ক্যাম্পাসে ভ্লগিং

যেভাবে হলেন ‘‌বুয়েটের ভাইয়া’

প্রকাশ: জুলাই ১০, ২০২৩

সিফাত রাব্বানী

প্রতিযোগিতার যুগে মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে কত কিছুই করে। বেশির ভাগই খুঁজে নেয় সস্তা বিনোদনকে। এক্ষেত্রে ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন ‘‌বুয়েটের ভাইয়া’ হিসেবে পরিচিত মোমেন তাজোয়ার মমিত। পড়ছেন বুয়েটের ধাতু ও বস্তু কৌশল বিভাগে। ক্যাম্পাসের ২০১৮-১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী। শুরু করেছেন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় নানামুখী টিপস বিষয়ক কনটেন্ট তৈরির কাজ। 

মোমেন তাজোয়ার যখন শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করেন তখন তাকে সবাই বলতেন তাকে নাকি ইউটিউবার মনে হয়। তার ধারণা তার আচরণগত কারণে, উপস্থাপনার দক্ষতার কারণেই এমনটা বলেছিল। সেখান থেকে তার মনে হয়েছিল নতুন কিছু করার। এরপর পরিকল্পনা, টাকা জমানো, ভিডিও তৈরির সরঞ্জাম সবকিছুর ব্যবস্থাপনায় চলে গেল ছয় মাস। শুরুটা করতেন অনেক জোরালোভাবে। অভিজ্ঞতা হিসেবে জানালেন তিনি পড়াশোনায় ভালো, ১৫ হাজারের ওপর শিক্ষার্থী পড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সমস্যা বুঝে নিতে পারেন অল্প সময়ে। যে কারণে তার জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে কনটেন্ট বানানো সহজ মনে হয়েছে। 

কেন এ বিষয়বস্তু কনটেন্ট বানানোর জন্য বেছে নিলেন জানতে চাইলে বলেন, তিনটি কারণ রয়েছে এর পেছনে। প্রথমত, তার বড় একটি অভিজ্ঞতা রয়েছে শিক্ষার্থী পড়ানোর ক্ষেত্রে। দ্বিতীয়ত, তিনি চাইলেই বিনোদনমূলক কিছু বানাতে পারতেন, কিন্তু একটা সময় শ্রোতার সংখ্যা তেমন বাড়ে না। পরিশেষে তিনি উপলব্ধি করেছেন যে সবাই শুধু মজা করার ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষার প্রসার লাভে এ খাতে খুব কম মানুষই এ রকম কনটেন্ট তৈরি করে। তাই এদিকে তিনি তার নৌকা ঘোরালেন। তার তৈরি সবকিছুই শিক্ষার্থীদের ঘিরে, সপ্তম শ্রেণী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। মাঝেমধ্যে অভিভাবককে সচেতনতার জন্যও কিছু ভিডিও আপলোড করেন।

এ উদ্যোগের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে তাকে অনেক মানুষ নিয়মিত বার্তা দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে আসছেন। তাই তার মনে হয়েছে বেশ ভালোই কাজে আসছে। ‘ভাইয়া আপনার মতো কেউ সহজভাবে সত্য কথাগুলো তুলে ধরে না। আমি যে হতাশার লড়াইয়ে একা নই এটা আমাকে সাহস দিয়েছে’— এমনই ছিল একজনের খুদে বার্তা। বুয়েটের ছাত্র হওয়ায় তার উদ্দেশ্য শুধু বুয়েটকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা নয়। ইচ্ছা কিছুদিন পরই এমন একটি ভিডিও বানাবেন যেখানে বুয়েটে কী কী সমস্যা আছে তা উঠে আসবে। সত্য তুলে ধরতে চান। কিন্তু হ্যাঁ, বুয়েটের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা কম, তাদের জানাবেন কেন বুয়েটকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়। 

শিক্ষক, বন্ধুরা, পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। তবু নিজেই নিজের থেকে উৎসাহ খোঁজেন। গতানুগতিক জীবনধারায় বিশ্বাসী মমিত। তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি ভিন্ন এবং অনন্য। তার ধারণা আশপাশের মানুষ সর্বদা সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত নীতি কথা বলবে, সফলতা হাতছানি দিলেই সুর ঘুরে যায়। এতে যেমন তার ক্ষোভ নেই সেই সঙ্গে এটিও বুঝলেন মানুষ স্বভাবতই পরিবর্তনকে ভয় পায়। এ যাত্রায় বাবা-মাই তাকে আশা জাগান। তার আগের বিভিন্ন প্রজেক্টে সফলতা হয়তো তাদের মধ্যে বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে যে তিনি পারবেন।

এডুহাইব নামে একটা কোম্পানিতে কাজ করেছেন চার বছর। মাঝেমধ্যে তিনি করপোরেট আঙিনা নিয়ে ভিডিও তৈরি করেন, এ জ্ঞান সেখান থেকেই অর্জন করা। সেখানে তিনি একাডেমিক প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন এবং নিজে ৬০০-এর ওপর লেকচার ভিডিও করেছেন। তার তত্ত্বাবধানে পুরো দল তিন হাজারের অধিক ভিডিও লেকচার সম্পন্ন করেছিল। সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই মাঠে নেমেছেন। তিনি মনে করেন, তাকে আরো এগিয়ে যেতে হবে, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সব প্রয়াসই তিনি হাতে নিয়েছেন। 

এ কাজ করতে গিয়ে কখনো ধৈর্যহারা হননি মমিত। এখনো দ্বিতীয় বর্ষে থাকায় আরো দুই বছর  ভালোভাবেই কনটেন্ট বানাতে পারবেন বলে আশাবাদী। এরপর লাভবান হওয়ার বিষয় নিয়ে ভাবতে চান। যদি লাভবান হন তাহলে চালিয়ে যাবেন বলে বিশ্বাস করেন। নিজের কনটেন্ট নিজের কাছেই প্রথমে ভালো লাগতে হয়,৷ তবেই সেটা ভক্তদের নজর কাড়বে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫