সাক্ষাৎকার

ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা যত উন্নত হবে মানুষের কাছে সেবা তত দ্রুত পৌঁছবে

প্রকাশ: মার্চ ২০, ২০২৩

অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) লাইন ডিরেক্টর। দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি অধ্যাপনা ও গবেষণা করছেন। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করছেন তিনি। বাংলাদেশে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার বিকাশ, কর্মকৌশল ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

বাংলাদেশে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা শুরুর বিষয়ে জানতে চাই।

১৯৯৮ সালে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র, স্বাস্থ্য তথ্য এসব বিষয় প্রথম প্রকল্প আকারে হাতে নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প নিয়ে সরকারে আসে। তারপর মূলত সমন্বিত ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ও সমন্বিত স্বাস্থ্য তথ্য আহরণের প্রক্রিয়া বেশি গতিলাভ করে।

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবায় কী কী সেবা দেয়া হয়?

একটা হলো কল সেন্টারের মাধ্যমে টেলিহেলথ। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সেবা দেয়া হয়। আরেকটা হলো, আমাদের হাসপাতালগুলোতে টেলিমেডিসিন সেবা রয়েছে। যেখানে এক প্রান্তে আমাদের চিকিৎসক ও প্রান্তিক পর্যায়ের চিকিৎসাপ্রত্যাশীরা থাকেন, অন্য প্রান্তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও টারশিয়ারি পর্যায়ের (বিশেষায়িত) হাসপাতালের একটা সেন্টার থাকে। দুইদিক থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কথা বলা ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়। জনসাধারণ সেবা পায় এমন ৯৪টি হাসপাতালে এ সেবা রয়েছে। বেসরকারি অনেক হাসপাতালেও এ সেবা রয়েছে। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া আমাদের ব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনসাধারণ তাদের অভিযোগ ও পরামর্শ জানায়। এটাকে আমরা বলি জিআরএস সিস্টেম বা গ্রিভেন্স রিড্রেস সিস্টেম (অভিযোগ প্রতিকারের ব্যবস্থা)। এখানে অনেক অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি ও সেগুলোর প্রতিকার করে থাকি। এতে সেবার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে। আবার অনেক জায়গায় বিশেষ করে বেসরকারি ও সরকারি পর্যায়ের বহু হাসপাতালে আমরা অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা করেছি। রোগীরা হাসপাতালে গেলেই একটা রেজিস্ট্রেশন পায়। এর মাধ্যমে আন্তঃসংযোগ রক্ষা করা হয়। প্যাথলজি, রেডিওলজিসহ বিভিন্ন রোগ নিরীক্ষা, ওষুধ সবকিছুই এ পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনার আওতায় রাখা হয়। সরকারি প্রায় ৫০টি হাসপাতালে এ সিস্টেম গড়ে তুলেছি। বেসরকারি অনেক করপোরেট হাসপাতালে পুরোপুরি অটোমেটেড প্রক্রিয়া রয়েছে। ফলে চিকিৎসা নেয়ার পরে তাদের তথ্যগুলো সংযুক্ত থাকে। অটোমেশন প্রক্রিয়াটাও আমাদের সরকারের প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে, সেখানকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোয়ও রয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, ভবিষ্যতে অটোমেশন প্রক্রিয়া বাংলাদেশের প্রতিটা হাসপাতালেই থাকবে।

বৈশ্বিকভাবে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব কেমন? বিশ্বব্যাপী এর অগ্রগতি কতটা?

উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসার পুরো প্রক্রিয়াই প্রায় কাগজবিহীন। রোগীদের সবকিছুই অটোমেটেড প্রসেসের (স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা) মধ্য দিয়ে সংরক্ষিত থাকে। সেটা রোগী যেমন সবসময় পেতে পারে, তেমনি যারা স্বাস্থ্যসেবা দেয় তারাও অতীতের রেকর্ড থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সরকারও সেগুলো সবসময় ব্যবহার করতে পারে। অনেক সময় আইনি ইন্স্যুরেন্স (বীমা) থেকে শুরু করে যেকোনো বিষয়েই সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহার করা হয়। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারলে আমরা ওই পর্যায়ে যেতে পারব। শুধু টেলিমেডিসিন নয়, প্রযুক্তিগতভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকেই ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা বলা হচ্ছে। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার একটি অংশ ই-হেলথ। সেগুলো হলো টেলিমেডিসিন, টেলিহেলথ। আরো যে ব্যবস্থাপনাগুলো রয়েছে যেমন আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) দিয়ে রক্তচাপ পরিমাপ, হৃৎস্পন্দন দেখা। পরে তথ্যগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষিত রাখা যায়। সবকিছু ডিজিটালি থাকবে, সব রিপোর্ট (রোগ নিরীক্ষার প্রতিবেদন) ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত থাকবে। পুরো এ ব্যবস্থাপনাটাই ডিজিটাল হেলথ কেয়ার।

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবায় জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি সাধারণের মধ্যে গড়ে উঠছে না। এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত?

ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা যত উন্নত হবে, মানুষের কাছে তত দ্রুত পৌঁছানোর বড় মাধ্যম সৃষ্টি হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে জনবল কাঠামো রয়েছে সেখানে জনস্বাস্থ্যকে আলাদাভাবে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করি নতুন স্ট্যান্ডার্ড সেটআপ (নতুন জনকাঠামো) বাস্তবায়িত হলে জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করা এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা যাবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫