ক্যাম্পাসে ক্রীড়াচর্চা

উচ্চশিক্ষাঙ্গনে খেলাধুলা

প্রকাশ: মার্চ ২৭, ২০২৩

শফিকুল ইসলাম

সুস্থ দেহ ও সবল মনের জন্য খেলাধুলা এবং শরীরচর্চার বিকল্প নেই। খেলাধুলা এখন কেবল ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কিংবা শরীর চর্চারই অংশ নয়, একটি জাতিসত্তাকে বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে আসীন করে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। বর্তমান সময়ের বেশির ভাগ খেলাধুলা ১৯ ও ২০ শতকে বিকশিত হয়েছে। অনেক খেলাই প্রাচীনকাল থেকেই বিনোদনের উৎস হিসেবে চর্চা হয়ে আসছে। যদিও এটি নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব হয়নি কোন খেলা সবার প্রথম শুরু হয়। অনুমান করা হয় কুস্তি এবং বক্সিং ছিল প্রথম খেলা। দৌড় প্রতিযোগিতাও প্রথম খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। ঘোড়ার দৌড়, রাইফেল শুটিং এবং তীরন্দাজের মতো সামরিক কার্যক্রম থেকে অনেক খেলাধুলা প্রতিযোগিতা হিসেবেও উঠে আসে। যদিও অতীতের কিছু খেলাধুলা এখন আর চর্চা হয় না। কারণ সে জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে উন্নত প্রযুক্তি। ৭৭৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে  অ্যাথেন্সে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের প্রথম অলিম্পিক গেমস। এখানে মাত্র একটি ইভেন্ট ছিল। পরবর্তী সময়ে গেমগুলোয় কুস্তি, বক্সিং, অশ্বারোহী এবং জাম্পিংয়ের মতো ইভেন্টগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। এছাড়া ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, সাইক্লিং, টেবিল টেনিস, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি, দাবা ও অ্যাথলেটিকসসহ অনেক ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। দেশে বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আয়োজন হয় নানা ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। স্কুল-কলেজের এসব অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী জেলা, বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিভাগ ও হলভিত্তিক সারা বছরই চলে নানা আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর হলো আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। যে প্রতিযোগিতায় একযোগে অংশ নেয় সব বিশ্ববিদ্যালয়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার চর্চা কিন্তু নতুন নয়। ১৮৫২ সালের ৩ আগস্ট হার্ভার্ড ও ইয়েল কলেজের মধ্যে প্রথম আন্তঃকলেজ অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা হয়। এর পর থেকে সংযোজন হয়েছে নতুন নতুন খেলা। বর্তমানে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসের আয়োজনে। এ বছর চীনে চেংডু ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে অংশ নিতে যাচ্ছেন দেশের দুই অ্যাথলেট যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জহির রায়হান ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান জানান, ঢাবিতে সারা বছরই চলে নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এখানে ১৮ ধরনের খেলাধুলা হয় যা দেশের খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়েই আয়োজন করতে পারে। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, সাইক্লিং, টেবিল টেনিস, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি, দাবা ও অ্যাথলেটিকস, সাঁতার ও ওয়াটার পোলো, ক্যারম, হকি সবই আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আয়োজন করা হয় আন্তঃ হল, আন্তঃবিভাগ বার্ষিক প্রতিযোগিতা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলে বছরব্যাপী। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মূলত এ আসরটির অপেক্ষায় থাকেন ক্রীড়াপ্রেমী শিক্ষার্থীরা। এ আসরে চ্যাম্পিয়নরাই অংশ নেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় ‘‌বাংলাদেশ ইন্টার ইউনিভার্সিটি স্পোর্টস বোর্ড’ বা বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া সংস্থা। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনের মূল কাজ করেন এ বোর্ড। প্রতি এক বা দুই বছর অন্তর একেক বিশ্ববিদ্যালয় পায় কমিটি গঠনের দায়িত্ব। যে বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্ব পায় সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সভাপতি ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে আয়োজন করেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আসর আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। 

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের  সহকারী পরিচালক  ও বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া সংস্থার  সদস্য সচিব রঞ্জন কান্তি শীল জানান, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে জানুয়ারিতে আয়োজন করা করা হয় ব্যাডমিন্টন ও টেবিলটেনিস, ফেব্রুয়ারিতে অ্যাথলেটিকস, বাস্কেটবল ও ক্রিকেট,  মার্চ মাসে ক্যারম, সেপ্টেম্বরে সাঁতার ও ওয়াটারপোলো, অক্টোবরে ফুটবল খেলা, নভেম্বরে দাবা, হ্যান্ডবল, টেনিস ও ভলিবল এবং ডিসেম্বরে হকি খেলা। এভাবেই ২০২২ সালে বছরব্যাপী ছিল আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলার আয়োজন। এখানে ১৪ থেকে ১৫ ধরনের ইভেন্ট থাকে। সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

এছাড়া পাবলিক প্রাইভেট সব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে রয়েছে আরো একটি আসর। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হলো বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০১৯ সালে প্রথম আসরে ৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ৭০০ ক্রীড়াবিদ এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এ আয়োজনে বহু তরুণের সাড়াজাগানো উৎসাহ-আগ্রহ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দ্বিতীয় আসরের অংশগ্রহণ করেন মোট ১০৪টি পাবলিক ও প্রাইভেট  বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৫০০ ক্রীড়াপ্রেমী শিক্ষার্থী।  সর্বশেষ তৃতীয় আসরে মোট ১২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নেন সাত হাজার ক্রীড়াবিদ শিক্ষার্থী। এ প্রতিযোগিতায় ১২টি ডিসিপ্লিনে সুযোগ রয়েছে অংশগ্রহণের। ডিসিপ্লিনগুলো হলো—ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, সাইক্লিং, টেবিল টেনিস, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি, দাবা ও অ্যাথলেটিকস। পুরুষ ও নারী বিভাগের প্রত্যেক ইভেন্টে সেরা তিনজনকে (১৪৪ জন) স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক দেয়া হয়। এছাড়া সেরা ক্রীড়াবিদ নারী ও পুরুষের জন্যও থাকে পুরস্কার। সাঁতার ডিসিপ্লিনে ফ্রিস্টাইল, ব্যাকস্ট্রোক, ব্রেস্টস্ট্রোক, বাটারফ্লাই ও ফ্রিস্টাইল রিলে ইভেন্ট এবং অ্যাথলেটিকস ডিসিপ্লিনে থাকে ১১০ মিটার হার্ডলস, লংজাম্প, ম্যারাথন, ১০০ মিটার স্প্রিন্ট, ২০০ মিটার স্প্রিন্ট ও ৪০০ মিটার রিলে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫