ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর পক্ষে ব্রিটিশ নাগরিকরা

প্রকাশ: মে ২৯, ২০২৩

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ক্রমেই ব্রিটিশ নাগরিকদের সমর্থন বাড়ছে। সম্প্রতি ‘ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত’ শীর্ষক এক জরিপে বিষয়টি উঠে এসেছে। জরিপের তথ্যমতে, ব্রেক্সিটের পর পুনরায় ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে দেশটিতে জনমত বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ও সাধারণ জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধির মূলে ব্রেক্সিটকে দায়ী করছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

২০১৬ সালে ইইউ থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাজ্য। ওই সময় গণভোটের ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নেয় দেশটি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভোটদানকারী নির্বাচনী এলাকাগুলোয় দ্বিগুণেরও বেশি ভোটার মনে করেন, ব্রাসেলসের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলাই এখন দেশটির জন্য সবচেয়ে ভালো পথ।

১০ হাজারের অধিক নাগরিকদের নিয়ে এ সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্লেষক সংস্থা ফোকালডাটার পরিচালিত এ সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তিন গুণেরও বেশি অর্থাৎ ৬৩ শতাংশ নাগরিক মনে করছেন, ব্রেক্সিট সমাধানের চেয়ে বেশি সমস্যা সৃষ্টি করেছে। 

সমীক্ষার তথ্য বলছে, সামগ্রিকভাবে ৫৩ শতাংশ ভোটার এখন চায় সরকার ইইউর সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলুক। একক বাজার ও কাস্টমস ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পরে বর্তমানে মাত্র ১৪ শতাংশ রয়েছেন যারা যুক্তরাজ্যকে আলাদা রাখার পক্ষে।

লিংকনশায়ারের বোস্টন ও স্কেগনেস শহরে, যেখানে ২০১৬ সালে ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, সেখানে এখন দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ (৪০ শতাংশ) ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে এখানে ১৯ শতাংশ নাগরিক আছেন যারা সম্পর্ক আরো দূরবর্তী করতে চায়।

মাল্টিলেভেল রিগ্রেশন অ্যান্ড পোস্টস্ট্র্যাটিফিকেশনের (এমআরপি) মতো সুপরিচিত পরিসংখ্যানগত পদ্ধতিতে সমীক্ষাটি চালানো হয়। গত সপ্তাহে সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশের পর জরিপটি প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে দেখা যায় যুক্তরাজ্যে নিট অভিবাসন ২০২২ সালে ৬ লাখ ৬ হাজারেরও অধিক উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালের ৪ লাখ ৮৮ হাজারের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। যদিও দেশটির সরকার মনে করছে, ব্রেক্সিট যুক্তরাজ্যকে নিজস্ব সীমানা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সুযোগ দিবে। আগামী ১ জুন মলদোভায় অনুষ্ঠেয় ‘‌দ্বিতীয় ইউরোপিয়ান পলিটিক্যাল কমিউনিটি সামিট’-এ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো বৈঠক করবেন। এ বৈঠকে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে উভয় নেতার উদ্বেগ থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের ভিসা নীতি বিবেচনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে অর্ধেকেরও বেশি নাগরিকরা বলেছেন, বিদেশী শ্রমিকদের প্রবেশের অনুমতি দিতে আরো ভিসা প্রদান করা উচিত যুক্তরাজ্যের। প্রায় ১৯ শতাংশ সাধারণভাবে আরো ভিসা দেখতে চান। ৩২ শতাংশ বলেছেন যেসব খাতে শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে, সেসব খাতের জন্য আরো ভিসা ইস্যু করা উচিত। তবে ২৩ শতাংশ মনে করেন ভিসা ইস্যু সীমিত করা উচিত।

ব্রেক্সিটের পর বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতার ফলে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ও বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে আমদানি ও রফতানি খরচ বেড়েছে। গত সপ্তাহে গার্ডিয়ান লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস (এলএসই) থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ব্রেক্সিটের পর থেকে নতুন বাণিজ্য সংকটের মধ্যে ইইউ থেকে খাদ্য আমদানিতে অতিরিক্ত ৭০০ কোটি পাউন্ড অর্থ খরচ হয়েছে ব্রিটিশ পরিবারগুলোর।

যদিও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ব্রাসেলসের সঙ্গে তার দুই পূর্বসূরি বরিস জনসন ও লিজ ট্রাসের তুলনায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়কে সাহায্য করার জন্য আরো বেশি কিছু করার এবং ব্রেক্সিটের ফলে যে বাণিজ্য ক্ষতি হয়েছে তা কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে ভাবছেন।

বেস্ট ফর ব্রিটেন সংস্থার প্রধান নওমি স্মিথ বলেন, ‘মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ব্রিটেনের জনমত ব্রেক্সিটের পক্ষে থেকে চলে গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের চুক্তির ফলে উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে বিশ্বাস অধিকাংশ নাগরিকের। এখন ইইউর সঙ্গে তারা আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে সমর্থন করছে।’

যুক্তরাজ্যের ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ভার্জিন গ্রুপের চেয়ারম্যান পিটার নরিস বলেন, ‘উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপ তো রয়েছেই। আমরা শ্রমিকের ঘাটতির কারণে উৎপাদিত ফসল ব্যবস্থাপনা করতে পারছি না। এছাড়া আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ইইউ থেকে বিচ্ছিন্নতার ফলে অর্থনৈতিক প্রভাব লক্ষণীয়। এ জরিপ থেকে এটা স্পষ্ট যে বেশির ভাগ ভোটার জানেন ব্রেক্সিট এসব সমস্যার একটি মূল কারণ।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫