সংকটেও উপেক্ষিত জ্বালানি বিভাগ

প্রকাশ: জুন ০২, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্যাস, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও কয়লার বিল বকেয়াসহ নানা সংকটে দেশের জ্বালানি খাত। এমন পরিস্থিতিতেও প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি উপেক্ষিত। বিশেষত বিদ্যুতের তুলনায় যৎসামান্য বাজেট রাখা হয়েছে জ্বালানি বিভাগে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৯১১ কোটি টাকা, যা উন্নয়ন বাজেটের মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। 

জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার দেশের জ্বালানি খাত নিয়ে যে ধরনের পরিকল্পনা করছে, সেখানে বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিশেষত স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান, পাইপলাইনের আধুনিকায়ন, প্রযুক্তিনির্ভর সরবরাহ ব্যবস্থাপনাসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করতে হবে। তবে জ্বালানি খাতের বরাদ্দ দেখে মনে হয় না এখানে নতুন কোনো প্রকল্প কিংবা বড় আকারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বরং আমদানিনির্ভরতায় বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বলেই এ বরাদ্দ থেকে উপলব্ধি করা যায়। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের জন্য বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছে মোট ৩৪ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ৯১১ কোটি টাকা। চলতি বছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। 

জ্বালানি খাতের গত কয়েক অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ কমিয়ে ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। 

জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমানোর সমালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। সরকার স্থানীয় গ্যাস খাতের অনুসন্ধানে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করেছে। বিশেষত গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন, পাইপলাইন নির্মাণসহ নানা খাতে বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) দিয়ে এসব করার কথা থাকলেও বর্তমানে এ তহবিলের টাকা দিয়ে এলএনজি কেনায় সেখানেও বড় অংকের অর্থের ঘাটতি। ফলে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চয়তা বাড়াতে জ্বালানি খাতে অনেক বেশি বরাদ্দ রাখার দরকার ছিল।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জ্বালানি বিভাগের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে তাদের কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। বিদ্যুতের তুলনায় জ্বালানির বরাদ্দ বরাবরই কম। এ নিয়ে বিগত বছরগুলোয় তাদের তরফ থেকে কোনো অভিযোগ দেখি না। তবে জ্বালানি বিভাগ ২০২৫ সাল পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে অর্থের প্রয়োজন। নানা ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার ব্যাপার আছে। এছাড়া নতুন প্রকল্পের জন্যও অর্থের প্রয়োজন। তবে তাদের বাজেট দেখে মনে হয় না, এ অর্থবছরে নতুন কোনো প্রকল্প কিংবা সে ধরনের কোনো উদ্যোগ রয়েছে। থাকলে বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যেত।’ 

দেশে গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক হারে লোডশেডিং বেড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এসব কেন্দ্র থেকেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া কয়লার বিল বকেয়াসহ আমদানি সংকটে বন্ধের উপক্রম দেশের বৃহৎ তাপবিদ্যু কেন্দ্র। স্থানীয় কয়লা উত্তোলন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা থাকলেও সেখানে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের কারণে স্থানীয় কয়লা উত্তোলন করা যাচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। 

জ্বালানি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব কূপ থেকে গ্যাস মিললে জাতীয় গ্রিডে ৬১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হওয়ার কথা। 

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ভোলা জেলার ইলিশা গ্যাস ক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার হয়েছে। গ্যাসের উৎপাদন বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে ছিল দৈনিক ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বর্তমানে দৈনিক প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ডিসেম্বর ২০২৪ সালের মধ্যে আরো ৪৬টি কূপ খনন করে জাতীয় গ্রিডে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সমুদ্র অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ চলমান। এ কাজে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হয় বিধায় এ খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ 

গ্যাস উৎপাদন ও আমদানির কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাস উৎপাদন ও  আমদানির সঙ্গে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে ১৫০ কিলোমিটার এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় ৬৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলমান। এছাড়া ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনে ৪২৫ কিলোমিটার লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫