণের কল্যাণে দেশের সম্পদ বাড়ানো। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে দুর্নীতিকে দমন করতে হবে। আর সেজন্যই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা দেশের মানুষের প্রতি সরকারের পবিত্র কর্তব্য। ভারতে অবশ্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কঠোর নীতি রয়েছে। স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে প্রযুক্তি ও ই-গভর্ন্যান্সের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এতে বিভিন্ন সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্পের ছিদ্রগুলো বন্ধ করাও সম্ভব হয়েছে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫