গাজীপুর সিটি করপোরেশন

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনে জায়েদা খাতুনের জয়লাভ

প্রকাশ: মে ২৬, ২০২৩

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I গাজীপুর

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। অর্থাৎ দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ১৬ হাজার ১৯৭। গাজীপুর জেলা পরিষদ ভবনের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে গতকাল রাত দেড়টার দিকে এ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করনে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। 

মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে জায়েদা খাতুনকে কখনো রাজনীতিতে দেখা যায়নি। মূলত সাবেক মেয়র ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজকে ভিত্তি করেই রাজনীতির মঞ্চে ৭০ বছরের এ বৃদ্ধা। স্বশিক্ষিত জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী হলফনামায় পেশা ‘ব্যবসা’ লেখা হলেও মূলত তিনি গৃহিণী, যিনি দেশের দ্বিতীয় নারী হিসেবে সিটি সামলাবেন। দেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। 

জাতীয় নির্বাচনের আট মাস আগে গাজীপুর সিটির ভোট শেষ হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবেই। গতকাল সকাল ৮টায় মোট ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ভোটারদের মধ্যেও ছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। 

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম তার মা জায়েদা খাতুনকে প্রার্থী করেন। অবশ্য তিনি নিজেও প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। পরে দল থেকেও বহিষ্কৃত হন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু ভোটের লড়াইয়ে কার্যত আজমত উল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাহাঙ্গীর। মায়ের পক্ষে দিন-রাত প্রচার চালিয়েছেন। এ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও গাজীপুর নির্বাচনে নাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলামও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এ সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি। 

উৎসবমুখর ভোট হলেও অনেক ভোটকেন্দ্রে ছিল না সব প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট। এমন একটি কেন্দ্র হলো রানী বিলাশমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মহিউজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। পরে পাশের নারী ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবু নাইম আমিনুল ইসলাম জানান, কোনো কোনো প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রেই আসেননি। তবে এখানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। 

সরজমিনে গিয়ে অনেক প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়নি শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা ও চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও। এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়ক তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভোটকেন্দ্রে তার মায়ের এজেন্টদের বাধা দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ারও চেষ্টা করা হয়। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ 

এদিকে নির্ধারিত সময় বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকায় কোথাও কোথাও সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তও ভোট হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘ভোটগ্রহণ ৪টায় শেষ হলেও কেন্দ্রে যেসব ভোটার উপস্থিত ছিলেন তাদের সবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত বন্ধ করা যায় না। এটা নির্বাচন কমিশনের আইন।’ এ নির্বাচনে কত ভোট পড়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৫০ শতাংশের কম না।’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সিসিটিভির মাধ্যমে ভোট পর্যবেক্ষণ করেন চার নির্বাচন কমিশনার। এদিন সিসিটিভি দেখে নির্বাচন কমিশনাররা নির্দেশ দেয়ার পর দুটি কেন্দ্র থেকে দুজনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ভোটের গোপন কক্ষে প্রবেশ করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে দুপুর ১২টার কিছু পর ১০০ নম্বর কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে একজন লোককে বসে থাকতে দেখেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তাৎক্ষণিক তিনি মুঠোফোনে আগন্তুককে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে রাশেদা সুলতানা কেন্দ্রের দায়িত্বশীল প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে বলেন, ‘১০০ নম্বর কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে পাঞ্জাবি পরা একজন লোক বসে আছেন। তিনি কারো কথা শুনছেন না। তিনি বেরও হচ্ছেন না। ভোটারদের জোর করে ভোট দেয়াচ্ছেন। তার কারণে ভোটগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত অ্যাকশনে যান, প্রয়োজনে তাকে গ্রেফতার করুন।’

বিগত নির্বাচনগুলোয় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ কক্ষে সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ দেয়া হলেও এবার সেটি সীমিত করা হয়। নিয়মিত বিরতিতেই কেবল কয়েক মিনিটের জন্য সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে কেন্দ্রগুলোয় ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসিটিভি বসিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। আর সিসিটিভির ছবি প্রদর্শনে ছিল ১৮টি ডিজিটাল ডিসপ্লে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫