পঞ্চাশের পর

বয়সও বাড়ুক সুস্থভাবে

প্রকাশ: এপ্রিল ০৩, ২০২৩

বণিক বার্তা ডেস্ক

সুস্থভাবে বয়স বাড়ুক সেটা আমরা সবাই চাই। তবে নিজেকে সুস্থ রাখার পেছনে বেশকিছু বিষয় কাজ করে। যদিও নিজের সুস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, যেমন জিন। কিন্তু আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমরা নিজেরাই অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

বয়স পঞ্চাশ পেরোলেই নানা রকম রোগ আমাদের ঘিরে ধরে। আগে থেকে সতর্ক হলে তা অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে এ বিষয়গুলোই। সেখানে বলা হয়েছে, নিজের বয়সকে সুস্থভাবে বাড়তে সাহায্য করতে পারেন আপনি নিজেই। ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ডাক্তারের পরীক্ষা এবং আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ঠিকঠাক যত্ন নিয়ে বয়সকালেও নানা রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।  

শরীরের যত্ন নিন: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের শারীরিক অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়ে পড়া ঠেকাতে নিজের শরীরের দিকে আগে থেকেই বাড়তি মনোযোগ দিন। নিজের শরীর ঠিক রাখতে সবসময় কর্মমুখর থাকুন, নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন, অ্যালকোহল পান সীমিত করুন এবং যথাযথভাবে নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। এসব করতে পারলেই আপনার বয়সকালেও খুব বেশি সমস্যা পোহাতে হবে না। 

ব্যায়াম করুন: আপনি ভালোবাসেন বা না বাসেন, শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকাই পারে বয়সকালেও আপনার সুস্থতা বজায় রাখতে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তারা শুধু যে বেশিদিন বেঁচে থাকেন তাই নয়, তারা সুস্থভাবেও বেঁচে থাকেন। মানে তারা কোনো ধরনের ব্যথা বা অক্ষমতা ছাড়াই আরো বেশিদিন বেঁচে থাকার সুযোগ পান। 

৪০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, যারা দিনে ৮ হাজার বা আরো বেশি পা হাঁটে তারা ৪০০০ পা যারা হাঁটে তাদের তুলনায় ৫১ শতাংশ কম মৃত্যুঝুঁকিতে থাকেন। দৈনন্দিন কিছু কাজের মাধ্যমেই আপনি আপনার পদক্ষেপের সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পারেন। যেমন হয়তো বাগান করলেন, কুকুরের সঙ্গে হাঁটতে গেলেন বা লিফট ছেড়ে সিঁড়ি ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন। এর ফলে আপনার ওজনও নিয়ন্ত্রণ হবে। স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়া, উচ্চরক্তচাপ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। 

স্বাস্থ্যকর খাবার: বয়সকালে সুস্থ থাকতে হলে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে হবে। এতে বেশকিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। তাতে বয়সকালে নানা সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রম আরো একটু বেড়ে যাবে। ব্যায়ামের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার শুধু যে আপনার ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করবে তাই নয়, তা আপনাকে ভেতর থেকেও সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। 

পর্যাপ্ত ঘুমান: পর্যাপ্ত ঘুম পারে আপনাকে সুস্থ ও সবল রাখতে। বয়স্কদেরও দৈনন্দিন সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম দরকার। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা সেটা পুরোপুরি পান না। কোনো কারণে অসুস্থ থাকলে বা শরীরে কোনো ব্যথা থাকলে ঠিকমতো ঘুমানো কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি কিছু ওষুধও দীর্ঘ সময় জাগ্রত রাখতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম না ঘুমালে মানুষ খিটখিটে, হতাশ হয়ে যায়, অনেক কিছু ভুলে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। এমনকি কখনো কখনো পড়ে যাওয়া বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটতেও দেখা যায়। 

ধূমপান: আপনার বয়স কত বা আপনি কতদিন থেকে ধূমপান করছেন সেটাও একটা বড় বিষয়। গবেষণা বলছে, আপনার বয়স যদি ৬০ বছর বা তার বেশি হয় এবং আপনি যদি এক দশক ধরে ধূমপান করে থাকেন, তাহলে সেটা ছেড়ে দিলে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে। যেকোনো বয়সে ধূমপান ছেড়ে দিলেই ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি কমে যায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, স্বাদ ও গন্ধের বোধ বৃদ্ধি পায়, ব্যায়ামের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একটি গবেষণা বলছে, ৫৫ থেকে ৭৪ বছরের পুরুষ এবং ৬০ থেকে ৭৮ বছরের নারীদের মধ্যে যারা ধূমপান করে তাদের মৃত্যুঝুঁকি যারা কখনো ধূমপান করেনি তাদের তুলনায় তিন গুণ বেশি থাকে।

নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলেও সুস্থভাবে বয়স বাড়বে। ২০২১ সালের একটি গবেষণা বলছে, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনো ক্রনিক ডিজিজ সহজেই প্রথম দিকে চিহ্নিত করা, তাতে করে তার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। যেমন উচ্চরক্তচাপ বা কোলেস্টেরল ইত্যাদি। যারা নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যায় তাদের জীবনযাত্রার মান এবং ভালো বোধ করার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়। 

মানসিক স্বাস্থ্য: নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। চেষ্টা করুন মন ভালো রাখতে। কারণ সেটাই আপনার সুস্থ জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর প্রভাবে আমরা কীভাবে চিন্তা করি, অনুভব করি, কাজ করি তাতে প্রভাব পড়ে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব, মানসিক চাপ, হতাশা ও মনকে ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণে রাখলে বয়সও বাড়বে সুস্থভাবে। নিজেকে নিজেই সময় দেয়ার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন নিজের শখ ও ইচ্ছেগুলোকে প্রাধান্য দিতে। প্রিয় মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো বাড়ান। আর নিজের মনকে গুরুত্ব দিন। দেখবেন ভালো বোধ করবেন। আর মানসিকভাবে ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫