সাক্ষাৎকার

গণমাধ্যমে মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য কর্মী দরকার

প্রকাশ: জুন ১৯, ২০২৩

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি। দেশের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা শিক্ষার প্রসারে গত চার দশক ধরে অবদান রেখে আসছেন তিনি। সম্প্রতি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা, পেশা জীবন ও গণমাধ্যমের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশে কাজের পরিবেশ পেশা হিসেবে গণমাধ্যমের কতটুকু বিকাশ হয়েছে?

একবিংশ শতাব্দীতে গণমাধ্যমায়িত সমাজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। অর্থাৎ, সমাজটাই গণমাধ্যমনির্ভর। বিশ্বপল্লী একটি বাস্তবতা। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছেন। সামনের দিনগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি আরো সমৃদ্ধ হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা ক্রমান্বয়ে উৎকর্ষের দিকে যাবে। গণমাধ্যমের আকর্ষণ বাড়বে। গণমাধ্যমে মেধাবী, দক্ষ যোগ্য কর্মী দরকার হবে। প্রচুর পেশাজীবী সাংবাদিক প্রয়োজন হবে। গণমাধ্যমের বিস্তার ঘটছে। বাংলাদেশে মুহূর্তে প্রায় ৪০টির অধিক সম্প্রচারমাধ্যম আছে। শত শত দৈনিক পত্রিকা সাময়িকী আছে। সুতরাং আজকে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিন্তা করছে, তাদের জন্য গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা একটি আদর্শ বিভাগ হতে পারে।

চাকরির ক্ষেত্র হিসেবে গণমাধ্যম কেমন?

গণযোগাযোগ সাংবাদিকতায় শিক্ষা লাভ করে যারা মেধা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবে, তাদের চাকরির কোনো অভাব হবে না। গণমাধ্যম অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এখানে যে ভালো লিখবে, ভালো সাংবাদিকতা করতে শিখবে, তার চাকরির কোনো অভাব হবে না। এখানে প্রতিদিন পরীক্ষা দিতে হয়। পাঠক দর্শক দেখেন কোন প্রতিবেদকের প্রতিবেদন আকর্ষণীয়, বস্তুনিষ্ঠ তথ্যনির্ভর। বিষয়গুলো প্রতিদিন পাঠকের সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে। পাঠক তার মূল্যায়ন করছে। পাঠকের মূল্যায়নে যে উতরে যাবে, তাকে গণমাধ্যম ধরে রাখার চেষ্টা করবে। এমনকি তিনি যদি পদত্যাগ করতে চান, তাকে আরো উচ্চ বেতন উচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রতিষ্ঠান ধরে রাখবে। সুতরাং যে যোগ্য তার চাকরির কোনো অভাব হবে না। কিন্তু যাদের সে যোগ্যতা থাকবে না, তাদের সমস্যা হবে।

সাংবাদিকতাকে একটি চ্যালেঞ্জিং ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে পেশাগত নিরাপত্তা আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে কি?

গণমাধ্যমের চাকরি এতটাই চ্যালেঞ্জিং যে এখানে জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিতে হয়। সাংবাদিকতা পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। আমরা ইংরেজিতে বলি হ্যাজার্ডেস্ট প্রফেশন। এর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা আর হতে পারে না। দুদিন আগে আমরা দেখলাম, জামালপুরে গোলাম রব্বানী নাদিম সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে জীবন দিলেন। তার আগে বহু সাংবাদিক সত্য উন্মোচনের কারণে জীবন দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের কথা সবসময় মনে রাখবে। সত্যের শত্রু কিন্তু সর্বত্র। তাই যে সাংবাদিক সত্য নিয়ে কাজ করেন, যাকে আমরা বলি সত্যের সৈনিক, তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে। জীবনের ঝুঁকি যিনি নিতে পারবেন, যার মাঝে সৎসাহস, সততা দেশপ্রেম আছে, তিনিই সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন। অন্যরা হয়তো গণযোগাযোগ সাংবাদিকতায় লেখাপড়া করে অন্য পেশায় যাবেন। তারা জনসংযোগ, সরকারি আমলাতন্ত্র কিংবা অন্য দশটা পেশায় যেতে পারেন, ব্যবসা বা রাজনীতি করতে পারেন। কারণ গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগে মানবিক যোগাযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়। মানবিক যোগাযোগে যিনি দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তিনি শুধু সাংবাদিকতা কেন, রাজনীতি, ব্যবসা, প্রশাসন, ব্যাংকিংসব ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন।

গণমাধ্যমের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মান বাড়ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে যোগ্য লোকের অভাব আছে বলে আপনি মনে করেন?

যোগ্য লোকের অভাব আমাদের দেশে আছে। কারণ যারা নিজেদের সাংবাদিকতার জন্য প্রস্তুত করেছেন, তারা যখন দেখেন যে সাংবাদিকতার চাকরিটা স্থায়ী হয় না, হঠাৎ চাকরি চলে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই একজন সরকারি বা ব্যাংকের স্থায়ী চাকরির প্রতিই আগ্রহী হয়। সে কারণে যোগ্য লোককে অনেক সময় সাংবাদিকতা পেশা আকর্ষণ করতে পারছে না। কিন্তু আমরা জানি, সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা দূর করার জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড দেয়া হচ্ছে। দশম ওয়েজ বোর্ডও সামনে দেয়া হবে। ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী যদি সাংবাদিকরা বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান, তাহলে তারা সরকারি চাকরিজীবীদের চেয়েও অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবেন। সরকার সে কারণেই সাংবাদিকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করার জন্য একের পর এক ওয়েজ বোর্ড দিয়ে যাচ্ছে। কারণ সরকারও জানে, পেশায় যে ঝুঁকি আছে সে ঝুঁকির জন্য এটিকে আকর্ষণীয় করার দরকার আছে। 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যারা সাংবাদিকতায় আসছেন অনেকেরই ডিগ্রি অন্য কোনো বিষয়ে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

সাংবাদিকতা পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ে কাজ করে। সাংবাদিকতা শিক্ষায় ভাষা, যোগাযোগ প্রক্রিয়া, বস্তুনিষ্ঠতা, সত্যনিষ্ঠতা পেশাগত নৈতিকতার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। অতএব অন্য কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করেও একজন সাংবাদিকতায় আসতে পারেন। তাকে ইনডোর প্রশিক্ষণ তথা প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয়গুলো অবহিত করতে হবে। তখন তার পক্ষে সুন্দর সুষ্ঠুভাবে সাংবাদিকতা করা সম্ভব।

একজন শিক্ষার্থী কেন পড়ার বিষয় হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেবে?

এটা তার পছন্দের ওপর নির্ভর করবে। যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় উপনীত হয়েছে সে সংবাদপত্র পড়েছে, টেলিভিশন দেখেছে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেছে। তার সাংবাদিকতার মৌলিক কিছু বিষয় এরই মধ্যে জানা আছে। শিক্ষার্থীরা চাইলে বিজ্ঞান, বাণিজ্য, কলা, কৃষি বা প্রযুক্তির অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে যেতে পারে। কিন্তু সে কেন সাংবাদিকতায় পড়বে? তার মাঝে যদি পছন্দের প্রভাব পড়ে যে আমি মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে সত্য বিষয়টি অবহিত করতে কাজ করতে চাই। মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে যে সংবেদনশীলতা আছে সেটাকে সমাজের দেশের কাজে লাগাতে চাই। সাংবাদিকতা যে মহান পেশা এটি উপলব্ধি করি এবং মহান পেশায় যোগ দিতে চাই। সাবজেক্ট বেছে নেয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীর নিজস্ব সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫