রিভিউ

হাস্যরসের মধ্যেই বাস্তবতার প্রকাশ

প্রকাশ: জুন ০২, ২০২৩

আসরার আবেদিন

কভিড থেকে ভারতের সিনেমায় তৈরি হয়েছিল একটি নতুন ধারা। ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছিল বেশকিছু ডার্ক কমেডি ও স্যাটায়ার। ‘‌লুডো’, ‘‌লুটকেস’ থেকে ‘মনিকা, ও মাই ডালিং’ মুক্তি পায় নেটফ্লিক্সে। তবে শুরুটা যে ধারায় হয়েছিল, তা ধরে রাখেনি ওটিটি প্লাটফর্মগুলো। বিশেষত নেটফ্লিক্স যেন ঝিমিয়ে ছিল। সেখান থেকেই এ ওটিটি ফিরল ‘‌কাঁঠাল’ নিয়ে। নেটফ্লিক্স জানে কিনা জানি না, সিনেমাটি তারা মুক্তি দিয়েছে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসে। রীতিমতো কাঁঠালের মৌসুম। সিনেমাটি কাঁঠাল নিয়ে আবার কাঁঠাল নিয়েও নয়। কাঁঠাল একটি অনুষঙ্গ। তাকে ঘিরেই নানা ঘটনা এবং ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকে এদিক-সেদিক সরে গিয়ে নানা বাস্তবতা উঠে এসেছে বিদ্রূপের মাধ্যমে।

‘‌কাঁঠাল: আ জ্যাকফ্রুট মিস্ট্রি’ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন যশবর্ধন মিশ্র। এটি তার প্রথম ফিচার ফিল্ম। অনেকদিন ধরে কাজ করেছেন তিনি। সানিয়া মালহোত্রা বলেছেন, ‘‌এ সিনেমা নিয়ে গুণীত মোঙ্গার সঙ্গে তার কথা শুরু হয় ‘‌‘‌পাগলাইত’’ থেকে। সে হিসেবে প্রায় দুই বছর ধরে সিনেমার কাজ চলেছে। তবে সিনেমার প্রেমাইস ততটা বড় নয়। একটি ছোট শহরের ঘটনা। ছোট শহরের ছোট পুলিশ ফোর্স, তাদের কাজ আর এর মধ্যে এসে ঢোকা এক বিপত্তির কথা নিয়ে সাজানো হয়েছে সিনেমার গল্প। এখানে আমরা দেখি, পুলিশের মূল কাজের থেকেও অনেক সময় তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া কাজ বড় হয়ে ওঠে।

পুলিশের কাজ মূলত ল অ্যান্ড অর্ডার ঠিক রাখা। অপরাধীদের ধরা ও অপরাধ যেন না হতে পারে, সে ব্যবস্থা করা। এসব করার জন্য তাদের কিছু নিয়মিত ডিউটি থাকে। কিন্তু সবসময় তারা সেটা করতে পারেন না। এর পেছনে যেমন থাকে জনসংখ্যার বিপরীতে পুলিশ সদস্য কম হওয়া, নিয়মতান্ত্রিক জটিলতা, তেমনি থাকে ক্ষমতাবানদের প্রভাব। ব্যাপারটা বললে প্রথমে যে সহজ দৃশ্যটা মাথায় আসে, তা হলো কোনো একটি অপরাধের সঙ্গে একজন ক্ষমতাবান যুক্ত আছেন। তিনি চাপ দিয়ে তদন্তকাজ পিছিয়ে দিচ্ছেন বা বন্ধ করে দিচ্ছেন। কিন্তু এর বাইরে আরো একটা ঘটনা ঘটে। অনেক সময় দেখা যায় ক্ষমতাবানদের নানা ছোট কাজ করতে গিয়ে পুলিশ, এমনকি অনেক দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করতে পারে না।

একজন এমএলএর বাগান থেকে কাঁঠাল চুরি হয়ে গেছে। তার সে কাঁঠাল ফেরত পেতে হবে, আমাদের আলোচ্য সিনেমার মূল গল্প এটাই। কাঁঠাল চুরির তদন্ত করার দায়িত্ব পড়ে তরুণ পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহিমা বাসোরের কাঁধে। এমএলএ মুন্নালাল পাটেরিয়ার বাগানের কাঁঠাল ফেরত না পেলে তার প্রেস্টিজ আর থাকছে না। এই যখন অবস্থা, তখন পুরো বিষয়টির পেছনে লেগে পড়ে স্থানীয় মিডিয়া। তারা নানা রকম খবর পরিবেশন করতে শুরু করে। পুলিশ কী করছে, তা জানার চেষ্টা করে। পুরো বিষয়টি ভারতের বহু ‘‌ক্রাইম ড্রামা’য় দেখা গেছে। সেখানে বড় বড় অপরাধ তদন্তের সময় সমস্যাগুলো তৈরি হয়। যশবর্ধন সেটিকে নিয়ে এসেছেন মোরা নামের এক কাল্পনিক শহরে আর সমস্যাগুলো উপস্থাপন করেছেন স্যাটায়ারের মাধ্যমে।

সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে গত ১৯ মে। এখন পর্যন্ত আইএমডিবি অনুসারে দর্শক সিনেমাকে ১০-এর মধ্যে ৬ দশমিক ৭ রেটিং দিয়েছে। মূলত সিনেমায় গ্ল্যামার নেই বললেই চলে। সানিয়া মালহোত্রা পুলিশের পোশাকেই পুরো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সিনেমায় নেই কোনো বড় অভিনেতা। কিন্তু এরই মধ্যে বিজয় রাজ (এমএলএ), রাজপাল যাদব (অনুজ), রঘুবীর যাদবরা তাদের অভিনয় প্রতিভা দেয় সিনেমায় স্যাটায়ারকে পুরোপুরি উপস্থাপন করেছেন। সানিয়াও নিজের চরিত্রে চমৎকার। এ সিনেমার নানা দৃশ্যে দর্শক হাসবে। অশোক মিশ্র ও যশবর্ধন মিশ্র সেভাবেই সংলাপ সাজিয়েছেন। দৃশ্যগুলোও দারুণ। কয়েকটি আবেগময় দৃশ্য আছে। সেখানেও সবাই ভালো অভিনয় করেছেন। তবে কিছু জায়গায় পরিমিতির অভাব ছিল। সম্ভবত সেটা যশবর্ধনের প্রথম সিনেমা হওয়ার কারণেই পিছলে গেছে অভিজ্ঞতার অভাবে।

হাস্যরসের মধ্যে ‘‌কাঁঠাল: এ জ্যাকফ্রুট মিস্ট্রি’ জানায় একটি ছোট শহরে পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে হয় নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের মধ্যে থেকে। মাহিমার প্রশ্নের জবাবে তার সিনিয়র অফিসার তাকে জানায়, ‘‌তোমাকে যা বলা হয়েছে, তা করো। কারণ আমি সেটাই করছি, যেটা আমাকে বলা হয়েছে।’ এর বাইরে কাঁঠাল খোঁজার পেছনে এমএলএর যে নিজস্ব আগ্রহ, তার পেছনে ছিল স্থানীয় রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার সম্মানের প্রসঙ্গ। সব মিলিয়ে ভারতের একটি ছোট শহরের মানুষ, অবস্থা ও রাজনীতির প্রসঙ্গ এখানে উঠে এসেছে। হাস্যরসের মধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে বাস্তবতা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫