শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজ

পরিবারের ত্রাণকর্তা রাবি শিক্ষার্থী মাহমুদ

প্রকাশ: জুলাই ২৪, ২০২৩

সালমান শাকিল

একটি টিউশনের জন্য কতশত বড় ভাই, মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তার কোনো শেষ নেই। টিউশন জোগাড় করতে না পেরে ভেবেছিলাম পড়াশোনা হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তারা আমাকে সাপোর্ট দিতে পারছিলেন না। সময়টা ২০২১। তখন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। একটি সিদ্ধান্ত আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। বলছিলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান। 

মাহমুদুল ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে এ বিভাগে ভর্তি হন। অর্থনৈতিক টানাপড়েনে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষ থেকেই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল তার জীবন। তাই পড়াশোনার খরচ চালাতে করোনার মাঝেই সিদ্ধান্ত নেন অনলাইনে ল্যাপটপের ব্যবসা শুরু করবেন। হাতে কোনো পুঁজি নেই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে বড় বোনকে নমিনি করে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন মাহমুদুল। ঋণের টাকায় কেনা হয় দুটি সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ। শুরু করেন ব্যবসা। ব্যবসা শুরুর ১৫ দিনের মধ্যেই ল্যাপটপ দুটি বিক্রি হয়ে যায়। লাভের মুখ দেখেন মাহমুদুল। এখন নিজের পড়াশোনার ব্যয় মিটিয়ে পরিবারের খরচও বহন করেন তিনি। কাঁধে নিয়েছেন অসুস্থ ছোট ভাই ও আরেক ভাইয়ের পড়াশোনার দায়িত্বও। 

ফেসবুক মার্কেটপ্লেসসহ বিভিন্ন গ্রুপে ল্যাপটপের বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি শুরু হয়েছিল। এভাবে বিক্রি করতে করতে অনলাইনেই ১০০ ল্যাপটপ বিক্রি হয়ে যায়। এরপর ভাবতে থাকেন কীভাবে নিজ ক্যাম্পাসে একটি শোরুম দেয়া যায়। করোনা-পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে ফারাজি ল্যাপটপ মার্ট নামে একটি দোকান চালু করেন। ক্লাসের বাইরে নিয়মিত সময় দেন স্টেডিয়াম মার্কেটের ১১৭ নম্বর এ দোকানে। প্রথম দিকে অনেকেরই নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু কারো কথায় কান না দিয়ে নিজের মনের কথা শুনেছেন তিনি। কারণ তার আয়ের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল পরিবারের হাসিখুশি।

এখন ক্যাম্পাসের দোকান থেকে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি ল্যাপটপ বিক্রি হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, শিক্ষক তার মূল ক্রেতা। ক্যাম্পাসে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ল্যাপটপ বিক্রি করেছেন। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও অনেকে ল্যাপটপ কেনেন। সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের ল্যাপটপ পেয়ে খুশি ক্রেতারাও।   

মাহমুদুল বলেন, ‘‌আমি মনে করি, ৫০ হাজার টাকায় কেনা দুটি ল্যাপটপ যদি বাবা-মা হয় তাহলে আমার দোকান হচ্ছে তাদের সন্তান। সৎভাবে ব্যবসা করে একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা হতে চাই। পরিবারকে সাপোর্ট দিয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করে ভবিষ্যতে একজন আমদানিকারক হওয়ার স্বপ্ন দেখি।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫