আলোকপাত

‘‌ব্যবসাবান্ধব’ বাজেট হয়েছে এবার ‘‌গণবান্ধব’ বাজেট করুন

প্রকাশ: মার্চ ২৯, ২০২৩

ড. আর এম দেবনাথ

প্রতি বছর প্রাক-বাজেট আলোচনা যখন অর্থমন্ত্রী শুরু করেন তখন গভীর আগ্রহের সঙ্গে আলোচ্য নিয়ম বোঝার চেষ্টা করি। এবারো তা-ই। অর্থমন্ত্রী সমাজের বিভিন্ন সংগঠিত গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। কাগজে তার খবর নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। হতাশার কথা, এসবের মধ্যে নতুন কিছু পাচ্ছি না। অর্থনীতিবিদরা তাদের কথা বলে যাচ্ছেন যথারীতি, যা তারা আগেও বলতেন। খুব বেশি নতুনত্ব খোঁজার কোনো কারণ পাই না। আর এদিকে ব্যবসায়ীসহ অন্যরা যা বলছেন, তাতে একই কথার পুনরুক্তি দেখতে পাচ্ছি। কর কমাতে হবে। তা না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। রফতানি বিঘ্নিত হবে। কর্মসংস্থান হবে না। অতএব ট্যাক্স কমাও, ভ্যাট কমাও, আয়কর কমাও, শুল্ক-কর কমাও। অগ্রিম আয়কর কমাও। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কথায় শুধুই আশঙ্কার কথা এবং তা শুনিয়ে করের বোঝা কমানোর আবেদন। বোধ করি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব শুনে এবার একটু ‘‌বিরক্তই’। এটা বুঝলাম কী করে? বুঝলাম তার একটা উক্তি থেকে। তিনি আক্ষেপ ও দুঃখের সুরে বলেই ফেললেন, সবাই যদি কর কমানোর কথা বলেন তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় আসবে কোত্থেকে? খুবই ন্যায্য কথা। কর কমাও, কর কমাও ঠিক আছে। তাহলে কর বাড়ানোর বুদ্ধি দেবে কে? এমনিতেই তো গত কয়েক বছরে ব্যবসায়ীবান্ধব সরকারের নীতির কারণে কর ও জিডিপির অনুপাত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর থেকে উদ্ধার কোন পথে? এটা আর আমাদের দুশ্চিন্তার বিষয় নয়। আমাদের ও বিশ্বের ‘‌উদ্ধারকর্তা’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) এবার তা ধরেছে। মাত্র, মাত্র সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের বদলে তারাও বলছে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হবে। কোন বছর কতটুকু বাড়াতে হবে তাও বলে দিয়েছে তারা। এখন কী করা? এটা তো বাধ্যবাধকতা—চুক্তির বিষয়।

কর-জিডিপি অনুপাত বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি কিসের জন্য? দৈনন্দিন খরচের টাকা মেটানোর জন্য, কিছুটা উন্নয়নের জন্য। এর জন্যই প্রতি বছর একটা রাজস্ব বাজেট ও একটা উন্নয়ন বাজেট ঘোষণা করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য এখন প্রস্তুতি চলছে। কী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হবে আগামী অর্থবছরের জন্য? অনেক প্রশ্ন সামনে। ‘‌জিডিপি’ প্রবৃদ্ধির হার, বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানি, রাজস্ব আয়-ব্যয়, বেসরকারি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমানত ও ঋণের ওপর সুদ ইত্যাদি থেকে শুরু করে সরকারের সামনে রয়েছে বিরাট বিরাট ইস্যু। এসব ইস্যু হরেদরে প্রতি মুহূর্তে আলোচিত হচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের, মধ্যবিত্তের, গরিবের কোনো উৎসাহ নেই। তাদের জিজ্ঞাস্য অন্যত্র, তাদের দুঃখ-কষ্ট অন্যত্র। এসব বোঝার কোনো ব্যবস্থা কি আমাদের বাজেট আলোচনার কাঠামোয় আছে? না, আমার জানা মতে নেই। সরকার প্রতি বছর কথা বলে প্রধানত ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের সঙ্গে। কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ মধ্যবিত্তের কথা বোঝার জন্য কি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ আছে? না নেই। অথচ বলা হয়, বাজেটের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ থাকা দরকার। এসব শুধু কথার কথা। বাস্তবে কোনো কাঠামোগত ব্যবস্থা নেই। যদি থাকত তাহলে এবারের প্রাক-বাজেট আলোচনায় একটা সমস্যার কথা অবশ্যই আসত এবং তা আসত প্রবলভাবে। সেটা কী?

প্রধান বিষয় হতো মূল্যস্ফীতি, ভীষণ মূল্যস্ফীতির বিষয়। বাজেট আলোচনায় অন্যান্য বিষয় যা থাকে তা থাকত, কিন্তু প্রাধান্য পেত মূল্যস্ফীতি, জনজীবনের কষ্ট, সাধারণ মানুষের কষ্ট ইত্যাদি। থাকত প্রশ্ন, সাধারণ মানুষ কী করে তার সংসার চালাচ্ছে? বাচ্চাদের খাওয়াদাওয়া চলছে তো? তাদের লেখাপড়া হচ্ছে তো? পুষ্টির মান ঠিক আছে তো? মানদণ্ড অনুযায়ী ক্যালরি ইনটেক ঠিক আছে তো? বিরাট প্রশ্ন। মূল্যস্ফীতি বিশাল, সরকারি হিসাবেই ৯ শতাংশ। বাস্তবে কী তা ভুক্তভোগীরাই জানে। অথচ এর বিপরীতে মানুষের আয় বাড়ছে না। গ্রামাঞ্চলে কোনো কাজ নেই এখন। এক সরকারি বড় কর্মকর্তার ভাষায় চৈত্র মাস ‘‌মঙ্গার’ মাস, যা কার্তিক মাসও। সামনে বোরো ফসল। সবাই এ ফসলের আশায়। তখন কিছু কাজ বাড়বে। এছাড়া মানুষের রোজগার বাড়ানোর ব্যবস্থা নেই। আয় ও ব্যয়ের এই বিশাল পার্থক্যের মধ্যে কীভাবে মানুষ সংসার চালাচ্ছে? অর্থ মন্ত্রণালয় কি প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিষয়টা মাথায় রেখেছে? নাকি বড় বড় ইস্যুর তলায় এসব দৃশ্যত ছোট অথচ খুবই বড় ইস্যুটি চাপা পড়ে যাচ্ছে? শত হোক সরকারের মাথায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, রফতানি, আমদানি ইত্যাদি ছাড়া আর কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। ভর্তুকি হ্রাসের কথা মাথায় আছে। সংস্কারের (রিফর্ম) কথা খুবই কম মাথায় আছে। বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি মাথায় আছে, কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জের খাতে যে অপচয় আছে তা মাথায় নেই বলেই মনে হয়। খরচ বাগানোর কথা মাথায় আছে, কিন্তু যেটা নেই সেটা হচ্ছে অপচয় রোধ, উন্নয়ন বাজেটের টাকা লুটের বিষয়। মাথায় নেই ওই সমস্যা যেখানে এক টাকার কাজ দুই-তিন টাকায় হয়। দেশটিকে একশ্রেণীর লোক ‘‌কলোনিতে’ পরিণত করেছে, সেটা পলিসিমেকারদের মাথায় নেই। ব্রিটিশরা এ দেশ শাসন-শোষণ করেছে প্রায় ২০০ বছর। তারা আমাদের শিল্প ধ্বংস করেছে, কৃষি ধ্বংস করেছে। তাঁতিদের ধ্বংস করেছে। লুট করেছে সারা দেশ। আর লুণ্ঠনকৃত টাকা-সম্পদ পাচার করেছে নিজ দেশে। এখনো কি একটা শ্রেণী তাই করছে না? তারা দেশ লুণ্ঠন করছে, অন্যায়-অত্যাচার করছে আর লুণ্ঠনকৃত সম্পদ পাচার করছে এমন দেশে যেখানে তাদের ছেলেমেয়েরা নাগরিক। এসব সমস্যার কথা কি আমাদের মাথায় আছে? থাকা দরকার। কারণ এসব কারণে আজ মানুষের সংসার চলছে না। মানুষ দারুণ সংকটে। যুদ্ধ একটা কারণ, অবশ্যই। কিন্তু লুটপাট কম দায়ী নয়। এসবের কারণেই আজ প্রশ্ন, তীব্র প্রশ্ন, মানুষের সংসার কীভাবে চলছে বা চলবে? 

প্রাক-বাজেটকালে (২০২৩-২৪) মানুষ কীভাবে সংসার চালাচ্ছে তার সামান্য একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় কেয়ারের একটা জরিপে। ‘‌ কেয়ার’ একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা। জরিপটি তারা চালায় দেশের উত্তর ও হাওর অঞ্চলের আটটি জেলায়। ওই জরিপে দেখা যায়, ৮২ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছে না। গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে এই মানুষের সংখ্যা ২ শতাংশ বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত খরচ জোগাতে হিমশিম খাওয়া মানুষের হার ৬১ থেকে বেড়ে প্রায় ৭২ শতাংশ হয়েছে। পুষ্টিকর খাবার মানুষ পাচ্ছে না। চিকিৎসার খরচ মেটাতে পারছে না। শিক্ষার খরচ বহন করতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে মানুষ বাঁচার জন্য আট ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে। খাবারের মান কমিয়েছে, পরিমাণ কমিয়েছে তারা। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নেয়া বন্ধ করছে মানুষ। মানুষ বাঁচার জন্য গবাদিপশু বিক্রি করছে। এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। মহাজনের শরণাপন্ন হচ্ছে। যারা এসব পথ বেছে নিচ্ছে তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ মঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, দুর্দিন, খরা, বন্যা ইত্যাদি জরুরি অবস্থায় মানুষ যেভাবে বাঁচার জন্য চেষ্টা করে এখনো তাই করছে। বন্ধু, প্রতিবেশী, স্বজনদের কাছ থেকে সাহায্য-ঋণ নিচ্ছে। টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য কেনার লাইনে মানুষের ভিড় ধীরে ধীরে বাড়ছে। সরকারি সাহায্য পাওয়ার জন্য মানুষ চেষ্টা করছে। সরকার এরই মধ্যে কিছু সাহায্য পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিনামূল্যে চাল বিতরণ, রমজান মাসে বিশেষ বিশেষ পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিতরণ, বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে চাল-গম বিতরণ ইত্যাদি কার্যক্রম চালু আছে। মনে হয় এসবের আওতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু তাতেও হচ্ছে না। হওয়ার কোনো কারণও দেখি না। এই পবিত্র রমজান মাসেও পণ্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ছোট-বড় সব শ্রেণীর ব্যবসায়ীই আছেন। উদাহরণ দিই একটা। উদাহরণটি তরমুজের। গরমকাল, রোজার মাস। স্বাভাবিভাবেই রোজাদাররা একটু তরমুজের আশা করতেই পারেন। দেখা যাচ্ছে এখানেও লুট। নিরাপদ খাদ্য দপ্তরের অভিযান থেকে মনে হয় এখানে চলছে অবাধ লুট। তরমুজের চাষীরা ৫০-৬০ টাকাও পান না একটা তরমুজে। পাইকারি বাজারে ‘‌পিস’ হিসেবে একটি তরমুজ ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হয় বলে ‘‌ইউটিউবে’ দেখলাম। অথচ তা রাস্তায় খোলাবাজারে দোকানিরা ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। কিন্তু কিনতে হয় গোটা তরমুজ। হিসাবে এর দাম পড়ে ৩০০-৪০০ টাকা। সাধারণ মানুষের কি ক্ষমতা আছে সে দিনে ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার করে ৩০০-৪০০ টাকা দিয়ে একটা তরমুজ কিনে খাবে। তরমুজ দেশীয় ফল তারই অবস্থা এই, আর বাকি ফলের কী অবস্থা, আঙুরের কী অবস্থা তা সহজেই বোধগম্য। রোজার মাসে ডিম, মুরগি, নিয়ে কী খেলাটাই না খামারিরা করলেন। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেই বাহাস হয়ে গেল। চাল, ডাল, চিনি, সয়াবিন, খেজুর ইত্যাদি নিয়ে কী হচ্ছে সবারই জানা। এখন বলুন প্রাক-বাজেট আলোচনা দিয়ে কী হবে? দ্রব্যমূল্য যদি নিয়ন্ত্রিত না হয়, বাজার যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, ব্যবসায়ীরা যদি যথেচ্ছভাবে বাজার চালান তাহলে বাজেট দিয়ে কী হবে? ট্যাক্স আদায় করার জন্য? মানুষের বোঝা বাড়ানোর জন্য? প্রাক-বাজেট আলোচনার ফলাফল কী হবে আমরা জানি না। তবে সবাই আতঙ্কে আছে একটি কারণে। আর সেটা হচ্ছে কর প্রস্তাব। সরকার যেহেতু কর বৃদ্ধির জন্য চাপে আছে, ভতুর্কি কমানোর চাপে আছে তাই না জানি তারা কী করে বসে। সরকার অতিরিক্তভাবে ব্যবসায়ীবান্ধব। ব্যবসায়ীদের ছাড় দিতে সরকার কোনো দ্বিধা করছে না। তাদের ঋণের ওপর সুদ বাড়ানো যাবে না, বিনিয়োগ দরকার। অথচ বিনিয়োগে চলছে খরা। ঋণের টাকা ব্যবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এসবের কি কোনো সমাধান থাকবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে? দেখা যাবে শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না দেখে সরকার করের বোঝা চাপাবে যারা এখন কর দেয় তাদেরই ওপর। ধনীদের ওপর করারোপ করতে সরকার অপারগ বলে প্রমাণ দিচ্ছে। মুহিত সাহেব অর্থমন্ত্রী থাকাকালে তিনি ‘‌ধনীদের’ ওপর করারোপের কথা বলে ‘‌ওয়েলথ ট্যাক্স’ চালু করেন। অযৌক্তিক এ ব্যবস্থা এখন সারচার্জ বলে কথিত, যা সাইফুর রহমান সাহেব অর্থমন্ত্রী থাকাকালে চালু করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে ধনীদের ওপর করারোপে সরকার কোনো সৎ পদক্ষেপ নিতেই চায় না। উইন্ডফল মুনাফার ওপর ট্যাক্স হতে পারে। সেদিকেও সরকার যায় না। এ কারণে সবাই আতঙ্কে আছে রোজার পরে বাজেটের মাসে কী আছে কপালে তার কথা ভেবে। সাধারণ মানুষের সংসার চালানোর কোনো ব্যবস্থা কি আগামী বাজেটে থাকবে? করমুক্ত আয়সীমা কি বাড়বে? বিনিয়োগের ওপর প্রদত্ত করছাড় কি অব্যাহত থাকবে? আমানতের ওপর কি সুদের হার উন্মুক্ত হবে? ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধির কোনো ব্যবস্থা কি থাকবে বাজেটে? দেশে বড় বড় ব্যবসায়ীর জন্য  সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট আছে। অথচ লাখ লাখ ছোট ছোট প্রান্তিক ব্যবসায়ী, কারখানার মালিকরা কোনো ঋণ পান না, পান না কোনো সরকারি সুবিধা। অথচ এ অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থনীতির খুবই বড় খাত। তাদের অবদান অর্থনীতিতে প্রচুর। এখানে কর্মরত লাখ লাখ লোক। বিলিয়ন ডলারের যত সংখ্যক চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয় সামান্য কয়টা টাকা বিনিয়োগে, ক্ষুদ্র প্রান্তিক ব্যবসায় তা হয়। অথচ তাদের ঋণে অসুবিধা। ‘‌মর্টগেজ’ তারা দিতে পারে না, কোলেটারেল তাদের নেই। অতএব ঋণও নেই। এ হচ্ছে অবস্থা। অথচ এই খাতটিকে সহায়তা দিতে পারলে লাখ লাখ মানুষ প্রাণে বাঁচে, ঘর-সংসার চলে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বড় বড় ইস্যুর সঙ্গে কি এ সমস্যাও গুরুত্ব পাবে? গুরুত্ব পাবে কি মূল্যস্ফীতি, যা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। আরো বোঝা বহন করা অসম্ভব। অতএব ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হোক সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর বাজেট। ‘‌ব্যবসাবান্ধব’ বাজেট হয়েছে। এবার ‘‌গণবান্ধব’ বাজেট করুন। মানুষের সংসার চালানোর ব্যবস্থা করুন। মধ্যবিত্ত জলের তলে ডুবে মরছে, তাকে নাকটা পানির ওপরে তুলতে সাহায্য করুন। 

আলু, উদ্বৃত্ত আলু বরাবরের মতো এবারো নষ্ট হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম নেই, ঘাট মালিকরা যাত্রীর অভাবে লঞ্চ বিক্রি করে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করছে, যশোরের গরুর খামারিরা গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের জন্য গরু বিক্রি করে দিচ্ছে। যারা ব্যাংক থেকে হোম লোন নিয়েছে তারা ঋণের কিস্তি দিতে পারছে না। নতুন করে মানুষ কর্মহীন হচ্ছে, অনলাইন ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে, ফুড পান্ডার কর্মচারী ছাঁটাই হয়েছে। দোকানে দোকানে বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। ঢাকায় রিকশাচালকদের দৈনিক আয় হ্রাস পেয়েছে। মিস্ত্রি জাতীয় লোকদের আয়ে টান পড়েছে। শহরে নির্মাণ শ্রমিকের চাহিদা কমেছে। তৈরি পোশাক খাতে নতুন নিয়োগ নেই। এসবই দুঃখ-কষ্টের ইস্যু। সামান্য ইস্যু। বড় বড় পলিসিমেকারদের এসবে মনোযোগ নেই। দৃশ্যতও তারা ব্যস্ত বড় বড় প্রকল্প, বড় বড় খরচের কাজে। অগ্রাধিকার ঠিক করা দরকার। ব্যাংক ঠিক করা দরকার। ‘‌ব্যাংক ফাইন্যান্স লেড গ্রোথ’ মডেল থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। বড়দের নয় ছোটদের প্রতি নজর দেয়া দরকার। ছোটরা, মধ্যবিত্তরা মারা যাচ্ছে। তাদের বাঁচানো না গেলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে। তাই নয় কি?


ড. আর এম দেবনাথ: অর্থনীতি বিশ্লেষক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫