গ্রুপ স্টাডি

চিন্তার দীর্ঘসূত্রতা কমায় গ্রুপ স্টাডি

প্রকাশ: আগস্ট ০৭, ২০২৩

একত্রে অনেকে মিলে আলোচনায় যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্তে আসা যায়। গ্রুপ স্টাডি বা দলগত পাঠের সবচেয়ে বড় সুবিধা ও আনন্দ হলো কোনো বিষয়কে দেখার অনেকগুলো ফ্রেম তৈরি করে। খুব সহজাতভাবেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি করে, যা তাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অতীব জরুরি। বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেখে অভ্যস্ত যে শিক্ষকেরা একসঙ্গে হলেই নানা তত্ত্বালাপ জুড়ে দেন। শিক্ষার্থীরাও মাঝেমধ্যে যোগ দেন তাদের আলাপে। এভাবেই তত্ত্বালাপ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়াতে শুরু করে। শিক্ষকদের এ দলগত আলাপের অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে ও উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেরাও দলগত পাঠ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষার্থীদের দলগত পাঠের কিছু কৌশল নিয়ে আলাপ করা যাক।  

প্রথমত পাঠে আগ্রহীদের একত্র হতে হবে। যারা সত্যিকার অর্থেই পড়াশোনায় মনোযোগী এবং তাদের প্রডাক্টিভিটি বাড়াতে আগ্রহী। স্থান এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যে জায়গায় দলগত শিক্ষা কর্মসূচি চলবে, সেই জায়গাটি নাতিশীতোষ্ণ হওয়াই উত্তম। পরিবেশ ও আবহাওয়া বিপক্ষে চলে গেলে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ বেশ কষ্টসাধ্য। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে স্থান সংকুলানে অসুবিধা হলে খোলা মাঠ বা প্রকৃতির আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, দলগত পাঠচক্রে একজন শিক্ষক উপস্থিত থাকতে পারেন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসা, কৌতূহল এমনকি যেই বিষয়গুলো শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের পরও শিক্ষার্থীদের কাছে অস্পষ্ট রয়ে গেছে—সেগুলো সহজ করে আলোচনার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে শিক্ষক সহায়তা করতে পারেন। তৃতীয়ত, পাঠের বিষয় নির্ধারণ করতে হবে। সেই বিষয়ে খুব সাধারণ লেখাপড়া থাকা অনেকটাই আবশ্যিক। নতুবা সাঁতার না জেনে হুট করে পানিতে পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নির্ধারিত বিষয়ে কিছু প্রারম্ভিক জ্ঞান নিয়ে দলগত পাঠে আসা প্রয়োজন। আলোচনার বিষয়ে ফোকাসড থাকা দলগত পাঠের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করে যদি সেই বিষয়ের খেই হারিয়ে ফেলা হয়, তাহলে দলগত পাঠ তার উদ্দেশ্য হারায়। এমনকি দলগত পাঠের ধরন কেমন হবে সেটিও পূর্বনির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। 

চতুর্থত, শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত রাখবেন নির্ভয়ে। আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি চলতে পারে বিতর্ক। বিতর্কের মাধ্যমেই উঠে আসবে সমাধান। বইয়ের প্রতিটি বাক্যের মাঝে যে ফাঁকা স্থানগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে তারা ভাববেন, ভাবা শিখবেন। দলগত পাঠে পরস্পরের চিন্তাকে শ্রদ্ধা করা এবং সমালোচনা করলেও সেটি যেন গঠনমূলক এবং যুক্তিযুক্ত সমালোচনা হয়, তার একটি চর্চা হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের। এতে ভবিষ্যৎ জীবনেও বিভিন্ন মিটিং বা আলোচনার টেবিলে নিজেকে প্রকাশ করা তাদের জন্য সহজ হয়। 

টানা দীর্ঘক্ষণ ধরে দলগত পাঠ চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে একটি বিষয়ের আলোচনা শেষ হওয়ার পর কিছুক্ষণ বিরতি নিলে পরবর্তী সময়ে আবার নতুন উদ্যমে পাঠে মনোনিবেশ করা যায়। বিরতিতে একটু দম চর্চা (ব্রিদিং এক্সারসাইজ) কিংবা মেডিটেশন করে নেয়া যেতে পারে। পানি এবং হালকা খাবার খেয়ে নেয়া ভালো, তবে ভারী খাবার অনেকের ক্ষেত্রে মনোযোগের অসংগতি তৈরি করে। পাঠের শেষদিকে আলোচনার বিষয়বস্তুগুলোকে খুব সংক্ষেপে একবার ঝালাই করে নেয়া ভালো। তাতে মিটিং মিনিটসের মতো পাঠের বিষয়গুলোও কি-পয়েন্ট আকারে মনে রাখা সহজ হয়। 

দলগত পাঠের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সবাই একত্র হয়ে আলোচনা করায় চিন্তার দীর্ঘসূত্রতা কমে আসে। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বৃদ্ধি ও জ্ঞানের সম্মক ধারণা লাভে দলগত পাঠ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। প্রত্যেকের চিন্তা ও দর্শনের লেন্স ভিন্ন হওয়ায় সবার মতামতই চিন্তার খোরাক জোগায়। এমনকি সমস্যা সমাধানে ও চিন্তন প্রক্রিয়া সচল করার ক্ষেত্রে দলগত পাঠের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সর্বোপরি দলগত পাঠে একজন অন্যজনকে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করতে পারে কোনো কিছু অর্জনের জন্যে।

উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে এ দলগত পাঠের চর্চা হয়ে আসছে। শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে দলগত পাঠে অংশ নিচ্ছে। শিক্ষকরা রুটিন করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাদের লেখাপড়ার গতিকে এগিয়ে নিতে এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহের পারদ বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে দিচ্ছেন সময় ও শ্রম। 

ফারাহ্ বিনতে বশির 

প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫