চীনের ভূমিকায় অস্বস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র

সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পথে সৌদি আরব ও ইরান

প্রকাশ: মার্চ ১৯, ২০২৩

বণিক বার্তা ডেস্ক

সৌদি আরব আর ইরানের সম্পর্কে তিক্ততার গল্প নতুন নয়। সুন্নি ও শিয়া মতাবলম্বীপ্রধান দেশ দুটির মধ্যে বৈরী সম্পর্ক অনেকটা ঐতিহাসিক। তবে সম্প্রতি বরফ গলতে শুরু করেছে। শিগগিরই ইরানে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। দেশটির অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জাদান জানিয়েছেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন চুক্তির ফলে ইরানে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইরানে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সেখানে বিনিয়োগে কোনো বাধা নেই।

গত ১০ মার্চ চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে সৌদি আরব ও ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকের পর এ চুক্তি হয়। দীর্ঘ সাত বছর কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার পর দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। আলোচনায় দুই মাসের মধ্যে নতুন করে নিজ নিজ দেশে দূতাবাস খুলতে সম্মতও হয়েছে দেশ দুটি। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইরান ও সৌদি আরব একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে ও প্রত্যেকের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা দেখানোর ওপর জোর দিয়েছে। এছাড়া ২০০১ সালে স্বাক্ষরিত পারস্পরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি কার্যকর করতেও একমত হয়েছে।

সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার তিক্ততা কেবল পারস্য উপসাগর এলাকায় উত্তেজনা নয়, ইয়েমেন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত গভীর সংঘাত তৈরি করেছে। ২০১৪ সালে ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে ইরানসমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা। এরপরের বছর হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে সৌদি জোট। এর মধ্যে সৌদি আরব একজন খ্যাতনামা শিয়া ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। এর জের ধরে তেহরানে সৌদি দূতাবাস ভাংচুর করে বিক্ষোভকারীরা। সেই হাঙ্গামার পর তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে রিয়াদ।

সৌদি আরব ও ইরানের জ্বালানি তেলের বড় গ্রাহক চীন। গত ডিসেম্বরে শি জিনপিং সৌদি আরব সফরে গিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় গত মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বেইজিং সফর করেন। এসব সফরের মাধ্যমেই সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈরী দুটি দেশের মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে আদতে আঞ্চলিক প্রভাব শক্তিশালী করতে চায় চীন। আবার অনেকে মনে করছেন, ইরানের সঙ্গে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নেতৃত্বের ভূমিকায় এসেছে চীন। ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলি শামখানি দুই দেশের মধ্যে এই সম্প্রীতি এনে দিতে ভূমিকা রাখার জন্য চীনের প্রশংসাও করেছেন।

অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চীনের ভূমিকা ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের ব্যাপক অস্বস্তিতে ফেলেছে। চীনের এ সংশ্লিষ্টতা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ড্যানিয়েল রাসেল বলেন, ‘‌বিবাদের অংশ না হয়েও এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষরে চীনের নিজ থেকে সহায়তার ঘটনা বেশ অস্বাভাবিক।’ অবশ্য মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান প্রতিনিধি মাইকেল ম্যাকল বলেছেন, ‘চীন নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন অংশে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে, আমরা তাদের ওপর নজর রাখছি।’ সূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, এপি


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫