আর্জেন্টিনায় প্রবল খরা

উৎপাদন কমবে সয়াবিন ভুট্টাসহ কৃষিপণ্যের

প্রকাশ: মার্চ ২৫, ২০২৩

বণিক বার্তা ডেস্ক

আর্জেন্টিনার ফসলের মাঠজুড়ে শুষ্কতা। যেখানে পাতায় পাতায় থাকার কথা সবুজ আভা, সেখানে একটি পাতা তুললেও তা যেন চুরমুর করে ফেলা যাচ্ছে। সব দেখে চলতি বছর প্রবল খরার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন কৃষি ইঞ্জিনিয়ার গুইলারমো কুইটিনো। আর্জেন্টিনার রাজধানী থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরের একটি শহর উরকুইজাতে কাজ করেন তিনি। খরার কারণে কৃষিজমিতে কোনো শস্যের আবাদই হচ্ছে না। কৃষিবিদদের ধারণা, এর ফলে দেশটিতে সয়াবিন, ভুট্টা, গমসহ সব ধরনের কৃষিপণ্যের উৎপাদন কমবে।

দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত খবরে আর্জেন্টিনাজুড়েই এমন চিত্র দেখার কথা বলা হয়েছে। যেখানে এখন কৃষিকাজ সবচেয়ে বেশি ভালো হওয়ার কথা, শুষ্ক মৌসুমের কারণে প্রায় সবটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন শেষ পরিণতি দেখারই অপেক্ষা করছেন কৃষক। আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রত্যাশিত রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এক তীব্র পতন দেখা যাবে। এতে আর্জেন্টিনার অর্থনীতি আরেকটি বড় ধাক্কা খাবে।

সান অ্যান্তোনিও দি আরিকোতে নিজেদের শুকিয়ে যাওয়া মাঠে দাঁড়িয়ে কৃষক মার্টিন স্টুরলা বলেন, ‘‌এ খরা অপ্রত্যাশিত। এর আগে কেউ এমন পরিস্থিতি দেখেনি। দুই বছর ধরেই অস্বাভাবিক শুষ্ক মৌসুমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা।’ কুইটিনো বলেন, ‘‌গত দুই বছর খুবই খারাপ ছিল, তার পরও কিছুটা বৃষ্টি পেয়েছি, যেগুলো আমাদের উৎরে যেতে সাহায্য করেছে। এখন এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে বিশেষজ্ঞরাও হিমশিম খাচ্ছেন।’

রোজারিও বোর্ড অব ট্রেডের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মকালে টানা তৃতীয় বছরের মতো বৃষ্টিপাতের ঘাটতি এবং মার্চ পর্যন্ত টানা তাপপ্রবাহ এবং ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্রমাগত কৃষি তুষারপাতের (তাপমাত্রা বেশি নেমে যাওয়ায় গাছের টিস্যুর ভেতরে বরফ জমে যাওয়া) মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা।’

রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, শস্য, প্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদের পরিস্থিতি প্রতি সপ্তাহে আরো খারাপ হচ্ছে। আগামী শীতে তা আরো ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে। বুয়েনোস এয়ারস গ্রেইনস এক্সচেঞ্জের সাপ্তাহিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সয়াবিন উৎপাদন হবে ২ কোটি ৫০ লাখ টন। এ সময়ে মোট গম উৎপাদনের পূর্বাভাস করা হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ টন। এ সংখ্যাও আগের বছরের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম।

উরকুইজার আরেক কৃষক ওসভালদো বো বলেন, ‘‌আমরা ৯০ শতাংশ হেরে গেছি। এমন খরা এর আগে কখনো দেখিনি। আগে এখানে খরায় সয়াবিন হয়নি, তবে গম বা ভুট্টা হয়েছে। কিন্তু এখন সব শস্যই নষ্ট হয়ে গেছে।’

রোজারিও বোর্ড অব ট্রেডের তথ্যানুযায়ী, আর্জেন্টিনার শস্য উৎপাদনের ৮৭ শতাংশই সয়াবিন, গম ও ভুট্টা। এবার সেসব ১ হাজার ৪১৪ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে। রিজিওনাল কনসোর্টিয়াম অব এগ্রিকালচার এক্সপেরিমেন্টের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে মোট ২ হাজার ৫০ কোটি ডলার রফতানি লোকসান হবে।

দেশটির ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস বলছে, ১৯৬১ সালের পর এবার সবচেয়ে বেশি গরম গ্রীষ্মকাল অতিক্রম করছে আর্জেন্টিনা। তবে অনেকে এ খরার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। গবেষকরা বলছেন, যদি তা না-ও হয় তার পরও বলা যায় তা একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫