কোলনস্কোপি

চল্লিশ পেরোলেই কোলনস্কোপি করা দরকার

প্রকাশ: জুলাই ১০, ২০২৩

ডা. মো. নূরুজ্জামান

ক্যান্সার একটি মারাত্মক ব্যাধি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুই যার পরিণাম। মানবদেহের যেকোনো অংশেই ক্যান্সার হতে পারে। পুরো পৃথিবীতে শীর্ষ সাতটি ক্যান্সারের মধ্যে চারটিই পরিপাকতন্ত্রের। এর মধ্যে কোলন ও রেকটাম (মলাশয়) ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

পৃথিবীতে কোলন ও রেকটাম ক্যান্সারে আক্রান্তের শতকরা হার ১০ শতাংশ, যা সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে তৃতীয়। বাংলাদেশে এ হার সাড়ে ৬ শতাংশ এবং এখানে রোগটির অবস্থান চতুর্থ। প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ মানুষ নতুন করে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার মানুষ কোলন ক্যান্সারে মারা যায়।

কোলন ও রেকটাম ক্যান্সারের কিছু সাধারণ ঝুঁকি রয়েছে। সেগুলো হলো ধূমপান, পরিমাণে কম শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ, মদ্যপান, স্থূলতা বা ওজন বেশি, কায়িক পরিশ্রমে অনীহা। 

এছাড়া কিছু সুনির্দিষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। সেগুলো হলো বয়স চল্লিশ বা তার বেশি, নিজে অথবা পরিবারের সদস্যদের কোলন ক্যান্সার ও কোলনিক পলিপে আক্রান্ত হওয়ার অতীত ইতিহাস, বংশানুক্রমিকভাবে কোলনিক পলিপে আক্রান্ত হওয়া, ইনফ্লামেটরি ভাওয়েল ডিজিজেজ যেমন ক্রনস বা আলসারেটিভ কোলাইটিস।

প্রাথমিকভাবে কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন, কারণ শুরুতে রোগটির তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। কোলন বা মলাশয়ের কোন জায়গায় ক্যান্সার রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে উপসর্গের ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন পায়খানার সঙ্গে টাটকা রক্ত যাওয়া বা কালো পায়খানা হওয়া, মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন (কখনো ডায়রিয়া,  কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য), রক্তশূন্যতা, খাবারে অরুচি ও ওজন কমে যাওয়া, পেটে ব্যথা, পেটে চাকা ইত্যাদি।

কোলন ও রেকটাম ক্যান্সার নির্ণয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আধুনিক পরীক্ষা হচ্ছে কোলনস্কোপি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোলনিক পলিপ বিবর্তনের মাধ্যমে ৭-১০ বছরের মধ্যে কোলন ক্যান্সারে পরিণত হয়। তাই বয়স চল্লিশ হলেই কোলনস্কোপি করে নিশ্চিত হতে হবে কোলনে কোনো পলিপ বা টিউমার আছে কিনা। যদি না থাকে তবে প্রতি ৫-১০ বছর পরপর পরীক্ষাটি করতে হবে। যদি কোনো পলিপ পাওয়া যায় তবে সেটি অপসারণ করতে হবে এবং টিস্যু পরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে ক্যান্সারের কোনো ঝুঁকি আছে কিনা।

কোলনস্কোপি: কোলন ও রেকটাম ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নির্ণয়ের সবচেয়ে আধুনিকতম পরীক্ষা হচ্ছে কোলনস্কোপি। এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি চিকিৎসাও করা যায়। ভিডিও কোলনস্কোপিতে একটি নলজাতীয় যন্ত্রের মাধ্যমে পায়ুপথ দিয়ে কোলন ও রেকটাম সরাসরি দেখা যায়। পরীক্ষাটি অত্যন্ত নিরাপদ এবং খরচও নাগালের মধ্যে। চেতনানাশক প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষাটি সম্পন্ন করলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে চেতন অবস্থায় থাকলে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি লাগতে পারে। খুব অল্প ক্ষেত্রেই পেটের নাড়ি ছিদ্র বা রক্তপাতের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

কোলনস্কোপি কখন করবেন তারও কিছু নির্দেশনা রয়েছে। বয়স চল্লিশ বা তার বেশি হলেই, পায়ুপথে টাটকা রক্ত গেলে বা কালো পায়খানা হলে, রক্তশূন্যতা দেখা দিলে, মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন (কখনো ডায়রিয়া, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য) হলে, খাবারে অরুচি ও ওজন কমে গেলে, পেটে চাকা দেখা দিলে, দীর্ঘমেয়াদি পাতলা পায়খানা হলে কোলনস্কোপি করতে হবে।

বাংলাদেশের অনেক জায়গায় পরীক্ষাটি হয়ে থাকে, সাধারণত পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা (গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট) এ পরীক্ষা করেন। ওপরের উপসর্গগুলো দেখা দিলে অথবা বয়স চল্লিশ হলে অবশ্যই কোলনস্কোপি করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোলন ও মলাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য। তাই সময়মতো কোলন স্ক্রিনিং করে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে কিনা।

লেখক: পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫