কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ

ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করবে জীবনযাপন

প্রকাশ: জুন ২৬, ২০২৩

অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, দুশ্চিন্তা, ধূমপান, মদ্যপান, অলসতা ও আয়েশি জীবনযাপন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া বহুমূত্র, কিডনি রোগ, জন্মগত হৃদরোগ ও বংশগত কারণে এ রোগ দেখা দেয়।  

একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের হৃদয় মিনিটে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত শরীরে প্রবাহ করে। হৃদয় ঘড়ির কাঁটার মতো বিরামহীনভাবে চললেও তার ছন্দপতন হতে পারে। হয়তো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, বুকে ব্যথা করে না কখনো, অনেক পরিশ্রমও করেন, তবু কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হতে পারে। অসচেতনতা, অযত্ন আর অবহেলায় ধীরে ধীরে ধমনিতে চর্বি জমে। তাই ঝুঁকি কতটুকু আছে এবং কীভাবে তা এড়ানো যায় তা জানতে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনকে চিরতরে বিদায় দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে মনোযোগী হতে হবে। সচেতনতার মাধ্যমেই কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে অকালমৃত্যু বা কঠিন পরিণতি এড়ানো যায়।

খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা

কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা রক্ত সংবহনতন্ত্রের রোগের অন্যতম কারণ বংশগত হলেও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, দুশ্চিন্তাসহ নানা কারণে বাড়ছে এ সংখ্যা। বংশগত কারণকে কোনো পরিবর্তন করা না গেলেও জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এলে সহজেই এ রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। 

সিগারেট ও তামাকের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা, প্রতিদিন শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খেলাধুলা করা, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা এবং ঝুঁকির মাত্রা জেনে সে অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে ঝুঁকি এড়িয়ে চলা যায়। খাবারের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।

কার্বোহাইড্রেট/শর্করা 

চিনি, গুড়, চকোলেট, কোমল পানীয়, মিষ্টিজাতীয় খাবারসহ অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। এ ধরনের খাবার থেকে রক্তে দ্রুত গ্লুকোজ তৈরি হয়। অতিরিক্ত গ্লুকোজ রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরের জন্য ভালো নয়। তবে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার, যেমন লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, ওটস, চিড়া, মিষ্টি আলু, কচু ইত্যাদি খেতে পারেন। এ ধরনের খাবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

প্রোটিন/আমিষ

প্রোটিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। মাছ, হাঁস, মুরগি ও পাখির মাংস, ডাল, ডিম, ননি ছাড়া দুধ, দই, বাদাম প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। তবে কিডনি জটিলতা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো আমিষ গ্রহণ করতে হবে।

সোডিয়াম বা লবণ

কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোডিয়াম এড়িয়ে চলা জরুরি। সোডিয়ামের সবচেয়ে বড় উৎস লবণ। লবণ ছাড়াও অনেক খাদ্য উপাদানে সোডিয়াম থাকে যেমন বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা, টেস্টিং সল্ট ও বিভিন্ন ধরনের সস। এছাড়া খাসির মাংস, গরুর মাংস, কলিজা, মগজ ইত্যাদিতে অনেক সোডিয়াম থাকে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত রাখতে সোডিয়ামযুক্ত খাবারে নিয়ন্ত্রণ রাখা অত্যন্ত জরুরি।

ফ্যাট/চর্বি

বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড, চিজ, মার্জারিন, ফ্রোজেন খাবার ইত্যাদিতে প্রচুর ট্রান্সফ্যাট থাকে। যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল কমিয়ে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এসব ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট এড়িয়ে চলতে হবে।

শাকসবজি ও ফলমূল 

যারা নিয়মিত ফল ও শাকসবজি খায় তাদের এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। ফল ও সবজিতে থাকা পটাশিয়াম ও আঁশ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ফল ও সবজিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কার্ডিওভাসকুলারসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমায়।  

পানি ও তরল খাবার

ঝুঁকি এড়াতে উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। ওজন কমাতে পর্যাপ্ত পানি পান করা আবশ্যক। কিছু কিছু কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে পানি ও তরল নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়। ডাবের পানি, ননি ছাড়া দুধ, টকদইয়ের লাচ্ছি, সবজির স্যুপ, চিকেন স্যুপ, গ্রিন-টি, ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর পানীয় গ্রহণ করতে পারেন।

পরিবারে কারো এ ধরনের রোগের ইতিহাস থাকলে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। তাদের খাবারের ক্ষেত্রেও সচেতন থাকতে হবে। ঝুঁকি কমাতে খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আরো যেসব বিষয় মেনে চলা উচিত— 
ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। 

  • প্রতিদিন একই সময়ে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। 
  • ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। 
  • নিয়মিত শরীরচর্চা ও হাঁটাহাঁটি করতে হবে। 
  • দুশ্চিন্তামুক্ত ও হাসিখুশি থাকতে হবে।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

অধ্যাপক ডা. আ প ম সোহরাবুজ্জামান 
কার্ডিওলজিস্ট
পরিচালক, কার্ডিয়াক ক্যাথ ল্যাব ও হার্ট রিদম সার্ভিসেস
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল 

সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫