‘‌ক্লাস শেষেই নির্ধারিত স্থানে জড়ো হই’

প্রকাশ: আগস্ট ০৭, ২০২৩

কেউ একজন ক্লাসের কোনো লেকচার মিস করে ফেলেছে। তখন হয়তো তার পক্ষে আলোচ্য বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে যে গ্যাপ তৈরি হয় সেটা মেটাতে তখন হিমশিম খেতে হয় এ শিক্ষার্থীকে। গ্রুপ স্টাডি এ চাপ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। কেননা আমি মিস করলেও আমাকে হেল্প করার মতো বন্ধুরা আছে যেটা আমি গ্রুপ স্টাডি থেকে শিখে নিতে পারব। অথবা ধরা যাক, ক্লাসের কোনো বিষয় আমি নিজে বুঝতে পারিনি। অথচ গ্রুপের কেউ না কেউ ঠিকই বুঝে নিয়েছে। অথবা কেউ একটু কম, কেউবা একটু বেশি বুঝতে পেরেছে। আমরা গ্রুপ স্টাডিতে এই বুঝে নেয়ার কম-বেশির ব্যাপারটা সাধারণীকরণ করতে পারি। 

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) আমরা যে পদ্ধতিতে পড়াশোনা করি, সেখানে গ্রুপ স্টাডির গুরুত্ব অনেক বেশি। ক্লাসের পড়ার অংশ হিসেবেই আমাদের প্রচুর পরিমাণে গ্রুপ স্টাডি করতে হয়। এক ক্লাসে আমরা প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করি। যদিও ভিন্ন ভিন্ন সেমিস্টারে ভিন্ন ভিন্ন কোর্স নেয়ার কারণে অনেকের সঙ্গেই একসঙ্গে ক্লাস চালিয়ে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তার পরও চার বছরের পথচলায় আমরা প্রত্যেক সহপাঠীকে একজন আরেকজনকে খুব ভালো করেই চিনি। আমরা পরস্পরের জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কেও জানি। সবার সঙ্গেই আমাদের একটা মধুর সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সুযোগ পেলেই একে অন্যের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। তবে সবার সঙ্গেই যে দলগত কাজ আনন্দদায়ক তেমনটা নয়। তাই এই চল্লিশ জনের ক্লাস থেকে আলাদা হয়ে আমরা চার-পাঁচজনের একটি ছোট গ্রুপ তৈরি করি। এ গ্রুপের সবার মন-মানসিকতাও খুব কাছাকাছি। আমাদের নিজেদের মধ্যে কোনো লুকোচুরি নেই। কে কেমন পড়াশোনা করছে, কার প্রস্তুতি কেমন, কে কতটুকু পিছিয়ে আছে, কার কতটুকু সহায়তা লাগবে ইত্যাকার বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা চলে। 

ক্লাস শেষে আরেকটি ক্লাসের মাঝে বেশকিছু সময় থাকে। এ সময়ে আমরা আমাদের মতো আলাদা হয়ে যাই। ক্যাম্পাসে আমরা আমাদের জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করে রেখেছি। ক্লাস শেষ হলে আমরা সবাই সেখানে একত্র হই। ইউল্যাব ক্যাম্পাস যারা ভিজিট করেছেন তারা জানেন, এই ক্যাম্পাসটি সবুজ আচ্ছাদিত একটি ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে এলেই মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। আমাদের গ্রুপ স্টাডির জন্য তাই কোনো ক্লাসরুম নয়, বরং খোলা জায়গায় প্রকৃতির মাঝে একটি বসার জায়গা ঠিক করে রেখেছি। গ্রুপ স্টাডি তাই কখনো আমাদের মাঝে ক্লান্তি কিংবা বিরক্তির উদ্রেক করে না।

আমার মতে, গ্রুপ স্টাডির মাধ্যমে শুধু পড়ালেখা, পরীক্ষার প্রস্তুতি বা জ্ঞানের বিকাশই নয়, মানসিক বিকাশ এমনকি সহযোগিতার মনমানসিকতাও বৃদ্ধি পায়। ক্লাসের কাজগুলো সহজেই করে ফেলা যায়। ‘‌দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’ এই প্রবাদ গ্রুপ স্টাডির সঙ্গে খুব যায়। এটি একটি সহযোগিতামূলক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দেয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা একে অন্যের সঙ্গে জ্ঞান ভাগ করে নিতে পারে। ধারণাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং সন্দেহগুলো পরিষ্কার করতে পারে, যা বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। গ্রুপ স্টাডি আমাদের শিক্ষা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে, যা আমাদের ক্যাম্পাস জীবনেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আব্দুল্লাহ সরোয়ার আলিফ

শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫