মুখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য বাড়তি নজর দিতে হবে খাবারের দিকেও। কিছু খাবার আছে যেগুলো দাঁতের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কাজ করে আর কিছু খাবার দাঁতের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আপনি যখন কোনো চিনিযুক্ত খাবার খাচ্ছেন তখন তা যে শুধু আপনি খাচ্ছেন তা নয়, ব্যাকটেরিয়াকেও খাওয়াচ্ছেন। এ ব্যাকটেরিয়া থেকেই হতে পারে দাঁতে ক্ষয় বা মাড়ির রোগ। সুষম খাবারই পারে ভেতর থেকে আপনাকে সুস্থ রাখতে। সে কারণে মুখের জন্য উপকারী সুষম আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ফাইবারে ভরপুর ফল ও সবজি খেতে হবে। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে বলে জানিয়েছে আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (এডিএ)। বাড়িতে ঠিকঠাক যত্ন নেয়ার পর এটিই ক্যাভিটি এবং মাড়ির রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক প্রতিরোধ, এর কারণে লালা প্রবাহিত হয়। লালায় ক্যালসিয়াম ও ফসফেট থাকে। যা দিয়ে দাঁতের বিভিন্ন অংশে মিনারেল পুনর্বহাল হয় যা ব্যাকটেরিয়াল অ্যাসিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চিজ, দুধ, দই ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারও বেশ উপকারী। চিজ খেলেও লালা উৎপাদন হয়। দুধ, চিজ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফেট দিয়ে দাঁতে অন্যা খাবারের কারণে হারিয়ে যাওয়া মিনারেল নতুন করে যুক্ত হয়। এর মাধ্যমে দাঁতের এনামেলও পুনর্বহাল হয়। ক্যালসিয়াম দাঁত ও মাড়িকে মজবুত করে। দুধ, দই, পনির, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, সয়াবিন, শিমের বিচিতে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম।
গ্রিন টি ও রঙ চায়ে থাকে পলিফেনল, যা প্লাক ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে কাজ করে। এই উপকরণটি হয় ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে বা আটকে রাখে। এটি ব্যাকটেরিয়াকে বড় হতে বা অ্যাসিড তৈরি করা থেকে বিরত রাখে। যাতে করে দাঁত কিছুটা সুরক্ষা পায়।
চিনিমুক্ত চিউয়িং গামও বেশ কার্যকর। এর মাধ্যমেও মুখে লালা তৈরি হয় এবং মুখ থেকে খাবারের কণা পরিষ্কার হয়।
ফ্লুরাইডসমৃদ্ধ খাবার খেলেও বেশ উপকার পাবেন। ফ্লুরাইডসমৃদ্ধ পানি বা সেই পানি দিয়ে বানানো খাবার এক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা কিছু খাবারেও ফ্লুরাইড পাবেন যেমন পোলট্রি পণ্য, সামুদ্রিক খাবার, পাউডার সিরিয়ালে ফ্লুরাইড থাকে।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার মাড়ি থেকে রক্তপাত হওয়া কমাতে সাহায্য করে। আমলকী, পেয়ারা, লেবুজাতীয় ফল, মাল্টা, টমেটো, কাঁচামরিচে পাওয়া যায় ভিটামিন সি।
মূলত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ডি,–ই, জিংক, অ্যান্টি অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ভিটামিন বি১ জাতীয় খাবার দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আটা, ডিমের কুসুম, মাছ, চিনাবাদামে এ উপাদানটি পাওয়া যায়।
আয়োডিনযুক্ত খাবারও এখানে ভালো উপকারী। বাঁধাকপি, ফুলকপি, সামুদ্রিক মাছ ও আয়োডিনযুক্ত লবণ থেকে আয়োডিন পাওয়া যায়। মাতৃদুগ্ধ শিশুর মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সর্বোচ্চ মানসিক শারীরিক বিকাশসহ এলোমেলো দাঁত প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অন্যদিকে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার মুখের স্বাস্থ্যকে যেমন হুমকিতে ফেলে, তেমনি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস করে। ছোটবেলা থেকে চিনির প্রতি দুর্বলতা কমাতে শিশুদের উৎসাহিত করতে হবে। ধূমপান, জর্দা, গুল ও মদ স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। অতিরিক্ত টকজাতীয় খাবার যেমন- লেবু, তেঁতুল, ক্যান্ডি দাঁতের সংস্পর্শে যত কম রাখা যায়, ততই ভালো। কোমলপানীয় দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। আর যে খাবারগুলো দাঁতে লেগে যায় যেমন নরম পাউরুটি, সেগুলোও খেতে হবে বুঝেশুনে।