অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, দুশ্চিন্তা, ধূমপান, মদ্যপান, অলসতা ও আয়েশি জীবনযাপন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া বহুমূত্র, কিডনি রোগ, জন্মগত হৃদরোগ ও বংশগত কারণে এ রোগ দেখা দেয়।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের হৃদয় মিনিটে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত শরীরে প্রবাহ করে। হৃদয় ঘড়ির কাঁটার মতো বিরামহীনভাবে চললেও তার ছন্দপতন হতে পারে। হয়তো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, বুকে ব্যথা করে না কখনো, অনেক পরিশ্রমও করেন, তবু কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হতে পারে। অসচেতনতা, অযত্ন আর অবহেলায় ধীরে ধীরে ধমনিতে চর্বি জমে। তাই ঝুঁকি কতটুকু আছে এবং কীভাবে তা এড়ানো যায় তা জানতে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনকে চিরতরে বিদায় দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে মনোযোগী হতে হবে। সচেতনতার মাধ্যমেই কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে অকালমৃত্যু বা কঠিন পরিণতি এড়ানো যায়।
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা
কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা রক্ত সংবহনতন্ত্রের রোগের অন্যতম কারণ বংশগত হলেও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, দুশ্চিন্তাসহ নানা কারণে বাড়ছে এ সংখ্যা। বংশগত কারণকে কোনো পরিবর্তন করা না গেলেও জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এলে সহজেই এ রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সিগারেট ও তামাকের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা, প্রতিদিন শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খেলাধুলা করা, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা এবং ঝুঁকির মাত্রা জেনে সে অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে ঝুঁকি এড়িয়ে চলা যায়। খাবারের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
কার্বোহাইড্রেট/শর্করা
চিনি, গুড়, চকোলেট, কোমল পানীয়, মিষ্টিজাতীয় খাবারসহ অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। এ ধরনের খাবার থেকে রক্তে দ্রুত গ্লুকোজ তৈরি হয়। অতিরিক্ত গ্লুকোজ রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরের জন্য ভালো নয়। তবে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার, যেমন লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, ওটস, চিড়া, মিষ্টি আলু, কচু ইত্যাদি খেতে পারেন। এ ধরনের খাবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
প্রোটিন/আমিষ
প্রোটিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। মাছ, হাঁস, মুরগি ও পাখির মাংস, ডাল, ডিম, ননি ছাড়া দুধ, দই, বাদাম প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। তবে কিডনি জটিলতা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো আমিষ গ্রহণ করতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড, চিজ, মার্জারিন, ফ্রোজেন খাবার ইত্যাদিতে প্রচুর ট্রান্সফ্যাট থাকে। যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল কমিয়ে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এসব ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট এড়িয়ে চলতে হবে।
- প্রতিদিন একই সময়ে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
- ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
- নিয়মিত শরীরচর্চা ও হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
- দুশ্চিন্তামুক্ত ও হাসিখুশি থাকতে হবে।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।