রিভিউ

আলো-আঁধারে সফরনামা

প্রকাশ: মে ২৪, ২০২৩

ওয়াহিদ সুজন

আলপ্তগীন তুষার আঁকছেন অনেকদিন। চারুকলায় শিক্ষাকাল ধরলে চার দশকের কম-বেশি। এ লম্বা সময়ে তার প্রথম একক প্রদর্শনী হয়ে গেল চলতি মাসে, ‘জার্নি’। শিরোনাম থেকে অনুমিত, কোনো ধরনের সফরকে থিম করে আঁকা হয়েছে ছবিগুলো। সফর তো অবশ্যই। তবে নির্দিষ্ট কোনো পরিসর নয়; বরং রসিকদের সামনে শিল্প দুনিয়ায় তুষারের যাপন বা সফরকে সামনে এনেছে। খোলাসা করেছে তার দেখার চোখ।

উত্তরার গ্যালারি কায়ার ছিমছাম পরিবেশে ৮৭টি চিত্রকর্ম নিয়ে আয়োজন ‘জার্নি’। কাজের মেজাজ অনুযায়ী মাধ্যম বিচিত্র। পেন্সিল, চারকোল, কালি, গ্লাস মার্কার, জলরঙ, অ্যাক্রিলিক, অয়েল প্যাস্টেল, সফট প্যাস্টেল, লিথোগ্রাফ ও মিক্সড মিডিয়া।

প্রদর্শনীতে আলপ্তগীন তুষারের আঁকাআঁকির বিভিন্ন পর্যায় উঠে এসেছে। আবার কাগজে অসমাপ্ত অনুশীলনকে শুরু হিসেবেও ধরা যায়। সময়ক্রমে কয়েকটি পর্যায় দেখা যায়। একদিকে আছে স্টিল লাইফ, ল্যান্ডস্কেপ ও পোর্ট্রেট, যার শুরু ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে। সাম্প্রতিক বছর দুই-তিনেকের আঁকাআঁকির মধ্যে আছে ষাঁড় ও সিক্ত সিরিজের ছবি। যার মধ্যম বিন্দু হিসেবে ধরা যায় ‘আলো ও অন্ধকার’ সিরিজ। ২০০৪ সালে জাপানে এঁকেছিলেন তিনি। এছাড়া নির্দিষ্ট ইভেন্টকে ধরতে দেখি ‘নাচোলের বিদ্রোহ’ ছবিতে। 

ফিগারের বিন্যাসে যথাযথ থাকার চেষ্টা করেন তুষার। ডকুমেন্টেশনে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এতটুকুতে তো চলে না। ষাঁড় বা সিক্ত সিরিজের নারীদের শরীরে সেই বিন্যাসের সঙ্গে ফুটে উঠেছে অন্তর্নিহিত শক্তি ও সৌন্দর্যের মেলবন্ধন। পোর্ট্রেটের ক্ষেত্রে বিখ্যাত ব্যক্তিদের দেখা মেলে। আছে কিছু মডেল পেইন্টিং। এগুলো ঘোষিতভাবে বাস্তব চরিত্র না হওয়ায় দর্শকের চোখে বয়স ও অভিব্যক্তি গুরুত্ব পায়। রঙ, বিন্যাস ও মুখের গঠনের সমন্বয়ে ফুটে উঠেছে অভিব্যক্তি, যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য দৃশ্যের চেয়ে অন্তর্নিহিত গল্পের দিকে টানে।

স্বভাবতই প্রতিটি ছবি আলাদা গল্প বলে। তার সঙ্গে বদলেছে তুলির স্বর। টানটান লাইন যেমন আছে, তেমনি আছে কোমলতা আরোপের চেষ্টা। দুটো দিক এসে মিলেছে সিক্তের মতো রোমান্টিসাইজ হওয়া বৃহৎ ক্যানভাসে।

১৯৮০-এর দশক থেকে এ সময়ের পরিক্রমা মাঝে স্থাপিত হতে দেখি ‘আলো ও অন্ধকার’ সিরিজ। তুষারের অন্য কাজে যতটা বাস্তবানুগ থাকার চেষ্টা চোখে পড়ে, তার চেয়ে বির্মূত হয়ে ‍ওঠা বা শুধু অভিব্যক্তিকে ধরে কাজের প্রবণতা কম। পুরোপুরি এমনও না হয়তো। কেন বলছি? বাইনারিভাবে দেখার স্তর সম্ভবত ‘আলো ও অন্ধকার’ সিরিজের মাধ্যমে অতিক্রম করেন তিনি। এখানে মহাবিশ্বের আলো-অন্ধকার, কালো-সাদা, ইতি-নেতি, দিন-রাতে ভারসাম্য টানেন। যার সমন্বয় দেখা যায় ধূসর কিছু টানে, যা তুষারের শিল্পসফরে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তারপর ধীরে ধীরে আলপ্তগীন তুষার কি বৈপরীত্যকে মেলানোর চেষ্টা করেছেন, যার সমন্বয় এ দুনিয়া। দেখতে দেখতে এমন ভাবনা জুড়ে বসে মনে। যেভাবে আমাদের চোখ সরল থেকে ক্রমেই জটিল জগতে প্রবেশ করে। বিহ্বলতা হচ্ছে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে দাঁড়াই। এই ‘জার্নি’ বোধহয় সেদিকে এগোতে দেয়। হয়তো পুরোপুরি এমন না। এমনও হতে পারে, এ বৈপরীত্য ও সমন্বয় শিল্পসফরে চক্রাকারে ফিরে ফিরে আসে। শিল্প, শিল্পী ও ভোক্তাদের সামনে এক নিদারুণ আলো-আঁধারি চ্যালেঞ্জ।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫