বন্ধ পায়রা

লোডশেডিং কমাতে আদানি ও বাঁশখালীর শরণাপন্ন বিপিডিবি

প্রকাশ: জুন ০৯, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনে দৈনিক ঘাটতি আড়াই হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার প্রভাবে দেশজুড়ে লোডশেডিং বেড়েছে আরো বেশি। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের আদানি পাওয়ারের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরো ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এসএস পাওয়ার থেকে ৩৫০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ নেয়া হচ্ছে। যদিও এ দুটি ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো হয়নি। 

বিপিডিবি সূত্রে জানা যায়, আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৭৫০ মেগাওয়াট আগেই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত ছিল। লোডশেডিং বাড়ার পর আদানির কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৬৪ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে।

পিজিসিবির তথ্য থেকে জানা গেছে, ১ জুন আদানির কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৬৪ মেগাওয়াট এবং ২ জুন ১ হাজার ৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হয়।

আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মোট সক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে গ্রিডে আসছে ৭৫০ মেগাওয়াট। আর দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন ঘোষণা না হলেও এ ইউনিট থেকে ৩০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ নিচ্ছে বিপিডিবি। 

অন্যদিকে দেশের কয়লাভিত্তিক আরেকটি বড় সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রস্তুত হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গড়ে তোলা বেসরকারি মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার প্লান্টের এ কেন্দ্রের সক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। বিপিডিবি সূত্রে জানা যায়, অল্প সময়ের মধ্যে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। তবে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বর্তমানে ৩৫০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। এর আগে গত ২৪ মে এসএস পাওয়ার থেকে জাতীয় গ্রিডে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে যুক্ত হয়। কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের প্রত্যেকটির সক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট।

বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এসএম ওয়াজেদ আলী সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বৃহৎ দুটি কেন্দ্র থেকে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেশি আসছে। এর একটি আদানি, অন্যটি এসএস পাওয়ার। এসএস পাওয়ার থেকে বর্তমানে ৩৬০-৩৮০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ নেয়া হচ্ছে।’ 

লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ কেন্দ্র দুটি থেকে সরবরাহ বেশি নেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘দুটি কেন্দ্রই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী নিচ্ছি।’ তাপমাত্রা পরিস্থিতি এখন যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

বিদ্যুৎ বিভাগের নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, লোডশেডিং কমাতে প্রস্তুত বড় কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা কাজে লাগানো হচ্ছে। মূলত বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু না হলেও এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো গ্রিডে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। চাহিদা অনুযায়ী এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেয়ার ক্ষেত্রে কম-বেশি সরবরাহ হবে।

চলতি মাসে তাপপ্রবাহ পুনরায় শুরু হলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায় উল্লেখযোগ্য হারে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এ চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে বিপিডিবি। যে কারণে বর্তমানে দৈনিক আড়াই-তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং হচ্ছে।

এদিকে গতকাল দুপুরের পর তাপপ্রবাহ কিছুটা কমার ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও কিছুটা কমে যায়। তবু পিজিসিবি ঘণ্টাপ্রতি লোডশেডিং চিত্র থেকে দেখা যায়, বিকাল ৫টা নাগাদ যে পরিমাণ বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল, সেখানেও ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং হয়েছে।

দেশে চলমান লোডশেডিংয়ের মধ্যে ৫ জুন ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটের কারণে বন্ধ হওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রভাব সারা দেশে পড়েছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে তীব্র আকারে লোডশেডিং বেড়ে যায়।  


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫