ওবেসিটির কারণে হতে পারে যেসব রোগ

প্রকাশ: জুলাই ০৩, ২০২৩

অধ্যাপক ডা. সমীরণ কুমার সাহা

ইংরেজি ওবেসিটি শব্দটির অর্থ স্থূলতা বা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া। স্থূলতা স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। এটি শরীরের এমন এক বিশেষ অবস্থা যে অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হয় এবং ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। উচ্চতার চেয়ে শরীরের ওজন বেড়ে গেলে মানুষের সুস্থতা ও সৌন্দর্য দুটোই নষ্ট হয়। দেখা দেয় মানসিক ও শারীরিক নানা ধরনের রোগবালাই। অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে আসে শরীর, কাজের সক্ষমতাও কমে যায়। ফলে দৈনন্দিন কাজে নানা রকমের ব্যাঘাত ঘটে। কোনো কাজ সহজভাবে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ স্থূলতায় ভুগছে। স্থূলতার কারণে বাড়ছে ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি জটিলতাসহ নানা ধরনের রোগ। এছাড়া আরো যেসব রোগ দেখা দিতে পারে:

শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বা স্লিপ অ্যাপনিয়া: স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার বড় কারণ ওবেসিটি। যেসব ওবেসিটি আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘাড় ছোট কিংবা নিচের চোয়াল পেছনে থাকে তাদের শ্বাসনালি ও গলার সংযোগস্থলের মাংসপেশি ফুলে যায়। তখন মুখগহ্বরের টাকরা, আলজিভ, জিহ্বা ও টনসিলের মতো অংশগুলোকে ধরে রাখে। ফলে শ্বাস নেয়ার পথটি রুদ্ধ হয়ে আসে এবং ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘুমের মধ্যে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। 

নারীদের বন্ধ্যাত্ব: ওবেসিটির কারণে অনেক নারীর শরীরে অবাঞ্ছিত লোম ও অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দেয়। স্থূল কিশোরী ও তরুণীদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস হতে পারে। এতে ডিম্বাশয়ে সিস্ট থেকে শুরু করে সন্তান ধারণে জটিলতা এমনকি বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

ক্যান্সার: বিভিন্ন গবেষণায় ওবেসিটির সঙ্গে নানা ধরনের ক্যান্সারের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। স্তন ক্যান্সার, লসিকা গ্রন্থির ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, অন্ত্র ও খাদ্যনালির ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ক্যান্সার হতে পারে।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত: দেহের ওজন উচ্চতার চেয়ে অনেক বেড়ে গেলে অস্থিসন্ধিতে পরিবর্তন দেখা দেয়। কোমর, হাঁটু ও মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিসসহ নানা ধরনের বাতব্যথা হতে পারে। শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গাউট হতে পারে। 

লিভার/যকৃতের অকার্যকারিতা: লিভার/যকৃতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ফ্যাটি লিভার বা যকৃতে চর্বি জমে যাওয়া। ফ্যাটি লিভারের কারণে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি লিভার সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে।

পিত্তে পাথর : ওবেসিটিতে আক্রান্ত মানুষের অন্যদের তুলনায় পিত্তে পাথর বেশি হতে দেখা যায়। যাদের শরীরের ওজন অনেক বেশি, বিশেষ করে চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। 

যেভাবে দূর করবেন ওবেসিটি: ওবেসিটির মূল কারণ তিনটি। বেশি বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ, পরিশ্রম না করা ও জিনগত ত্রুটি। জিনগত ত্রুটি ছাড়া অন্য দুটি কারণ চাইলেই এড়িয়ে চলা সম্ভব। ওবেসিটির ঝুঁকি এড়াতে অযথা শুয়ে-বসে অলস জীবনযাপনের অভ্যাস ত্যাগ করুন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন এবং প্রচুর পানি পান করুন।

দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার রাখুন, ফলমূল ও শাকসবজিকে প্রাধান্য দিন। বাইরের খাবার বিশেষত ফাস্টফুড, তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন। দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।

লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ

ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫