বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার স্মৃতিটা এখনো তাজা। টাইগাররা সেই ফর্ম টেনে আনল এবার আয়ারল্যান্ড সিরিজে। গতকাল সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিংয়ে কর্তৃত্ব করে ১৮৩ রানের রেকর্ড ব্যবধানে আয়ারল্যান্ডকে হারায় স্বাগতিকরা।
অভিষেকেই ৯২ রানের ইনিংস খেলে চমক দেখালেন তৌহিদ হূদয়। আর তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে আসে ৯৩ রান। মুশফিকুর রহিমও খেলেন বিস্ফোরক ইনিংস। এ তিনজনের ঝলমলে ইনিংসে ভর করে আয়ারল্যান্ডকে ৩৩৯ রানের বড় টার্গেট ছুড়ে দেয় তামিম ইকবালের দল। ওয়ানডেতে ৩৩৮ রানই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলগত সংগ্রহ। এর আগের সর্বোচ্চ ৩৩৩ রান এসেছিল ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। বড় রান তাড়া করতে গিয়ে ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় আইরিশরা।
ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ার দিনই রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় জয়ও পেয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ২০২০ সালে এ সিলেটেই জিম্বাবুয়েকে ১৬৯ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, রানের হিসাবে যা ছিল এতদিন সবচেয়ে বড় জয়। গতকাল পেসার এবাদত হোসেন চারটি ও স্পিনার নাসুম আহমেদ তিনটি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে রেকর্ডময় এ জয় এনে দেন।
গতকাল টস হেরে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ তৃতীয় ওভারে হারায় অধিনায়ক তামিম ইকবালকে (৩)। তাকে সাজঘরে ফেরান মার্ক আদাইর। স্লিপে পল স্টার্লিংকে ক্যাচ দেন তিনি। দশম ওভারে দলের ৪৯ রানের সময় কার্টিস ক্যামফারের বলে ঠিক একইভাবে আউট হয়ে যান লিটন দাস (২৬)। নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ৩৪ রানের জুটি গড়েন লিটন।
এরপর ইনফর্ম শান্তর সঙ্গে মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩২ রান যোগ করেন অভিজ্ঞ সাকিব। টি২০ সিরিজে অনবদ্য পারফর্ম করা শান্ত এদিন ইতিবাচক সূচনা করলেও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। ৩৪ বলে ২৫ রান করে তিনি অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলে বোল্ড হয়ে যান। এরপর অনবদ্য ব্যাটিংয়ে চাপটা প্রতিপক্ষের দিকে ঠেলে দিতে সমর্থ হন সাকিব ও অভিষিক্ত তৌহিদ হূদয়। তারা আইরিশ বোলারদের ওপর পুরোপুরি কর্তৃত্ব করে ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি গড়েন।
সাকিব ও তৌহিদ দুজনই সেঞ্চুরির সম্ভাবনা তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার হন। ৮৯ বলে ৯৩ রান করেন বাংলাদেশ টেস্ট ও টি২০ দলনায়ক সাকিব। যদিও আউট হওয়ার আগেই বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রান পূর্ণ করেন তিনি। তার চেয়ে বেশি রান আছে শুধু তামিম ইকবালের (৮১৪৬)।
সনাথ জয়সুরিয়া ও শহিদ আফ্রিদির পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটের মালিক হলেন সাকিব।
সাকিবের বিদায়ের পর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন আত্মবিশ্বাসী তৌহিদ। মাত্র ৪৯ বলে ৮০ রান যোগ করে তারা দলের সংগ্রহটা তিনশর কাছাকাছি নিয়ে যান। যদিও একই ওভারে এ দুজনের বিদায় ঘটে। দুজনই শিকার হন পেস বোলার গ্রাহাম হিউমের। হূদয় ৮৫ বলে ৯২ ও মুশফিক ২৬ বলে ৪৪ রান করেন।
এরপর দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারালে রানের চাকা শ্লথ হয়ে পড়ে। যদিও ইয়াসির আলী (১৭), তাসকিন
আহমেদ (১১) ও নাসুম আহমেদের (১১*) ব্যাটে
ভর করে শেষ পর্যন্ত ওয়ানডেতে নিজেদের রেকর্ড সংগ্রহ (৩৩৮/৮) পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। হিউম ৬০ রানে চার উইকেট নেন।
বাংলাদেশের ১৪০তম খেলোয়াড় হিসেবে গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হলো তৌহিদ হূদয়ের। অভিষেকেই চমক দেখালেন তিনি। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। আউট হয়েছেন ৯২ রানে। তাতেই রেকর্ড গড়েছেন ২২ বছর বয়সী হূদয়। নাসির হোসেনকে (৬৩ রান) টপকে ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৯২ রান করার গৌরব এখন তারই। অভিষেকেই হয়েছেন ‘ম্যান
অব দ্য ম্যাচ’।
পুরস্কার হাতে নিয়ে তৌহিদ হূদয় বলেন, ‘সেঞ্চুরি
মিস করে আমি কষ্ট পেয়েছি কিছুটা, কিন্তু শুভসূচনা পেয়ে আমি খুশিও। আমার বেশ ভালো লাগছে। সাকিব ভাই আমাকে অনেক সাহস জুগিয়েছেন। আমি ঠিক নিজের পরিকল্পনা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।’
আগামীকাল একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় ও বুধবার তৃতীয় ম্যাচ। এরপর ২৭ মার্চ চট্টগ্রামে শুরু হবে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩৮/৮ (সাকিব ৯৩, তৌহিদ ৯২, মুশফিক ৪৪, লিটন ২৬, শান্ত ২৫; হিউম ৪/৬০)। আয়ারল্যান্ড: ৩০.৫ ওভারে ১৫৫ (ডকরেল ৪৪, ডোহেনি ৩৪, স্টার্লিং ২২; এবাদত ৪/৪২, নাসুম ৩/৪৩, তাসকিন ২/১৫)। ফল: বাংলাদেশ ১৮৩ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তৌহিদ হূদয় (বাংলাদেশ)।