থাইরয়েড

হতে পারে নানা রোগ

প্রকাশ: জুলাই ১৭, ২০২৩

ডা. মারুফা মোস্তারী

থাইরয়েডের সমস্যা এক জটিলতর সমস্যা। থাইরয়েড গ্রন্থিতে কোনো সমন্বয়হীনতা দেখা দিলে দেহের অন্যান্য অঙ্গে এর প্রভাব পড়ে। থাইরক্সিন হরমোন নিঃসরণে হেরফের হলে দুটি বড় ধরনের রোগ তৈরি হয়। এ হরমোন কম নিঃসরণ হলে হাইপোথাইরয়েডিজম এবং বেশি হলে হাইপারথাইরয়েডিজম দেখা দেয়। এ দুটি রোগের বাইরেও থাইরয়েডের কারণে নানা রকম সমস্যা হতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যার কারণে মূলত যে রোগগুলো হয়ে থাকে:

হাইপোথাইরয়েডিজম: এক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থির কর্মক্ষমতা কমে যায়। তখন প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণে থাইরক্সিন হরমোন তৈরি হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার গোলমালের কারণে থাইরয়েড গ্রন্থির কোষ বিনষ্ট হলে এমনটি হয়। এছাড়া অন্যান্য কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অস্ত্রোপচার বা সংক্রমণের কারণেও এটি হতে পারে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি। এতে আক্রান্ত হলে রোগীর ত্বক ও চুল শুষ্ক-খসখসে হয়ে যায়। ওজন বেড়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। মানসিক অবসাদ, শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ হয়। হৃৎস্পন্দনের গতি কমে যেতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকে অনিয়ম হয়ে থাকে এবং বন্ধ্যাত্বও দেখা দিতে পারে। 

হাইপারথাইরয়েডিজম: এটি হাইপোথাইরয়েডিজমের ঠিক বিপরীত অবস্থা। থাইরক্সিন হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণের ফলে এটি হয়। একে গ্রেভ’স ডিজিজও বলা হয়। এটিও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়। এছাড়া থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের প্রদাহ বা অতিরিক্ত আয়োডিন খাওয়ার ফলেও হাইপারথাইরয়েডিজম হতে পারে। এতে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায় এবং হাত-পায়ের নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়। ওজন কমে যায় কিন্তু ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। ঘন ঘন মলত্যাগের দরকার হয়। নিদ্রাহীনতা তৈরি হয়। হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে যায়। এতে রোগীর চোখ ফুলে বড় হয়ে যেতে পারে। 

থাইরয়েডাইটিস: থাইরয়েড গ্রন্থিতে প্রদাহ হলে তাকে থাইরয়েডাইটিস বলে। এতে থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায়। এটি মূলত থাইরয়েডের একাধিক সমস্যার সমন্বিত রূপ। রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রায় ঝামেলা হলে, অর্থাৎ হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বেশি বা কম যেকোনোটি হলে এ রোগটি হতে পারে। কিছু থাইরয়েডাইটিস সাময়িক, দ্রুতই ভালো হয়ে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে রোগটি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। সবচেয়ে পরিচিত থাইরয়েডাইটিস হচ্ছে হাশিমোটোথাইরয়েডাইটিস। এটি দীর্ঘস্থায়ী লিম্ফোসাইটিক থাইরয়েডাইটিস। এতে হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। যেকোনো বয়সেই রোগটি হতে পারে। তবে মধ্যবয়সী নারীদের এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এতে আক্রান্ত রোগী কোষ্ঠকাঠিন্য, হালকা ওজন বৃদ্ধি, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পারা, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়ার মতো নানাবিধ সমস্যায় ভুগতে পারেন। 

গলগণ্ড: এ রোগটি আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। এতে থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায় বা বড় হয়ে যায় এবং বাইরে থেকেই তা দেখা যায়। মূলত আয়োডিনের ঘাটতি দেখা দিলে এটি হয়। এছাড়া হাশিমোটোথাইরয়েডাইটিস এবং হরমোনের আধিক্যের কারণে সৃষ্ট গ্রেভ’স ডিজিজের কারণেও এটি হয়ে থাকে। 

থাইরয়েড ক্যান্সার: থাইরয়েড গ্রন্থির কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে থাইরয়েড ক্যান্সার হয়। এতে গলার সামনের অংশ ফুলে যায় এবং ফোলা জায়গাটি শক্ত হয়ে যায়। আশপাশের লিম্ফনোডগুলোও ফুলে যেতে পারে।  ঘাড়ে ও গলায় ব্যথা হয়। শাসকষ্ট এবং ঢোঁক গিলতে কষ্ট হয়। কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হতে পারে। গলগণ্ড বা গয়টারের সঙ্গে থাইরয়েড ক্যান্সারকে অনেকে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। মনে রাখবেন, গলগণ্ড বা গয়টার খুবই নিরীহ ধরনের রোগ। এতে রোগীর তেমন কোনো সমস্যা হয় না বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো জটিলতা হয় না। কিন্তু থাইরয়েড ক্যান্সার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই থাইরয়েড গ্রন্থিতে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া দরকার যে থাইরয়েড ফুলে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়েছে কিনা। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করলে এটি সহজেই ভালো হয়ে যায়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় 

ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হরমোন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫